• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ৫)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ৫)

আমার আধ নোংরা পায়ের গন্ধ এতো মোহময় যে আমি ধোয়ার আগে ঘ্রাণং আত্মতৃপ্তং করে নিই, খুব আগে নয়, কিছু দিন আগেও নিজস্ব বগলের প্রতি আমার এরূপ মোহ ছিল, কিন্তু বগলপ্রবণতা আমার পা টলায়নি কোনোদিন। তথাপি এখন যে একদম নেই তা নয়, সময় সুযোগ পেলে কলেজবেলার সেই তীব্র ভীষণার শরীর আজও শুঁকে দেখি। ছাড়াছাড়ির সময় বগল বিষম কষ্ট পেয়েছিল, শুধু আত্মহত্যা মহাপাপ তাই এখনও লুকিয়েচুরিয়ে কথা বলতে পারি। যদিও তারপর সব স্বাভবিক হয়ে যায়, এতটাই স্বাভবিক যে ওর হবু বরের সাথে কতবার করেছে সেখবরও আমায় শুনতে হয় উদুম আগ্রহ উৎসাহ নিয়ে, নইলে আবার জিগ্যেস করে ‘কীরে তুই রাগ করছিস্ নাকি?’ ধুস্ শ্লা! আমি! আবার রাগ! কী করে বোঝাই বলুন তো! আমার ফেবু প্রোফাইলের চেনটা একবার ভালো করে খুলে দ্যাখ সামনেই Bio, ওখানে পরিস্কার লেখা আছে ‘খুব রাগ হলে হেসে ফেলি আমি/ খসে পড়ে পলেস্তারায় বাদামি ওষ্ঠাধর’ – তা কি আমি চুল ছিঁড়তে লিখে রেখেছি? আমি ফেবুতে মিথ্যে লিখি না কখনও লিখিনি, যা লিখি তা লোকের ভাষায় বলতে গেলে অনুভব করছি তাই বলছি দাঁড়ায়, কিন্তু তুই আমার জন্য দাঁড়াবিই বা কেন! তুই তোর হবুর দাঁড়ানো চোষগে যা…
আমি আর এভাবে ঝুলে থাকতে পারছি না আগানেবাগানে,  সারাজীবন নীলাচলে থাকতে পারেননি মহাপ্রভু, দোলাচলে আমিও পারবো না। সত্যি কথা বলি? তুমি যদি অক্ষর হতে চাও তবে আমি আর বেঁচে নেই পিণ্ডের ভেতর। এতদিন যেসব অনুভূতিতে ভুগেছি তাদের কাউকেই ছুটি দিতে পারিনি আজও, তাদের খোসপ্যাঁচরায় আমার শরীর আবৃত, শুকিয়ে যায়, আবার হয়, দাগ শুকোয় না কিছুতে। জাঙিয়ার মধ্যে অগুনতি কেন্নো ঢুকিয়ে চেন আটকে দেওয়ার মতো দৃশ্য রোজ চোখের খোঁপায় জেগে ওঠে, উঠছে, চুল খসে পড়ছে, দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়ছে, মুখস্থ হয়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না, শুধু নিমগ্নতা ঠাহর করা যায়, অন্তর্গামীতা নয়। সারা শরীর জুড়ে এতো যে তোমার স্মৃতি ধরে রেখেছি তার কোনো দাম নেই বুঝি? আমি তো মনে মনে কত কিছু ভাবি, কই আমার শরীর তো এতো ভাবে না! সে তো স্মৃতিতে মশগুল। যতটা সময় এই শরীর আমাদের কাছে থাকে ততক্ষণ এই মশগুলতা ভুলে থাকি, দূরে গেলেই শারীরিক স্মৃতি ঘিরে ধরে আমাদের, তখন সেই বোধ কাজ করে, করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়, এখন বিশ্রাম প্রয়োজন
তারপর ঘুম থেকে উঠে জানলা বন্ধ করে দিই, এসময় জানলা দিয়ে অন্ধকার ঢুকে যায়, আর কে না জানে অন্ধকারে হাসা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। তাই অন্ধকার হওয়ার আগেই আমি হাঁটতে বেরই আর হাসি, হাসির কথা উঠলে বলি হাসবো হাহা হাহা! যদিও অত জোরে হাসতে আমি পারি না, ওটা আমার প্রেমিকা রপ্ত করেছে বা ওর বা ওদের স্বভাবগত, আমার নয়। তবুও রাস্তায় একা একা হাসতে দেখলে আমায় যারা পাগল ভাবে তারা তো জানে না দীর্ঘ দিন হলো আমার লাগানো বাঁশগাছগুলো বেশ বড়ো হয়ে উঠেছে, তারা দোল খায়, মড়মড় আওয়াজ করে ভেতর ভেতর; এই ঝাড়ে কোনো ভূত নেই, কোনো ভবিষ্যৎ যে আছে সে কথাও নিশ্চিত করে বলতে পারি কই! পারি না বলেই হাসি, করুনা হয় তাই হাসি। করুণানিধান নামে শান্তিপুরে এক কবি ছিলেন, তাঁর ‘পদ্মপুকুরে’ কবিতায় আমি হাসি বা করুণা কোনোটারই উল্লেখ পাইনি, শুধু প্রকৃতির নিখাদ বর্ণনা পেয়েছি; আচ্ছা প্রকৃতি বললেই তো গাছের কথা পাখির কথা জলের কথা মনে আসে, এরা কি হাসতে পারে? অথবা করুণা? কী জানি! পারলেও কী বলবে আমায়? আমি কি অতটা গাছের যতটা কাছের হলে বান্ধবী আর হাসতে পারে না, শুধু গরম নিঃশ্বাস ফেলতে পারে  শুধু দম বন্ধ করে দিতে পারে, কে জানে! আমি তো কিছুই জানি না। জানতে হলে আমায় যা যা করতে হবে বলে আমি জেনেছি তা তা করা আর একটা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরা সমগোত্রীয়। কিন্তু প্রেম তো গোত্র ভিত্তিক নয়, যারা গোত্র কী এটা জানে না তাদের প্রেম বোঝানো মুশকিল, তাদেরই প্রেমে পড়লে মাথা বিগড়ে যায় অ্যান্ড ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু এটাও তো ঠিক, ছোটোবেলা থেকে এসব না জানলে আমাদের মধ্যে ক’ জন প্রেম করত বা পড়ত তার হিসেব করা আমার কাজ নয়। তবুও যে গুটিকতক প্রেম আমি করেছি তাতে হাসি ছিল আর করুণাও ছিল না তা কী করে বলি কারণ আমি কোনো ক্ষেত্রেই সফল নই আর সফলতা বলতে আমরা বা আমি যা বুঝি তা সকলকে বোঝানো একটু টাফ্, কখনই পরিপূর্ণতা পাবে না, তৃপ্তি পেতে পারে, তবে তার জন্য শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটি পড়তে হবে, নইলে যে পিছিয়ে পড়তে হবে তা নয়, তবুও বৌদির কথা উঠলে এটা পড়ে নেওয়া দরকার। নেহাত রাস্তায় যাদের দেখি তাতে… । যাইহোক, হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে এসব ব্যাপারে যাদের কথা আমার মনে পড়ে তাদের আমি করুণা করিনি। শুধুই হেসেছি সেটা বলাও ভুল হবে। কারণ প্রথমেই বলেছি সেই হাসি আমি রপ্ত করতে পারিনি আজও। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ফেরার পথে অসাধারণ ড্রেনেজ সিস্টেম আমি দেখতে পাই না, দেখতে পাই, উপচে পড়া প্লাস্টিক ব্যবস্থাও আমি দেখতে পাই, সবটাই চোখে পড়ে, তবে যতটা পড়লে জ্বালা করে ততটা নয়। এসব দেখে হাসি না করুণা কোনটা আমার পাওয়া উচিত তা কে বলে দেবে আমায়? নিশ্চয় আমার দাঁত বা চোখ এতো কিছু জানে না, জানলে তো এতদিনে বাঁধাতে হতো বা চশমাক্ত হতে হতো, কই তেমন তো কিছু হয়নি। রোজ তো কত কিছু ঘটে যাহা তাহা, এমন কেন সত্যি হয় না আহা! বলতেও হয়নি আমায়। সুতরাং

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *