সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৫২
বিষয় – আয়াঢ়ে গল্প / বর্ষা / নতুন সকাল
ছেঁড়া পাপড়ি
– আর একটু জোরে জোরে পা চালা মেঘনা। ৫.৩৫ এর ট্রেন টা মিস করব নয়ত। ঝড় জল আসছে।
– আজ একটা রিক্সাও খালি যাচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ি হাঁটার চেষ্টা করছি তত যেন পিছিয়ে পড়ছি। কিছুতেই পারছি না। শাড়ীতে আরো যেন পা জড়িয়ে যাচ্ছে।
– তুই তো খুব হাঁপিয়ে পড়ছিস মেঘনা, এইটুকু হেঁটেই। দে তোর বইয়ের ব্যাগটা।
– এই রে ঝড় উঠল তো রে মৃণাল!
– এক দু ফোঁটাও পড়েছে গায়ে। স্টেশন অবশ্য প্রায় এসেই গেছে।
– আমি আর পারছিনা মৃণাল! দম ফুরিয়ে আসছে। ভিজি ভিজব। তুই বরং ট্রেনটা মিস করিস না। তোর স্টুডেন্টরা অপেক্ষা করে থাকবে। তুই দৌড় লাগা। আমি পরের ট্রেন এ যাব ।
– না রে মেঘনা, দেরি হলে হবে। পরের ট্রেনএ অফিস ফেরত লোকেদের ভিড়ে তোকে একলা ছাড়বোনা।
– আহ্হ্হ! ও মা গো!
– একি, কি হলো! দেখতে পাস নি এতো বড়ো গর্তটা! ইস্!
ঝম ঝম করে বৃষ্টি নেমেছে ততক্ষণে। মেঘনা উপুড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে রাস্তায়। হাত , পা , কপাল ছড়ে গাছে। মৃণাল ওকে হাত ধরে তোলার চেষ্টা করছে। শেষ বিকেলের আলো বৃষ্টির জলে গুলে ছোট্ট স্টেশনটার চকচকে রেল লাইন ধরে বয়ে যাচ্ছে ।
– আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা কর। আমি ধরছি। মেঘনা! একি অবস্থা তোর! বলিস নি তো!
মেঘনার দু পায়ের মাঝখান দিয়ে রক্ত স্রোত বয়ে মিশে যাচ্ছে পথের বৃষ্টির জলে। ও তখন হাউহাউ করে কাঁদছে। মৃণালের গলা জড়িয়ে কোনো রকমে ওঠার চেষ্টা করছে।
ট্যাক্সিতে আধশোয়া হয়ে মেঘনা পড়ে আছে মৃনালের বুকের কাছে। রক্তে আর বৃষ্টিতে ভিজে জবজবে দুজন। চোখের জল যেন কান্নার ভাষা হারিয়ে বয়ে চলেছে একটানা স্রোতের মত সব ভাসিয়ে।
মেঘনার মাথায় হাত বুলিয়ে মৃনাল পরম স্নেহে জিজ্ঞেস করে-
‘ খুব কষ্ট হচ্ছে? এই তো কাছেই আমার কাকুর ক্লিনিক। এখুনি পৌঁছে যাবো। চিন্তা করিসনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। নীলাদ্রি জানে তোর এই অবস্থা?’
মেঘনা কোনো কথা বলতে পারে না। ফুঁপিয়ে উঠে। সেই ঢেউ এসে লাগে মৃণালের ভিজে বুকে।
– ‘ শেষ কবে এসেছিল নীলাদ্রি ছুটিতে?’
তার কোনো উত্তর না দিয়ে মেঘনা অস্ফুট স্বরে বলে,’ ও বলেছে এখনই বিয়ে করা অসুবিধা। ছেলে হিসেবে ওর কি আর এমন বয়স, চাকরিও নতুন।’
মেঘনাকে পাঁজাকোল করে নামিয়ে ক্লিনিক এ নিয়ে গেল মৃনাল। মেঘনাকে ওয়াস করতে অ্যাটেনডেন্টরা ট্রলি করে ভেতরে নিয়ে চলে গেলো । ও মৃণালের দিকে ভীষন মায়াবী করুন দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে ছিল শুয়ে শুয়ে যেতে যেতে। কতো মেঘলা কথা ওর দুচোখে ভিড় করে ছিল।
মৃনালের লাউঞ্জে বসে এসি তে ঠান্ডা লাগছিল ভিজে জামা গায়ে। ওর দু হাতে , জামা প্যান্ট জুড়ে মেঘনার উষ্ণ রক্তের দাগ এক আলগা উষ্ণতায় ওকে ঘিরে রেখেছিল। মেঘনার না ফোটা ফুলের ছিন্ন ভিন্ন পাপড়ি যেন মৃণালের সারা অস্তিত্ব সুগন্ধে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছিল। বাইরে তখন বৃষ্টি আকুল সব মলিনতা ধুয়ে দিতে।