সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়-পঞ্চাশ টুকরো হাসি-পঞ্চাশ

এটাই আমার স্টাইল

TechTouch Talk পত্রিকার ঋষি ভট্টাচার্যর সঙ্গে কথা বলে টুকরো হাসি লিখতে শুরু করি। কি যে ছাইভস্ম লেখা হল জানিনা। তবে করোনাকালের অজানা একটা অদ্ভুত ভয়ের মধ্যে, যে ভয় এখনও কাটেনি সহসা কাটবে বলে মনে হয় না, সেই এক অস্বাভাবিক সময়ে নানান আবোল তাবোল ভাবনায় না থেকে অনেককিছু ভুলে থাকার প্রয়াসটুকু করেছি মাত্র।
এতে কার কী উপকার হয়েছে তা বলতে পারব না। বেশিরভাগ পাঠক আমার লেখা পছন্দ করেন না, এটা টের পাই। অনেক হয়ত আমার উপর চটেছেন। তবে এটা হলফ করে বলতে পারি এসব লেখা কাউকে আহত করবার জন্য নয়। নিছক মজা। অন্যভাবে নেবেন না। তবে এতে আমার উপকার হয়েছে। এইটুকুর জন্য তো কিছু আশা করতে পারি। একটা লেখার পরে আরেকটা লিখতে হবে, এই ভাবনাটুকুই তখন আমার কাছে অনেক। আবার কিছু লেখার অপচেষ্টা আমাকে খানিকটা চনমনে করে রেখেছে।
এতে করোনা রোখা যায় কীনা জানিনা। তবে হয়ত সে ভেবেছে এমন উন্মাদের কাছে গিয়ে লাভ নেই। গেলেও হয়ত স্থায়ীভাবে বসবাস করা যাবে না। কাজেই না যাওয়া ভালো। তাছাড়া করোনা রুখে দেবার জন্য আমার স্ত্রী ও মেয়ের প্রচেষ্টার অন্ত ছিল না, এখনও নেই। তাদের আপ্রাণ চেষ্টা দেখে করোনা আমার কাছে আসার আগে হাজারবার ভেবেছে যে, জায়গাটা বোধহয় নিরাপদ হবে না।
ঠিক করেছিলাম ৫০টি টুকরো হাসি লিখব। এই লেখাটা সেই ভাবনার শেষ কিস্তি। অনেকে লেখাগুলি হয়ত পড়তে গিয়ে ভেবেছেন এই বিষয়টি তো আগে জানা ছিল। তা থাকতেই পারে। তিনি যেমন জানেন আর আমি যেটুকু জানি, তা মিলিয়েমিশিয়ে অন্যভাবে পরিবেশন করেছি। আমার মতো করে।
এই সাহসটা পেলাম কি করে? একদিন একটি হিন্দি ছবির নকল বাংলা সিনেমা দেখলাম। সেই বাংলা সিনেমাটি আবার একদিন দেখলাম হিন্দি ভাষায় হচ্ছে। কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। ভাবলাম মন্দ না। তাহলে আর কি! মহাজনেরা যে পথে গমন করেছেন একটু-আধটু সেই পথেই যাওয়া যাক। তাতে বোধহয় খুব একটা দোষের হবে না।
যখন যেমন মনে এসেছে তাই লিখেছি। সহ্য করেছেন সম্পাদক। সহ্য করেছেন অনেক মাননীয় হৃদয়বান পাঠকরাও। তাই চারিদিকে তাকিয়ে যখন দেখেছি অসহনীয় দিনযাপনের বাতাবরণ, তখন সেখান থেকে বেরিয়ে একটু মুক্ত হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। সেই ইচ্ছেটা একটু ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি চারিদিকে। যদি এক লহমার জন্য অন্য কারও কাজে লাগে।
কত মানুষ কত কিছু লিখছেন। মোবাইল খুললেই চলে আসছে তাঁদের মহান ও মজাদার সব লেখা। সবই এক ঝলক স্নিগ্ধ বাতাস। কৃতজ্ঞ আমি সেই সব মহান লেখকদের কাছে। অনেক সময় কিছু লেখায় কে লিখেছেন তাঁদের নাম থাকে না। তবে পথচলতি সেই অজানা পথিককে জানাতেই হয় শুভেচ্ছা।
আমাকে একজন শুভাকাঙ্ক্ষী পরামর্শ দিয়েছিলেন এইসব ছাইভস্ম না লিখে সিরিয়াস কিছু লিখতে। কি সিরিয়াস লিখব তা ভেবে উঠতে পারি না। কোনটা সিরিয়াস লেখা? তার মাপকাঠি কি? এসব হয়ত আর এজীবনে জানা হবে না।
তবে সিরিয়াস লেখক যাঁদের বলা হয়, তাঁদের অনেককে মনে মনে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। তাঁদের সৃষ্টিকে যে মহান উচ্চতায় রেখেছি সময়ের এমনই বদল হয়েছে মনে হচ্ছে যেন আমার মনের আসনে পেতে রাখা সেই উচ্চ শিখরে ধস নেমেছে। তাঁদের পায়ের তলায় কেমন চোরাবালির স্রোত।
কী অনায়াসে তাবেদারি রপ্ত করে নিজেরাই নিজেদের প্রতিনিয়ত টেনে নামাচ্ছেন সেই চোরাবালির ভিতরে। হয়ত আমারই বোঝার ভুল বা দেখার দোষ। তাহলে? এই যে অনেক মানবজমিন যা আবাদ করে সোনা ফলানো হয়েছিল, সেখানে তো এখন মেঠো ইঁদুরেরা উৎসব করছে। সেখনেই তালে তাল মেলাতে হচ্ছে!
আমার হয়েছে সমস্যা। কালোকে কালো না বলে সাদা বলতে হবে এমন স্টাইল তো আমার জানা নেই। আবার কালো বললেই তা লোকসমক্ষে আনা হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং হয়ত একদিন চিহ্নিত করা হবে অপরাধীর তকমায়। এতসব ঝামেলায় না থেকে বরং নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হয়ে থাকি। মনে মনে ভাবি তাহলে এই কাঠামোয় কিছুই করা হল না। তবে কি নিজস্ব কিছুই থাকবে না? ভিক্ষাপাত্র নিয়ে যে কোথাও দাঁড়াচ্ছি না এই অহংকারটুকু তো একমাত্র আমারই। এটা কেড়ে নেবার ক্ষমতা কারও নেই।
তাই থাকি হালকা-ফুলকা মেজাজ নিয়ে।
বহু বছর আগে আমার এক বন্ধু নতুন সাইকেল চালানো শিখে যে মেয়েটিকে সে পছন্দ করত রাস্তায় তার সামনে নামতে গিয়ে আছাড় খেল।
এমন বিচিত্র আবির্ভাব দেখে মেয়েটি হেসে কুটিপাটি।
বন্ধুটি বলল, ‘তুমি হাসছ কেন?’
হাসব না? সাইকেল চালাতে পারো না। আছাড় খেলে তাই হাসছি।’
বন্ধুটি একেবারেই লজ্জিত না হয়ে বলল, ‘এটাই আমার নামার স্টাইল।’
তবে নিজেকে উজ্জ্বল আলোতে টিকিয়ে রাখবার জন্য যে তাবেদারি করলাম না এটাও তো কম নয়। এটা অনায়াসেই করা যেত। সেই যোগাযোগ যে আমার ছিল না তা নয়।
তাহলে হয়ত তাঁহাদের মতো আমারও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যেত। তখন নিজের বিবেকের মুখোমুখি হতে হত। নিজের সঙ্গেই শুরু হত তর্ক অবিরাম। এটাও তো কম শাস্তির নয়।
সেই শাস্তি শরীরে, বিবেকে বহন না করে এক ধরনের শান্তি নিয়ে আছি।
ধরেই নিলাম যে এটাই আমার স্টাইল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।