সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ৩৯)

দেবমাল্য
আট
রণোর গাড়ি দু’দিন আগেই বুক করে রেখেছিল ওদের পাড়ার শীলভদ্রবাবু। সপরিবার কার পৈতেয় নাকি যাবেন। বেলা তিনটের সময় রিপোর্টিং। ভোরবেলায় স্টেশন থেকে কাউকে আনতে গিয়ে যে সে এমন একটা কাণ্ডে জড়িয়ে যাবে, এত বেলা হয়ে যাবে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি ও।
এক্ষুনি বাড়ি গিয়ে স্নান করে কোনওরকমে নাকে-মুখে দুটো গুঁজে বেরোতে না পারলে তিনটের মধ্যে ও কিছুতেই শীলভদ্রবাবুর বাড়িতে পৌঁছতে পারবে না। অথচ দেবমাল্যকে রাজীবদা বলছে কিনা, এমন তো হতেই পারে, ভিড়ের জন্য আপনি হয়তো খেয়াল করতে পারেননি, আপনার বউ ট্রেন থেকে নেমে আপনি যে হোটেলে উঠেছেন, সোজা ওই হোটেলে চলে গেছেন। একবার গিয়ে দেখুন না, তাঁকে ওখানে পান কি না।
উনি তো উঠেছেন দৌলতাবাদের একটা হোটেলে। এখান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। ওখানে যেতে গেলে রণোর আর বাড়ি যাওয়া হবে না। স্নান না করে, না খেয়ে, সে একটা দিন কাটিয়ে দিতেই পারে, কিন্তু সে না খাওয়া পর্যন্ত যে তার মা একটা দানাও দাঁতে কাটবে না! কী করা যায়! কী করা যায়! কী করা যায়!
দেবমাল্যর সঙ্গে সকাল থেকে এতক্ষণ কাটিয়ে রণো বুঝে গেছে, এই লোকটা বাস, ট্রেকার বা অটোয় করে যাওয়ার লোক নয়। তা ছাড়া, সেই সকাল থেকে তাঁর ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, তার মনের এখন যা অবস্থা, ও কিছুতেই তাকে একা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছে না। তবু, কী করা যাবে! কোনও উপায় তো নেই। তাই রাজীবের বাড়ি থেকে দেবমাল্যকে নিয়ে বেরিয়ে ও আর গাড়ির দিকে গেল না। পায়ে পায়ে মেন রাস্তায় উঠে এল। এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগল। রণোকে ওরকম করতে দেখে দেবমাল্য বলল, কাউকে খুঁজছ না কি?
রণো বলল, না, ঠিক খুঁজছি না…
— তা হলে চলো একবার হোটেলটা দেখে আসি।
— তার ব্যবস্থাই তো করছি।
দেবমাল্য অবাক হয়ে বলল, গাড়ি তো ওখানে।
— আসলে, আমি যেতে পারলেই ভাল হতো। কিন্তু আগে থেকে ভাড়া ঠিক হয়ে আছে তো! তাই… চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
এপারে ওপারে ইতস্তত দু’-তিনটে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। রণো গিয়ে তাদের সঙ্গে কী কথা বলল, দেবমাল্য বুঝতে পারল না। রণো হতাশ হয়ে ফিরে এল। বারবার উশখুশ করতে লাগল। ভীষণ দেরি হয়ে যাচ্ছে তার।
সেটা বুঝতে পেরে দেবমাল্য বলল, তোমার যদি ভাড়া থেকে থাকে, তুমি চলে যাও। আমি একটা গাড়ি ঠিক ধরে নেব।