• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ১২)

সুমনা ও জাদু পালক

খুব বেশী বড় নয় পাখিটা, কিন্তু দেখতে ভারী সুন্দর। উজ্জ্বল নীল রঙের পাখিটার গলার কাছটা হালকা বাদামি। পাখিটা ডানা দুটো মেলে বসেছে ।বট গাছের পাতার ফাঁক চুঁইয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে ওর গায়ে। কি বাহার পাখির ডানার! উপরের দিকটা নীল আর তলার দিকে সবুজের ছোঁয়া। পাখিটার মাথাটা একটু বড় ।মাথার উপরের দিকটা ঘন নীল বর্ণ। লেজটা তো আরো সুন্দর। লেজের পালকের শেষ দিকটার রং অদ্ভুত উজ্জ্বল নীল ।ঠোঁট আর চোখ দুটো কুচকুচে কালো। কি পাখি এটা? এই বটগাছে হাজারো পাখি আছে। তাদের তো সুমনা চেনে। তাহলে? তাহলে এটা কি পাখি ?আচ্ছা, এটা কি নীলকন্ঠ পাখি?
বাবার মুখে এই পাখির গল্প শুনেছে সুমনা ।আগেকার দিনে অনেক জমিদার বড়লোকদের বাড়িতে দুর্গাপূজার সময়, দশমীর পূজোর শেষে এই পাখি নাকি উড়িয়ে দেওয়া হতো আকাশে ।পাখি নাকি কৈলাসে গিয়ে শিব ঠাকুর কে আগেভাগে খবর দিত যে, মা দুর্গা ফিরছে ।এখনো নাকি কোন কোন বনেদি বাড়িতে এই প্রথা আছে। তবে কি এটা সেই নীলকন্ঠ পাখি ?ভাবতে বসে সুমনা। পাখিটা একটু দূর থেকে,, কখনো ডানদিকে, কখনো বামদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে সুমনাকে। সুমনা বলে, তুমি কে গো ?তোমায় তো কোনদিন দেখিনি এখানে?
পাখিটা পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে সুমনার কাছে। তারপর, কি আশ্চর্য !ওতো অবিকল মানুষের গলায় কথা বলে উঠলো।
পাখিটা বললো, ঠিকই ভেবেছো তুমি, আমি নীলকন্ঠ ।নীলকন্ঠ পাখি গো। বহুদূর থেকে এসেছি এখানে।
— বহুদূর মানে? কৈলাস থেকে ?শিব ঠাকুর আর মা দুগ্গা যেখানে থাকে,সেখান থেকে?-
——–হ্যাঁগো মেয়ে, সেখান থেকেই।
—- ও পাখি, তুমি কৈলাসে গিয়ে শিব ঠাকুর কে আমার হয়ে একটা কথা বলে দেবে গো?
—– কি কথা ?
—–আমার মায়ের না খুব অসুখ হয়েছে। জ্বর ছাড়ছে না কিছুতেই। তুমি একটু শিব ঠাকুর কে বলে দিওনাগো, আমার মাকে যেন ভালো করে দেয় ।মা ভালো না হলে আমাদের যে খুব কষ্ট ।
—–আমি জানিতো সব।
—– কি জানো তুমি ?
—–সব জানি ।এই যে তুমি সরকার বাবুদের মন্দিরে গিয়েছিলে সেটা জানি। বাদল ঠাকুর তোমাকে যে প্রসাদ দেবেন বলেছিলেন ,সেটাও জানি।
—– কিন্তু ছোট গিন্নি মা তো……!
—– সেটাও জানি ।ছোট গিন্নি মা আপত্তি করায় প্রসাদ পাওনি তুমি। ঠিক বললাম তো ?
—–একদম ঠিক। কিন্তু তুমি কি করে জানলে ?——আমি সব জানি ।তোমার মা সুস্থ হয়ে কাজে যেতে পারছেনা বলে মন্দিরে প্রসাদ পাচ্ছ না তোমরা।
—-ও বাবা, তুমি তো সবই জানো দেখছি !
—-তাহলে বলো, আমার মা কবে ভালো হবে ?——–ভালো হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি ।
—–কি করে?
—- একটা ম্যাজিক হবে।
—- ম্যাজিক! ওমা, তুমি আবার ম্যাজিক জানো নাকি?
—- জানি তো ।
—-জান পাখি, ছোটবেলায় দেখেছিলাম, আমাদের স্কুলে একজন লোক এসে ম্যাজিক দেখিয়েছিল ।লোকটার হাতে ছিল একটা খুব সুন্দর লাঠি, ম্যাজিক লাঠি। ওই লাঠি দিয়ে মজার মজার ম্যাজিক দেখাচ্ছিলো লোকটা। কি সব মজার মজার ম্যাজিক দেখিয়েছিল !কাগজের ফুল টুপির তলায় রাখতেই একটু পরে হয়ে গেল একটা পায়রা। লাল রঙের রুমাল দিয়ে একটা খালি বাক্স ঢাকা দিয়ে দিল ম্যাজিশিয়ান ।জাদুকাঠি ছুঁইয়ে দিলো বাক্সে। রুমাল তুলে বাক্স খুলতেই বেরিয়ে এল ধবধবে সাদা একটা খরগোশ ।এমনি আরো কত মজার মজার ম্যাজিক দেখেছিলাম সেদিন।
—— ওর চাইতেও মজার ম্যাজিক দেখাবো আমি।
—– তাই! তুমিও বুঝি ম্যাজিক জানো?
—- জানি তো।
—– দেখাও তাহলে এখুনি।
—-এখনই দেখাবো তো বলিনি। আজ রাতে ম্যাজিক হবে ।
কথা শেষ করেই পাখিটা ডানা মেলে উড়তে থাকে। উড়তে উড়তে পাখিটা লেজ ঝাড়া দিয়ে একটা উজ্জ্বল নীল রঙের পালক ফেলে দিলো মাটিতে ,সুমনার সামনে।
উড়তে উড়তে দূরে চলে যাওয়ার আগে পাখিটা চিৎকার করে বলল ,এই পালকটা ঘরে রেখে দিও সুমনা। কেউ যেন দেখতে না পায় ওটা। দেখবে, আজ রাতেই ম্যাজিক হবে একটা ।
সুমনা পালকটা কুড়িয়ে নেয়। ওমা! ওমা ,কি সুন্দর পালকটা।পালকের উপরের দিকটা ঘন নীল ।তারপর অনেকটা জায়গা হালকা সবুজ ।তারপর আবার ঘননীল। এই ছোট্ট পাখির পালক টা আবার কি ম্যাজিক দেখাবে?

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।