Cafe কলামে – আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব – ৩১)

বিবাহঃ নারী পুরুষের যৌনমিলনের অনুমতি? – ২৩

গত ২৩শে জুন,খবরে প্রকাশিত, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan) ঘোষণা করেছেন, একজন নারীর মৃত্যুর পরে,কেরালার যৌতুক হয়রানির জন্য হেল্পলাইন গন্ডগোল দেখে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঘোষণা করেন, ‘বিবাহ ব্যবস্থার সংস্কার করা দরকার’।
মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে যৌতুক প্রথার আচরণের বিরুদ্ধে জনগণকে ‘অবিচল অবস্থান’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২১শে জুন ২০২১,সোমবার কেরালার কোল্লাম জেলার সস্তামকোটার (Sasthamkotta in Kerala’s Kollam district )কাছে একটি ২৪ বছর বয়সী মহিলাকে মৃত অবস্থায় মহিলার স্বামীর বাসায় পাওয়া গেছে, মহিলার পরিবারের অভিযোগ, যৌতুক হয়রানির পরিণতিতে সে আত্মহত্যা করেছে।
তিনি টুইটারে টুইট করেছেনঃAs a society, we need to reform the prevailing marriage system. Marriage must not be a pompous show of the family’s social status and wealth. Parents have to realise that the barbaric dowry system degrades our daughters as commodities. We must treat them better, as human beings.

একটি সমাজ হিসাবে আমাদের প্রচলিত বিবাহ ব্যবস্থার সংস্কার করা দরকার। বিবাহ অবশ্যই পরিবারের সামাজিক মর্যাদাবান এবং ঐশ্বর্যের একটি আড়ম্বরপূর্ণ শো হওয়া উচিত নয়। পিতামাতাকে বুঝতে হবে যে বর্বর যৌতুক ব্যবস্থা আমাদের মেয়েদের পণ্য হিসাবে দেখে। মানুষ হিসাবে আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে আরও ভাল আচরণ করা উচিত।
এখানে, কিছু বিতর্ক রয়েছে। কিছু প্রাচীন পন্থী এর বিরোধিতা করবেন।তারা বিয়ে প্রথা পাল্টাতে চাইবেননা। কিন্তু সমাজ সময়ের চাকার মত ক্রমশঃ ঘুরে। পথ পরিক্রমা করে। আজ অবধি কোন সমাজই নিশ্চল নয়। সুতরাং সামাজিক সমস্যা সমাধানে, বিয়ের প্রথা সংস্কার বা আমুল নতুনের দরকার।
যৌতুক প্রথা পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে ভিন্ন রকম। কোন স্থানে বিয়ে করার জন্য কনের বাবাকে কনের মূল্য দিতে হয়। আমেরিকান অ্যান্থ্রপলজিস্ট বই থেকেঃ
“BRIDEWEALTH” vs. “BRIDEPRICE
The term [brideprice] out of ethnological literature since at best it emphasizes only one of the functions of this wealth, an economic one, to the exclusion of other important social functions; and since, at worst, it encourages the layman to think that “price” used in this context is synonymous with “purchase” in common English parlance. Hence we find people believing that wives are bought and sold in Africa in much the same manner as commodities are bought and sold in European markets [Evans-Pritchard 1931:36]

Bridewealth paid at marriage has different functions in different societies and may have several in the same society: to indemnify the girl’s family for the loss of her services, as an earnest of good intentions on the part of the groom and his family, to solidify the new affinal bonds created by marriage, and to legitimize children born to the union.
Bridewealth paid at marriage has different functions in different societies and may have several in the same society: to indemnify the girl’s family for the loss of her services, as an earnest of good intentions on the part of the groom and his family, to solidify the new affinal bonds created by marriage, and to legitimize children born to the union.
(734 American Anthropologist [68, 19661)
এসব পড়লে বোঝা যায় আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া- অর্থাৎ পৃথিবীর সর্বত্রই বিয়ের প্রথায় টাকা পয়সার একটা লেনদেন আছে। সরাসরি টাকার লেনদেন দরিদ্র অঞ্চলে ঘটেনা, সেখানে ছাগল, গরু বা জমি জমা হাত বদল হয়। কনের বাবাকে দিতে হয় কারণ কনে বাপের বাড়িতে একটা পরিষেবা দিত, বিয়ের ফলে কনের বাবার সেই পরিষেবা হারাবে, মানে এটা তার ক্ষতি, সেই ক্ষতি পূরণের জন্য মেয়ের বাবাকে যৌতুক দিতে হয়।
আর এই প্রথা অতিপ্রাচীন। খ্রীষ্টপূর্ব ব্যবিলনের রাজা হামুরাবির (King Hammurabi of Babylon 1755–1750 BC) অনুশাসনেও এসব লেনদেনের কথা আছে। (উইকিপিডিয়া)
এসব আদিম ঋণ প্রথা। বিনিময় প্রথা।The myth of barter — Primordial debts — Cruelty and redemption নিষ্ঠুরতা এবং মুক্তি – অর্থনৈতিক সম্পর্কের নৈতিক ভিত্তিতে – লিঙ্গ বিবাদ এবং মৃত্যুর সাথে খেলা Games with sex and death – Honor killing and degradation – সম্মান এবং অবক্ষয়, বা, সমসাময়িক সভ্যতার ভিত্তিতে। দেখা যায়, এই যৌতুকের কারণে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্নপ্রান্তে হয় বরকে মারা হয়েছে নয়ত মরেছে নয় কনেকে।
ভারতে এই প্রভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উঠে গেছে। ছেলে মেয়ে পড়াশুনার শেষে নিজেরাই বিয়ে করছে।
এইসব ধরণের আধুনিক চিন্তা, মহিলাদের জন্য, মহিলাকে বাঁচাবার জন্য, বা মহিলা হলে তাকে তার ভুল থেকেও মুক্তি দেবার জন্য, সারা পৃথিবীতে একটা প্রবণতা গত ১০০ বছর ধরে। ধরা যেতে পারে, রাশিয়ার কমিউনিস্ট বিপ্লবের সময় থেকে (১৯১৭ সাল)। এটা অতি লজ্জা ও কলঙ্ক জনিত শতাব্দী, যেখানে পুরুষের জীবনের দামে মহিলাকে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতি প্রাচীন কাল থেকে, বিয়ের পরই স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানা পেয়ে যায়। স্বামীর মা বাবা, ভাইবোন আত্মীয়স্বজন থাকে। তাদের সবাইকে বর্জন করে স্ত্রী রাতারাতি বিয়ের প্রথায় রাজার রাজ্যপাটের মালিক হয়ে যায়।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের, কাছে এই প্রথাটা বর্বর মনে হয়নি। বা বর্বর খরপোষ দেওয়া প্রথা বর্বর মনে হয়নি। অবশ্য সাধারণ মানুষ আর কাঠের পুতুল এক। জড়পদার্থ। পৃথিবীতে ভন্ডামি প্রচুর একজনকে পাইয়ে দেওয়া হয়, তার পর বলা হয় এটা ন্যায় বিচার।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।