• Uncategorized
  • 0

গদ্য বোলো না তে জয়িতা ভট্টাচার্য

প্রতাপ

সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়ালাম।খাঁ খাঁ পথঘাট, গাছপালা পত্রহীন, শব হয়ে গেছে সব।
প্রাণহীন মৃতনগরী এখন শহর।একদল রোদ্দুর অকারণে অপচয় করছে আলো।দিন বলব না গভীর রাত ভাবতে ভাবতেই সাইরেনের আওয়াজ। এরপর সারাদিন সাইরেনের আওয়াজ। জীবিত মানুষ যাচ্ছে কিন্তু ফেরার পথ বেশিরভাগই বন্ধ। শূন্য রেললাইনের ইস্পাতের ঠিকরে পড়ছে নির্জনতা।ঘরে এলে স্বস্তি হয়।খাট বিছানা,বই পত্তর আছে যে যেখানে ছিল।
কিছুদূর ছায়াহীন পথ হেঁটে যাই ,কেউ নেই কোথাও দোকান যা ছিল দুপাশে সারিবদ্ধ শাটার ফেলে আতংকে ঘরবন্দি।
এভাবে একটা একলা রাত এসে গেল আবার। একটু হাঁটা যাক শূন্য পথে।আজ এখন আকাশে শেষ সিঁদুরের চিহ্ন ঢেকে দিয়েছে কালো মেঘ।
শুনশান পিচ ঢালা পথে দেখা হলো সন্ধ্যাশেষের আঁধারিতে প্রতাপের সাথে। প্রতাপ মানে মায়ের বন্ধু।
ছোটো থেকে যার বাড়ি ছিল আমার আকর্ষণ।হয়ত প্রতাপও।
প্রতাপদের দরমার ঘরে অসংখ্য পাখি,বুলবুলি, টিয়া,ময়না আরো কত পাখি ওড়ে ঘরের মধ্যে।
ওদের পায়ে নেই শেকল ,নেই খাঁচা তবু ওরা কখনো ঘরের বাইরে যায় না। প্রতাপ ভীষণ পুরুষালি ছোটোবেলা থেকেই মনে আছে এটা।
ওর বউয়ের হাত থেকে পাখি দানা খেয়ে জানলায় কড়িকাঠে গিয়ে বসে। সেই প্রতাপ। আমিও প্রতাপ বলি মায়ের দেখাদেখি। আজ হঠাৎ এতদিন পরে। এত দূরে।মাস্ক পরেনি। আমি পেছিয়ে যাই প্রতাপ হাসে।
এগিয়ে আসে। একই রকম আছে।কালো চুল চেক শার্টে মুখে কোনো বলিরেখা নেই।মায়ের বন্ধু।
“কেমন আছ” গাল টিপে দেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। একটা কাক এসে বসল শেডের ওপর। বন্ধ দোকান ছায়া ফেলে।
“তুমি কেমন আছ”।সম্বোধন ছাড়াই জিজ্ঞেস করি। চল আমার বাড়ি। আগের মতো।
“আগের মতো রাংচিতার বেড়া র গেট খুলে দেবে? তোমার পাশের ঘরে তোমার বুড়ি থুত্থুড়ে মা কাঠবেড়ালি গায়ে ওঠে যাঁর ,কোলে একটা মিশমিশে কালো বেড়াল ছিল…”
___”আছে আছে সব আছে যাবে তুমি ?”
শুনশান পথ। সাইকেলটা দেখিনি এতক্ষণ ।সেই পুরোনোটাই।মাস্ক নেই।সামাজিক দূরত্ব ভুলে পিঠে হাত দিয়ে বসি।আজ মা নেই।
আজ আমি।মা থাকলে ওরা কথা বলত। আমি বসে বসে পাখি ওড়া দেখতাম। প্রতাপ আর ওর বউ কৃষ্ণা। মা কে নয় কৃষ্ণাকে ঈর্ষা করতাম। কেন জানি না।ছোটো ছিলাম। মাস্কহীন প্রতাপ পুলিসের সামনে দিয়ে, খাল পেড়িয়ে, দুটো গ্রাম আর তারপর পৌঁছে যাই বিরাট মাঠের পরে দরমার বাড়িটার সামনে।
কিন্তু বাড়িটা দেখতে পাচ্ছি না কেন।এত অন্ধকার। দরমার বাড়িটা এখন একতাল অন্ধকার।
জনহীন মাঠে নতুন কবরখানা। অজানা মড়কে মৃতেরা শান্তিতে শুয়ে আছে।
দরমার বাড়িটা কোথায়। আশপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ কোথাও নেই।
প্রতাপ নেই। নেই রাঙচিতা।নেই সাইকেল।
অন্ধকারের ওই বাড়িটায় অনেক পাখি একই বৃত্তে উড়ছে।বেরোতে পারছে না। ওদের ডাক শোনা যাচ্ছে না। শুধু নিঃশব্দ ওড়াউড়ি করছে জমাট অন্ধকারের ঘরে।
দূরে অনেক দূরে আগুনে পুড়ছে শব।শিখা আকাশ ছুঁয়েছে।
আমি একা একা দাঁড়িয়ে ভাবি কৃষ্ণার কথা।শীতল হাওয়া দেয়।আমিও এক অন্ধকার বৃত্তে বন্দী হয়ে অকারণ উড়তে থাকি মথ হয়ে।
হঠাৎ দেখতে পাই
আকাশ থেকে বিরাট বলের মত চাঁদটা নেমে আসছে আমার দিকে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।