• Uncategorized
  • 0

অনুবাদে দোলনচাঁপা চক্রবর্তী

রাশা ওমরানের কবিতা

সিরিয়ার বিপ্লবের প্রতিবাদী মুখ, রাশা ওমরান। শুরু থেকেই সোচ্চারে বিপ্লবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাঁর কবিতা শুধুমাত্র একমাত্রিক বিপ্লবের অভিমুখ নয়। সমাজবিপ্লব বা গৃহবিপ্লবের নির্ধারিত গণ্ডীকে অতিক্রম করে নারীর প্রাত্যহিকতার অভিমুখকে চিহ্নিত করে তাঁর লেখা। রাশার সম্মতিক্রমে অনূদিত একটি সিরিজ থেকে ৩টে কবিতার অনুবাদ এখানে দিলাম।

শোবার ঘরের দরজায় একটা বড় আয়না লাগানো
প্রত্যেক বার সামনে দাঁড়ালে
সেই মহিলাকে দেখতে পাই যে এই বাড়িতে থেকে গেছে
তারও আগে যাকে আমি চিনি না
কিন্তু তার গোপন কথাগুলো আমি আবিষ্কার করি
একটার পর একটা গল্পে
প্রত্যেকবার যখন আয়নার সামনে দাঁড়াই
শোবার ঘরের দরজায় লাগানো বিশাল আয়না;
ঠিক যে জায়গাটায় সেই নিঃসঙ্গ মহিলা, যে এর আগে এ বাড়িতে থেকে গেছে, তাকে টাঙানো হয়েছে।

দীর্ঘ এক সান্ধ্যভোজ থেকে ফেরার সময় দরজা খুলে, আমি দেখি দরজার পিছনে শয়তানি হাসি ঠোঁটে নিয়ে ও অপেক্ষা করছে যেন আমাকে বলতে চাইছেঃ “যা কিছুই কর সবই বিফলে যায়! আমি ভালোভাবেই জানি; রাত অবধি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে জেগে থাকা, গভীর রাতে মদ খাওয়া, সরু বারে বসে মাতাল পুরুষের সঙ্গে ন্যাকামি, মোবাইলে ঘন্টায় ঘন্টায় মেসেজ পাঠানো। কেবল এখানে, যেখানে তুমি থাকো, প্রচুর জায়গা রয়েছে তোমার দেহ নিয়ে খেলার আর কোনও বৈশিষ্ট্যহীন সাপুড়ের ঝুড়ির ভিতরে সাপের মতো দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার।” বলল, আর তারপর সদর দরজা থেকে অন্ধকার শোবার ঘরের বিছানা পর্যন্ত নিজের শয়তানী হাসির ছাপ রেখে দিয়ে চলে গেল। আমি এইটুকু কেবল করেছি যে ওর ওই শয়তানী হাসি অতিক্রম করে এসে নিজের বালিশ জড়িয়ে ধরে আমার বিছানাতে ঘুমিয়ে পড়েছি, যাতে ভোরবেলার মৃত্যু আমাকে একা রেখে চলে যেতে পারে।

খাওয়ার ঘরের মাঝখানে, সাদা মেঝেতে, মরচে ধরার একটা বিরাট দাগ আছে। প্রত্যেক দিন আমি বৃথাই চেষ্টা করি সেটাকে সরানোর। আজ, আজকেই একমাত্র, এ কাজটা করার জন্য একটা ধারালো ছুরি ব্যবহার করার কথা ভাবলাম। যখন ব্লেড দিয়ে ওটাকে চেঁছে নিচ্ছিলাম বাকী কিছু দাগকে একটা চোখের মতো লাগছিল যার থেকে একটা চওড়া কালো মরচে ধরা আইরিস বেরিয়ে আসছে। হয়ত এটা সেই মহিলার চোখ যে আমার আগে এ বাড়িতে থাকত, আর হয়ত সে আমার মতোই ছিল যেদিন বিস্মৃতির দিকে অর্ধেক হেঁটে যেতে যেতে সে তার চোখ উপড়ে নিয়ে ঘরের মাঝখানে ফেলে দিয়েছিল, অন্তিম রাতের খাওয়ার মধ্যে রুটি, নুন আর লেবু দিয়ে ঘিরে নিজের হৃৎপিণ্ডটা রেখে দেয়ার পর যে বিস্মৃতি এক নারী সাধারণত তার চোখ দিয়ে শুরু করে ছাইদানীতে নিজের নিঃসঙ্গতার মধ্যে ডুবে যাওয়ার আগে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।