কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে স্বপঞ্জয় চৌধুরী (গুচ্ছ কবিতা)

বাসন্তিক ভালোবাসা

কিছু মিছে ফানুস উড়ছে শহরের আকাশে

খোপায় গোজা লাল হলুদ পুষ্পসকল হতে

আর্টিফিসিয়াল ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে

হাতি ঘোড়ার ঝিলসমূহ ভরে উঠছে কৃত্রিম নান্দনিকতায়,

তিরতির করে ঢেউ তুলছে জল

দূর দালানের বাতির ঝিলিক জলকে কামুক করে তুলছে।

ওহে রতিক্রান্ত ঢেউ

সেলফিস মানুষের সেলফিতে তোমাকে দেখতে পেলুম।

চারিদিকে ব্যবসায়িক পসরা বসেছে

রিকশার টুংটাং শব্দেও জোস লেগেছে যেন।

আমাদের বালক বালিকাগণ অসংজ্ঞায়িত ভালোবাসায়

নিজেকে সপে দিচ্ছে ক্রমে ক্রমে।

ভ্রম ও ভ্রান্তির পার্থক্য না বোঝা জেনারেশন

নিজেকে অজান্তেই ভ্রান্তির ছলে সুন্দর করে তুলছে

ঠোঁট, চিবুক ও জবান বন্ধ হয়ে আছে আজ

কেবল চোখেরা দ্যাখে সুন্দর, মোলায়েম আলো

শিউলির মখমল দেহ হতে ছুটে আসে ঘুম

বাড়ি ফিরে ষাটোর্ধ ভিখিরি দেখে ফুটে আছে ভাতফুল

ভালোবাসার মত স্নিগ্ধতা ছড়াতে ছড়াতে।

 

ভেদ

শুরু থেকে শেষ অবদি

নিজের শেকড় থেকে কেবলি পালিয়ে বাঁচা।

নিজেকে লুকোতে বস্ত্রধারণ,

ছোট- বড়- দীর্ঘকায় কিংবা অতিকায় বস্ত্রসমূহ

কখনোবা অস্ত্র হয়ে ওঠে

কিছুটা প্রতীকী কিছুটা ভণ্ডামি কিংবা কিছুটা ভনিতার স্বরে

নিজে মুক্তি দেবার এ এক আজন্ম- আমৃত্যু চেষ্টা চলে অবিরত,

মন্ত্র- ছলা- কলা- কুফা- ফুফাক্কা

এক ফুৎকারে উড়ে যায় যখন নিজের সামনে ঠিকঠাক

আয়নাটা এসে হাজির হয়।

কেরামতি, বুজরুজি, সংস্কার- কুসংস্কার

এই স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠ জাতির তৈরি।

যাহা মানুষ তাহাই মনু, ভীম এর ভীমরূতি খেলা

তবু চলতে থাকে আবৃত বনাম অনাবৃত,

সংস্কার বনাম কুসংস্কার, আর্য বনাম অনার্য।

ভেদ প্রস্তুতে যেন নগ্ন আনন্দ তাদের।

জলকে ভেদ করে দেখাও,

বায়ুকে ভেদ করো জানি পারবেনা

তারা অশরীরী তাই তারা শরীরের ভাষা জানেনা।

তারা জানে সৃষ্টি-সুখ শুধুই অভেদ।

মানুষের জন্ম এক অনাবৃত প্রকৃতির কোলে

তাকে আবৃত করেই সকল ভেদের শুরু।

ওই শোন কিচিরমিচির ঘন্টা ও শিঙ্গা ধ্বনি

যে অভেদ থাকে শিল্প ও জলের ভাষায়

তারে ভেদ করার এতো আয়োজন

অবশেষে দ্ব্যর্থহীন ভাবে ব্যর্থ হয়

মায়াপাখির বেশে সেও খাঁচা ভেঙে

ফুরুৎ করে উড়ে যেতে জানে।

 

ক্যালেন্ডার

বোকা ক্যালেন্ডারে ঝুলছে সময়

ঝুলছে স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রেম

ঝুলছে জন্ম, ঝুলছে মৃত্যু

পাতার পরে পাতা উল্টায়

দৃশ্যের গায়ে লেগে আছে দৃশ্য

সময়ের গায়ে সময়।

হায়রে বোকা ক্যালেন্ডার

অবুজের মতো কফির মগে

চুমুক দিতে গিয়ে গিলে ফেলেছি তারিখ

গিলে ফেলেছি তোমার লিপস্টিক চুমো।

গান শুনি, সুর শুনি মেঘের সত্তা আঁকি

ক্যালেন্ডারে মুড়ে রাখি অবসর

মুড়ে রাখি ফুসরৎ

যেনবা ঘর থেকে ঘরকে কেড়ে নিয়ে

বিশ্বঘরের ভেতর শুয়ে আছি আজীবন।

ক্যালেন্ডার বিক্রির ব্যবসায়িক সাফল্য শেষে

এই ভূমধ্য তটে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব

সময়ের গায়ে সময় লেগে আছে

দৃশ্যের গায়ে দৃশ্য

কোল্ডকফির মগে লেগে আছে লিপস্টিক চুমু।

বোকা ক্যালেন্ডার তারিখে তারিখে বৃত্ত হয়ে আছো

লাল আর লালে লিখছো অবসর।

সবুজ বর্ণে লিখো আমার জন্ম

আর কালো বর্ণে মৃত্যু।

রাতের গায়ে রাত লেগে আছে

ঘাসের গায়ে মাটি

তোমার গায়ে লেগে আছে আমার শুরু ও শেষের গল্প

হায়রে বোকা ক্যালেন্ডার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।