-তাহলে নতুন করে ভাবতে শুরু করে দে দিদি । আর চোখের পাওয়ারের ব্যাপারটা তো তোকে কাজু বললই । ওটা কোনো সমস্যাই নয় । শুধু মোটা কাঁচের ভারী চশমা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাই তো ? আমরা যদি চট জলদি তার একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে পারি তবে ?
– তোরা কি ঘোড়ার ডিমের অমলেট ভাজবি শুনি ?
– আছে আছে , সারপ্রাইজ । তার আগে তোকে প্রমিশ করতে হবে যে বুন্দি আগামীকাল থেকে আবার প্র্যাকটিসে যাবে । রোজ পুরোদমে ম্যাচ না খেলুক ওয়ার্ম আপ তো করতেই পারে ? আরে ওতো স্কোরার , রেগুলার গোলে শট নিতে থাকুক সেটাই যথেষ্ট ।
– আচ্ছা তোদের যখন এতো ইচ্ছে তখন আমি আর বাধা দেবো না , কথা দিলাম ।
– হুররে দিদি তুসি গ্রেট হো !
এদিকে কোজাগরী আনন্দের আতিশয্যে তার বৌদিকে জড়িয়ে ধরেছে । দামিনীর দম বন্ধ হবার জোগাড় । সে বলল
– ওরে ছাড় ছাড় আমার যে প্রাণ যায় !
রাত্রে খাবার টেবিলে আবার একটা বোমা ফাটলো । দামিনী পুনরায় ঘোষণা করল যে তার আগের নিষেধাজ্ঞার ওপর সে নিজেই স্থগিতাদেশ জারী করছে । বুন্দি কাল থেকে আবার ক্লাবে খলতে যাবে । কাজু ছাড়া বাকি সকলে এতোটাই অবাক হলো যে কারো মুখে কোনো টু শব্দটি পর্যন্ত নেই । সকলের চোখ যেনো রসগোল্লা , হাঁ করা মুখ থেকে খাবার খসে পড়ার উপক্রম । বুন্দি এক লাফে মায়ের কোলে উঠে চুমু খেতে লাগল । তৎক্ষণাৎ খবর পৌঁছে গেছে
কোচ স্যারের কাছে । তিনি যেনো হাতে চাঁদ পেয়েছেন এমন ভাব । বুন্দির মায়ের সব শর্ত মেনে নিয়েছেন । তিনি ফাইনাল ম্যাচকেই পাখির চোখ বলে ধরেছেন । ‘হাড়ভাঙ্গা ন্যাংটেশ্বর’ চ্যালেঞ্জ ট্রফি এ বছর ঘরে তুলতেই হবে । নেতাজী সুভাষ স্পোর্টিং ক্লাবের সকল সদস্য যেনো আদা জল খেয়ে লাগবে এবার ।
ম্যাচের ঠিক দশ দিন আগে চন্দ্রচূড় সেনশর্মা হাজির হলেন বসু বাড়ীতে । তার সাইড ব্যাগে রয়েছে সেই অত্যাশ্চর্য্য গ্যাজেট ! এটি তার ও তার বান্ধবী মিস কোজাগরীর বিগত নব্বুই দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল । ঠিক তাই , এ্যাক্সিডেন্ট হবার অনেক আগে থেকেই উভয়ে গবেষণায় রত ছিল । আজ তাদের আবিষ্কার পরীক্ষা মূলক ভাবে কাজ শুরু করবে । হ্যাঁ চশমা না বলে একে গ্যাজেট বলাই ভালো । কারণ তার গুণগত বৈশিষ্ঠ এবং কার্য সম্পাদন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানলে নিশ্চিত করে সেটাই বলা যায় । সুপারহিরোর ভক্ত মাত্রেই জানে এ্যানিমেশন মুভির অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র হলো মিষ্টার ইনক্রেডিবল্ । তার চোখে যে ধরণের চশমা থাকে সেটা মনে মনে একবার কল্পনা করে নিলেই হলো , ব্যাস নতুন করে বর্ণনা দেওয়ার আর দরকার নেই । দেখতে হুবহু ঠিক সেই রকম । বুন্দির শিশু মুখ আকারে ছোট্ট , সুতরাং তার ব্যবহার যোগ্য বস্তুটিও যে ক্ষুদ্রাকৃতি হবে তা বলাই বাহুল্য । এবার এর ফিচার গুলির নজর দেওয়া যাক :
১. পালকের মতো হল্কা এবং স্কুইজেবল । মুচড়ে দুমড়ে রাখলেও কোনো ক্ষতি হয় না ।
২. জলে ভিজলে নষ্ট হয় না । বরফের তলায় দীর্ঘ সময় থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই । আগুনে ভস্মীভূত হয় না ।
৩. মাইনাস ১০০ ডিগ্রি থেকে প্লাস ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে যাতায়াত করতে কোনো বাধা নেই ।
৪. এক কুইন্টাল চাপ সহ্য করার শক্তি সম্পন্ন ।
৫. চোখের সামনে আনলেই একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় । সেই আকর্ষণে অটোমেটিক্যালি চোখে সেঁটে বসে । খোলার সময় দু’ চোখ বন্ধ করে অল্প একটু টান দিলেই হলো । চোখ খোলা রাখলে এই চশমা খোলা সম্ভব নয় ।
৬. পরার পর ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয় এবং তার প্রয়োজন অনুসারে কাজ করে ।
৭. ডিজিট্যাল ক্যামেরার মতোই সমস্ত এ্যাডভান্স সিস্টেম এতে প্রোগ্রামিং করা আছে । যেমন অটো জুম ইণ জুম আউট , অটো ফোকাসিং । পিক্সেল বুষ্ট বা গেইন বাড়ানো । ক্লিয়ার ভিশন ও ট্রু কালার রি- প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি ইত্যাদি ।
৮. সব চাইতে বড় সুবিধের কথা হলো বাইরে থেকে দেখে বোঝবার উপায় নেই যে এটি কি সাংঘাতিক যন্ত্র । গায়ের রঙের সঙ্গে মিশে যায় । মনে হয় যেন সাঁতার কাটার চশমার মতন ।