কর্ণফুলির গল্প বলায় আনোয়ার রশীদ সাগর

অন্ধকারে
স্মৃতি বড় বেয়াড়া-বেহায়াও। এত বড় উঠানের মাঝে দুটো গোলা। গোয়াল ভরা গরু গোলা ভরা ধান,কোথায় গেলো সেই জারি-সারি গান!
দক্ষিণে গোয়ালঘরে গরু-মোষ একঘরেই থাকতো। উঠানেও জোয়ান দুটি কুকুর ও কয়েকটি বিড়াল গায়ে গা ঠেকিয়ে শুয়ে থাকতো। কখনো কখনো আনন্দে মেতে ওঠতো, একে অপরের দিকে পা এগিয়ে দিয়ে ছোট শিশুদের মত পা চেলে চেলে গুটি খেলার মত খেলতো। সন্ধ্যা হলে পাশের বাড়ি শাঁখ বাজতো, মসজিদে আযানও হতো। অথচ কী এমন হলো, কুকুরে কুকুরে কামড়াকামড়ি করে,বিড়াল দেখলে তেড়ে যায়,বিড়ালও কুকুর দেখলে পালায়।খগেন দাস বুঝে উঠার আগেই, রাতের আঁধারে চলে যায় শিবু মণ্ডল স্বপরিবারে?
শুধু যাওয়ার আগে পুজার ঘরে ল্যাম্প জ্বেলে রেখে যায়। গরীব খগেন দাস তো যেতে পারে না। তার যাওয়ার মত টাকাও ছিল না। একা-একা রাস্তার মানুষ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় তার বসবাস।
গ্রামের হাটের উপর, বসে থাকে রাস্তায় ছালা পেড়ে। জুতা স্যান্ডেল সারে,কালিও করে দেয়। পাড়া-প্রতিবেশী সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক। সকলেই খগেনদা-খগেনদা বলে ডাকে। শুধু মসজিদের নতুন পাগড়িওয়ালা হুজুর কথা বলে না-বলে খগেন মুচি।
এর মধ্যে স্কুলগামী এক মেয়েকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটি বকাটে ছেলে খারাপ-খারাপ প্রস্তাব দেয়,এই যাবি-তুই সুন্দরী মাল-নায়িকার মতন।
প্রায় দেখে খগেন দাস। ঠিক ছালা পেড়ে যে জায়গায় বসে থাকে, তার থেকে কয়েক গজ দূরেই এমন ঘটনা ঘটায় ছেলেগুলো। মেয়েটা চোখ-কান বুজে তার নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে হেটে চলে যায়। কী যেন মনে হয় খগেন দাসের, দাঁড়িয়ে পড়ে সে। ছেলেগুলোকে প্রতিবাদ করে,এই তুমরা মেয়িডাকে জ্বালাও কেন?
ছেলেগুলো হোহো শব্দ করে হাসে,সিগারেট ধরায়,জোরে জোরে সিগারেট টেনে ধুয়া ছুড়ে দেয়, খগেন দাসের মুখের দিকে। খগেন দাস হতোবম্ম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে আসে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হয় না। আজ কোনো কাজও করেনি সে। চাল কেনা পয়সাও নেই। রাত বাড়তে থাকে। হাটের উপরের দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে যায় একটা একটা করে। ঘন অন্ধকার নেমে আসে।
নিঝুম রাতে ঝিমতে ঝিমতে বাড়ি ফেরে। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
খগেন দাসের যুবতী মেয়ে দুটো বিবস্ত্র হয়ে পড়ে থাকে ভাঙা টিনের চালার ভিতর- মাটির চারদেওয়ালের অন্ধকারে।