সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ১৬)

দামিনীর ম্যাজিক

দামিনী ভাগ্যিস সেদিন রান্নার আয়োজন বেশি করে রেখেছিল । দাশু সেদিনই একগাদা বন্ধু নিয়ে হাজির হল । দাশুদের গ্রামে ধানকাটা হচ্ছে, সেই ধানক্ষেতে দাশুর দলবল নিয়ে থাকার প্ল্যান, মাটির বাড়ির ভিতরে । মাটির হাড়িতে ভাত রান্না হবে, সে হাড়ির ভাত বেজায় মিষ্টি, পেয়াজ লঙ্কা পোড়া সহযোগে সেই ভাত উদরস্থ হবে। এই তাদের রাতের আহার। তারপর তাঁরা ক্ষেত পাহারা দেবে ।

দাশু গন্ডাখানেক বন্ধু জুটিয়ে এনেছে । দুপুরে দামিনীর হাতে চিংড়িবাটার পাতুড়ি, কুমড়োভাতে দিয়ে থালা থালা ভাত উড়িয়ে
তারা ক্ষেতের দিকে চলে গেল ।
খানিক পরেই দামিনী শুনল ক্যানেস্তারার আওয়াজ । দামিনী বুঝল বিপদ উপস্থিত । রান্নাঘরে শেকল তুলে সে পায়ে পায়ে বেড়িয়ে পড়ল । কিছুক্ষণ হাটার পরেই দামিনীর কানে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ এল । কারা যেন দূর থেকে নি:স্বাস নিচ্ছে । দামিনী বুদ্ধিমতি মেয়ে দাশুর সাথে তাঁর গ্রামে গঞ্জে, শহরে আকাশপথে, আলোর পথে, চলাফেরা করার তাঁর বিস্তর অভ্যেস আছে । দামিনী বুঝল তাঁর আশেপাশে হাতির দল রয়েছে । সামনেই বিপদ । হাতির দল যদি ভয় পেয়ে দৌড়তে শুরু করে সব তছনছ করে দেবে । ঘর, বাড়ী, ক্ষেত, ধান সব শেষ হয়ে যাবে তাদের পায়ের নীচে ।
দামিনী সময় নষ্ট না করে সামনে বটগাছের ঝুড়ি বেয়ে সটান টঙে চড়ে বসল । মুখের কাছে হাতদুটো এনে চোঙার মত করে সাংকেতিক ভাষায় হাতিদের কিসব বলতে শুরু করল । দাশু তাঁর দলবল নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে দামিনীর সাংকেতিক ভাষা শুনতে পেল । সে হাত তুলে তাঁর বন্ধুদের চুপ করতে বললে।
সবাই দাঁড়িয়ে শুনল কেমন মাঠ, ঘাট ক্ষেত, জঙ্গল ছাপিয়ে যাচ্ছে এক মিঠে সুর । দাশুরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল এক বিশাল মাতামহী হস্তী এগিয়ে যাচ্ছে বটগাছের দিকে । দাশু জানে দামিনী বটগাছের টঙে চড়ে বসে আছে । সে দামাল হাতির দলের মাতামহীকে বেশ বুঝিয়ে নিতে পারবে । মাতামহী বটগাছের কাছে এগিয়ে আসতে দামিনী তাঁকে বললে “এখানে আজকে থেকো না । সামনে তোমাদের বিপদ । আমি তোমাদের জন্য নবান্নের আগেই পাটালি আর ধানের ভেট পাঠাব । দাশু গিয়ে দিয়ে আসবে আজকে রেহাই দাও । তোমরা ধান নষ্ট করলে আমরাই বা কি খাব? তোমাদেরি বা কি দেব?
এ কথা শুনে মাতামহী তাঁর দলকে হুকুম করলে জঙ্গলের পথে ফিরে যেতে । হাতির দল জঙ্গলের পথ ধরতেই দাশুর বন্ধুরা দাশুকে বললে ‘ দামিনীর কিন্তু তোর চেয়ে বেশি বুদ্ধি রে দাশু । কেমন হাতির দলকে ম্যানেজ করে নিল । দাশু গম্ভীর হয়ে বললে ‘ কার বৌ দেখতে হবে তো’ । দামিনী সোঁ করে গাছের ডাল ধরে নেমে এসে বললে ‘ বাজে না বকে কাজে যাও, আর তিনদিন বাদে নবান্ন, পরশু থেকে বাড়িতে পাটালি তৈরি হবে, পায়েস খেয়ে উদ্ধার কর আমাকে, বন্ধুরা সবাই যেন আসে’ । দাশু তাঁর দলবল নিয়ে ধানক্ষেতের দিকে এগিয়ে গেল, দামিনীকে না ঘাটিয়ে ।

কার্তিকের হিম আর জ্যোৎস্নার মিশেল দামিনীকে ভাললাগার আবেশে ভাসিয়ে নিল ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।