T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || বিশেষ সংখ্যায় মালা মিত্র

দূর্গাপূজো ও ছেলেবেলা

এ জীবনে দেশ বিদেশ সব জায়গার দূর্গাপূজো দেখার সূযোগ হয়েছে কিন্তু ছেলেবেলার সেই দূর্গাপূজো ভাবতেই একরাশ খুশি ঘিরে ধরে। সে সাজ সাজ রব খুশি আনন্দ অক্ষয় স্মৃতি মনে গাঁথা থাকবে চিরকাল।
তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন ঠিক মনে নেই প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণি ও হ’তে পারে। ছিঁটে বেড়ার ইস্কুলে মনের আনন্দে মাটিতে আসন পেতে বসতাম আমরা। তখন কোথায় এত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।দু একটা ছিল না এমন নয়,অনেক ভাইবোন থাকার সুবাদে ওই পাঠশালায় ঠাঁই হয়েছিল আমার।তাতে আমার আক্ষেপ নেই বরং খুশিই খুশি। তখন অলিতে গলিতে এত পূজা থিমপূজো ছিল না।ছিল মাটির মৃর্তি প্রতি পাড়ায় এক দূটো করে।
পূজো এলেই টিফিনের সময় দল বেঁধে আমরা ছুটতাম রেলকোয়ার্টারের কাছে যেখানে বাঁশবাঁধা থাকত সেখানে,খড়ের কাঠামো তৈরি হলেই কবে পূজো আসবে,শুধু দিন গোনা,আর টিফিনের বেলায় রোজ দেখে আসা প্রতিমা কতদূর এগোলো।কেমন একটু একটু করে খড়ের প্রতিমায় মাটির প্রলেপ আস্তে আস্তে পূর্ণ অবয়ব, রঙকরা, শেষে চক্ষুদান প্রতিটি পর্ব উপভোগ করতাম।
এখনকার বাচ্চাদের মত এত এত জামাকাপড় আমরা পেতাম না।দূপুর বেলায় হিন্দুস্থানি কাপড়ওয়ালা কাঁধে কাপড়ের স্তুপ নিয়ে,চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলত, ‘বঁড়িয়া হ্যায়’বলে সুর করে ফেরীওয়ালা হাঁক দিত, আমরা তাকে বঁড়িয়া বলে ডাকতাম। তার হাঁক শুনে সে কি আনন্দ,দৌড়ে মা কাকীমাকে ডেকে আনতাম,কাপড়ওয়ালা এলে তারা এটা নয় সেটা নয় অমুক রঙটা নয় তমুক টা করতেন পছন্দ না হ’লে ছেড়ে দিতেন,তখন আমাদের বুক ফেটে যেত,শেষে একদিন মায়েদের পছন্দ মত কাপড় আমাদের গায়ের মাপ মত কেনা হ’ত ফেরীওয়ালার কাছ থেকে।আহা সে কি স্বর্গীয় সুখ কাপড়টা নাড়াচাড়া করতে চাইতাম,কাপড়ের গন্ধ নিতাম,মায়েরা বেশী ঘাঁটতে দিত না ট্রাংকে তুলে রাখত,পরে দর্জির দোকানে মাপজোক করে বানানো হত ফ্রক।
এখনকার মল সুপার মল তো ছিল না তখন বাড়ী বসেই বা কিছুদূরে রামরাজা তলা দোকান থেকে হ’ত আমাদের পূজোর বাজার। নতুন পোষাক নতুন জুতো পূজোয় চাই ই,সেই জুতো পরে সবার সাথে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। নতুন জুতোয় ফোস্কা পড়ে লেংড়ে লেংড়ে ঠাকুর দেখা সে এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা।
জামা জুতো তো হ’ল এবার ফেরীওয়ালা ডেকে ডেকে কুমকুম নেলপলিশ কানের দুল হাতের চুড়ি বেছে বেছে কেনা হ’ত এখনো মলে গিয়ে অনেক ভ্যারাইটির জিনিস দেখি,অন লাইনেও সর্বস্ব কেনা যায়,কিন্তু সেদিনের ওই ছোটখাট জিনিস কেনায় দূর্গোৎসবের আনন্দ দ্বিগুন হয়ে উঠত, সে নতুন দেখা সে আনন্দের সঙ্গে কোনোকিছুই তুলনা করা যায় না। সে সরলপট আজ ঝড়ঝাপটায় জটিল হয়ে গেছে,মা বাবা কাকা কাকীমা আরো কত প্রিয় আত্মীয় পরিজন দেখতে দেখতে ফটো ফ্রেমে দেওয়ালে জায়গা করে নিয়েছেন ভাবলে চোখে জল আসে,যাদের কেন্দ্র করে আমরা বড় হয়েছি,সে মাথার ছাদ সরে গেছে ধীরে ধীরে,দায়ীত্ব কর্তব্য আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে।
তবু পূজো আসে বছরে একবার,আনন্দ তো হয়ই।
সামনে দূর্গাপূজো আসুন সবাই মায়ের কাছে প্রার্থনা করি,’মা রোগ ব্যাধি তুলে নাও,জগতের মঙ্গল কর’সবাই কে ভাল রেখ,এর বেশী কি আর বলার আছে,তবে ছোটবেলার দূর্গাপূজো সে অনাবিল আনন্দ সে সরলপট, সে সুখস্মৃতি লিখতে গেলে কয়েক ডজন খাতা ও কম হবে,তাই আজ কিছু কথা বললাম বাঙালির শ্রেষ্ঠ পরব দূর্গা পূজো নিয়ে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।