• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব – ৬)

কলকাতার ছড়া – ৬

“গোবিন্দরামের ছড়ি ।
উমিচাদের দাড়ি ।
নকুধরের কড়ি।
বনমালী সরকারের বাড়ী। “
সেযুগের কলকাতায় মানুষের মুখে মুখে ফেরা বিখ্যাত একটি ছড়া। কিন্তু এমন ছড়ার কারণ কী? তবে শোনা যাক গল্প। এই চার ব্যক্তি ছিলেন তৎকালীন কলকাতার প্রতিপত্তির প্রতীক। চিৎপুরের গোবিন্দরাম মিত্র ছিলেন ইংরেজ কোম্পানি নিযুক্ত কলকাতার প্রথম নেটিভ জমিদার বা ব্ল্যাক জমিদার। ইংরেজ কোম্পানির জমিদারীতে দেশীয় প্রজাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও ভাষা সমস্যা সমাধানের জন্য তখন নিযুক্ত করা হত এক বাঙালি প্রভাবশালী ব্যক্তিকে। সাহেবরা তাঁকেই ব্ল্যাক জমিনদার বলে ডাকতেন। গোবিন্দরাম ছিলেন কুমোরটুলির প্রতিষ্ঠিত ধনী। বাগবাজারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশাল নবরত্ন মন্দিরটিকে তখনকার কলকাতার ইংরেজরা ব্ল্যাক প্যাগোডা বলত। এটি ছিল বর্তমান শহীদ মিনারের চেয়েও উঁচু। যদিও ১৭৩৭ সালের ভয়ানক ঘুর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পে মন্দিরটি প্রায় পুরোটাই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এও শোনা যায়, এমনই ছিল গোবিন্দরামের প্রতিপত্তি যে তৎকালীন কোম্পানির গভর্নরও নাকি তাঁকে সমঝে চলতেন। অন্যদিকে উমিচাঁদ ছিলেন ধনী শিখ ব্যবসায়ী। পলাশির যুদ্ধে তাঁর ভূমিকার কথা কে না জানে। নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজ কোম্পানি ও দেশীয় জমিদাররা একত্রিত হলে তিনি নবাবের পতনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলেন। তখনকার কলকাতায় গোবিন্দরাম মিত্তির ও উমিচাঁদের দুটি বাগানবাড়ি ছিল। তাঁদের প্রতিপত্তির কথা বলতে গেলে একটি ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়। তখন খোঁড়া হচ্ছে মারাঠা খাত। কলকাতাকে সুরক্ষিত রাখবার জন্য এই খালও শুধুমাত্র উক্ত দুই বাগানবাড়িকে রক্ষা করে কিছুটা বেঁকিয়ে পর্যন্ত দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি, মারাঠা খাত খোঁড়া হলেও কলকাতায় বর্গীহানা কোনওদিনই হয় নি। তাই সম্পূর্ণ খোঁড়ার আগেই এই খাল বুঝিয়েও দেওয়ার প্রকৃয়া শুরু হয়। এই খাল বুজিয়ে তার উপর দিয়ে বের করা হয় নতুন শহর কলকাতার সুন্দর একটা সড়ক রাস্তা। নাম দেওয়া হয় আপার ও লোয়ার সার্কুলার রোড। এমনকি এও শোনা যায় এই খালের অংশ বুজিয়েই তৈরি হয় হাওড়া-শিয়ালদার মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী হ্যারিশন রোড।
যাই হোক, প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ক্লাইভের দেওয়ান নকুধর বা লক্ষ্মীকান্ত ধর ছিলেন অর্থের কুমীর। তাঁর উত্তরপুরুষরাই ছিলেন পোস্তা রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা। শোনা যায় নবকৃষ্ণ দেবকে ইংরেজদের সাথে তিনিই প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন এবং নবকৃষ্ণ ওয়ারেন হেস্টিংস সাহেবের পার্সি শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। আর বনমালী সরকার ছিলেন পাটনার দেওয়ান। পরে ইংরেজদের ডেপুটি ট্রেডার হন। কলকাতায় কুমোরটুলি অঞ্চলে তিনি বিশাল প্রাসাদোপম ইমারত নির্মাণ করেন। সেই থেকে তাঁর বাড়ির কথা লোকের মুখে মুখে ফিরত। এরকম বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের কথা শোনা যায় সেযুগের কলকাতায়। আজও তাঁদের বংশধরেরা কলকাতায় বাস করে চলেছেন প্রাচীন সমস্ত পরম্পরাকে বুকে ধরেই। বাড়ি বাড়ি চলে আসছে দূর্গাপুজো। যেমন পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের বছরই শোভাবাজার রাজবাড়িতে পুজো শুরু করেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। সেই পুজো ধুমধাম করে আজও চলে আসছে। এছাড়াও দাঁ বাড়ি, দত্ত বাড়ি, কাশিমবাজার রাজবাড়িতেও আজও প্রথা মেনেই পালিত হয়ে আসছে পুজো ও পরম্পরার ঐতিহ্য।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।