ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৭২

ফেরা

আজকের যাত্রা অনেকটা লম্বা। আর পথের দৃশ্যের তো তুলনা নেই। প্রায় ২১৫ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে শোন প্রয়াগ পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে। আর আজকের যাত্রা পথ কিছু ঐতিহাসিক শহরের গা ঘেঁষে।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টি পিছু ছাড়েনি। কখনো মুষলধারে, আবার কখনো টিপটিপ, হয়েই চলেছে। জানালার ধারে বসে এক মনে তাকিয়ে থাকি বাইরের দিকে। ভিজতে থাকা গ্রাম, ছোটো শহর আর ছোটো বড়ো নানা জঙ্গলকে পিছনে ফেলে বাস এগোতে থাকে। দেখতে দেখতে কখন চোখ লেগে গেছে টের পাইনি।
ঐ ঋক, ওঠ। লাঞ্চ দেওয়া হবে এবার। ডাবলাদার কথায় চোখ মেলে তাকাই। বাস সদ্য দাঁড়িয়ে পড়েছে। ঘড়ি বলে বারোটা পনেরো। একে একে সবার সামনে নীচে নামি। বৃষ্টি একটু ধরেছে, তবে আকাশে ঘন কালো মেঘ। সামনে সুবিশাল নদী বয়ে চলেছে। এ কোথায় এলাম আমরা?
উত্তর দেন অধিকারী কাকু। সামনের নদী ভাগিরথী। এবং জায়গার নাম নতুন টেহরি। সামনে চোখে আসে টেহরি বাঁধ।
মনে পড়ে যায়, বেড়াতে আসার আগে কোলকাতায় পড়াশোনার কথা। বাঁধের জন্য পুরনো টেহরি শহর আরো অনেক গ্রাম কে নিয়ে তলিয়ে গেছে জলের তলায়। উদ্বাস্তু নাগরিকদের পুনঃবাসন দেওয়া হয়েছে এই নতুন টেহরি শহরে। অরণ্য ও গ্রামবাসীদের নিয়ে চিপকো আন্দোলন করেছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা। কিন্তু সরকারের সামনে এক সময় চিপকো আন্দোলন শেষ হয়ে যায়। বাঁধ হয় কিছু মানুষের সুবিধার্থে, আবার কিছু মানুষকে নিজের দেশেই শরণার্থী হতে হয়।
এক মনে ভাবতে ভাবতে ঠান্ডা জলের ফোঁটায় শিহরিত হই। আবার বৃষ্টি নামে, এবার প্রচন্ড গতিতে। এক ছুটে আশ্রয় নেওয়া হয়, পাশের ঝুপড়ি দোকানে, ওখানেই আজ রান্না করে আনা খাবার পরিবেশন করা হবে। একে একে সবাই এসে জড়ো হয়, খাবার দেওয়াও আরম্ভ হয় সাথে সাথেই।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।