• Uncategorized
  • 0

গদ্য বোলো না তে মৃদুল শ্রীমানী

টুনি আর বুনি আর ভ‍্যাকসিন

(একটি কাল্পনিক কথোপকথন।)

টুনি: হ‍্যাঁ রে বুনি, শুনছিস, ভ‍্যাকসিন নিয়ে কি সব হচ্ছে!
বুনি: শুনব না কেন, না শুনে উপায় আছে! কানে গজাল গুঁজে শোনাচ্ছে!
টুনি: আহা হা, অমন করে বলছিস কেন, একটা এত বড় কাণ্ড হল, তো জানতে হবে না!
বুনি: জেনে আর কি করব বল্, আমার মতো সাধারণ মানুষের তো পড়ে পড়ে মার খাওয়া ছাড়া গতি নেই!
টুনি: শুনেছিস, লোকটা না কি বাগড়ি মার্কেট থেকে ভ‍্যাকসিন কিনেছিল!
বুনি: তা ভ‍্যাকসিন দিয়েছে যখন, কোথাও থেকে না কোথাও থেকে পেয়েছে। সে বাগড়ি মার্কেট হোক, আর কোলে মার্কেট!
টু: ধ‍্যুস, কি যে বলিস না! কোলে মার্কেটে ওষুধ পাওয়া যায়?
বু: গেলেই বা কে বাধা দিচ্ছে! হোটেলে যদি ভাগাড় থেকে মরা কুকুর বিড়াল তুলে এনে রেঁধে দিতে পারে… কে যে কার কোলে বসে দোলে!
টু: তোর যেন কি কথায় কি কথা! হোটেলে গিয়ে মানুষ খায় নিজের শখে। ভ‍্যাকসিন নিতে যায় লোকে প্রাণের দায়ে। সে নিয়ে ভাবব না বুঝি!
বু: আমার তো ভ‍্যাকসিন নিতে ভীষণ ভয় করে। আর আমার ছোট কাকিমা। সে আবার বাচ্চা পেটে আসার পর ভ‍্যাকসিন নিতে হবে, সেই ভয়ে আগের দিন সারা রাত কেঁদেছিল।
টু: সে কি রে! বাচ্চা হবার আগে ভ‍্যাকসিন নিতে হবে না! কাঁদলে চলে?
বু: না গো, তিনি এখন অন‍্য মানুষ। তিনি এখন নিজেই মায়েদের বোঝাতে যান, ওরে তোরা ভ‍্যাকসিন নে। কতলোক পালটি খেল!
টু: জানিস তো, ওই লোকটা না কি পার্টির বড় বড় সব কত্তাব‍্যক্তিদের সাথে ছবি তুলেছিল!
বু: তুই যেন কি! আজকাল ছবি তোলাটা কোনো ব‍্যাপার! হোটেলে খাচ্ছে, প্লেটের খাবারের ছবি তুলে পোস্ট করছে। এখন লোকের আর কোনো কাজ আছে? খালি ইয়ে করার ছবিটা পোস্টাতে বাকি আছে।
টু: না না, হালকা ভাবে নিস না। দশদিন ধরে ভ‍্যাকসিন দিচ্ছিল। মিমিটা চিৎকার চ‍্যাঁচামেচি জুড়ল, তাই তো পাঁচকান হল!
বু: তো পাঁচকান হয়ে আর লাভ কি! কান ধরার অধিকার এই রাজ‍্যে আছে একজনেরই। তিনি সবাইকে কান ধরে ওঠাচ্ছেন, আর বসাচ্ছেন।
টু: তা তাঁর দয়াতেই তো আমরা টিঁকে আছি। তিনি না দিলে আমরা যেতাম কোথায়!
বু: বাজে বকিস না তো! যা খরচ হচ্ছে, সব বুঝি ওর টাকা? আমরা ট‍্যাকসো দিই না যেন!
টু: আমি তো ভগবানের কথা বলছি।
বু: তাই বল্। ভগবান সব ওপর থেকে দেখছে, আর ফ‍্যাক ফ‍্যাক করে হাসচে।
টু: কেন, ভগবান হাসবে কেন?
বু: ভগবান বলচে, রোড শো করেছিলি না? মদের দোকানে হৈ হৈ করে বোতল কিনতে গিয়েছিলি না, দ‍্যাখ, কেমন লাগে।
টু: সে বাদ দে। এখন এই ভেজাল ভ‍্যাকসিনের কি হবে?
বু: কি আবার হবে! খুব বেশি হলে গোটা কতক আমলার চাকরি যাবে। হুঁ হুঁ বাওয়া, সত‍্যিকারের কিচ্ছু হবে না। নিয‍্যস বলছি।
টু: সত‍্যি, সারদা কাণ্ডের পর সুদীপ্ত দেবযানী দুটোকে জেলে পুরল, তারপর আর কি, সে আর জানা যায় না। ওরা কি একাই লুটেছে!
বু: আমার বর তো বলে তদন্ত মানে তার অন্ত। মানে ধামাচাপা।
টু: আচ্ছা, ভ‍্যাকসিন বলে কি জিনিস লোকের শরীরে ঢোকাল, তারা সব এখন কেমন আছে, কেউ খবর নিচ্ছে?
বু: সেই জানিস তো, আমার পিসির বাড়ি বেহালায়, অনেক দিন আগে, তখন টেপফ্রক পরি, তখন নাকি ভেজাল তেলের জন‍্য অনেক লোকের হাত পা পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল।
টু: জানিস, দুধেও নাকি যাচ্ছেতাই সব ভেজাল দেয়। ডিটারজেন্ট পর্যন্ত মেশায়। পরীক্ষা হয়ে ধরা পড়ে। কিন্তু সেই দুধ ঘুরপথে ঠিক বাজারে আসে।
বু: মিষ্টিতেও না কি বিষাক্ত সব রঙ মেশায়। মেটানিল ইয়োলো।
টু: তার জন‍্যে মিষ্টি খাওয়া কেউ ছেড়েছে? উপরন্তু লকডাউনে মিষ্টির দোকান কত বাড়তি সুবিধে পেয়েছে।
বু: ফল তো কারবাইডে পাকায়। ভেজালে ভরা দেশ। ব‍্যাবসাদারেরা সব কিনে রেখেছে।
টু: তা আর নয়! এই একটা লোক ভোটে দাঁড়াল। জিতল। ও মা, পরের দিন উলটো দলের লোক হল। এমন ভোটের মানে কি?
বু: উলটো দল আবার কি? তাসের এপিঠ ওপিঠ। এ ঘর ওঘর যাওয়া আসার মতো ব‍্যাপার।
টু: জানিস, নন্দীগ্রামের কেসটাতেও ভেজাল ছিল।
বু: বলিস না, বলিস না, দেওয়ালের‌ও কান আছে।
টু: না, বলবে না! যা কিছু বলবে শুধু তুমিই বলবে। আর আমরা সব সোনামুখ করে শুনে যাব।
বু: তা আর শুনবে না? বলি চাঁদির জুতো মেরে সব কটাকে কিনে রেখেছেন।
টু: না না, তা আর হচ্ছে না। হাইকোর্টে বিচারপতি এখনো ঠিক আছে।
বু: তাকে তো বলেছে, তোর কোর্টে মামলা করবো না।
টু: সে কি রে! বিচারককে তুইতোকারি!
বু: ও মা! বিচারককে তুইতোকারি করবে না তো কাকে করবে! আমি নিজের কানে শুনেছি, অমিতাভ লালা, বাংলা ছেড়ে পালা, এইসব বলত!
টু: অ, তাই বল্। সে তো অন‍্যদল।
বু: না গো, সব এক দল। ইয়ের এপিঠ ওপিঠ।
টু: যাঃ, তুই যে কিসব বলিস্ না। আচ্ছা, রাখি। আমার কত্তা এসে গেছে। একখুনি ফরমাশ শুরু হল বলে।
বু: আমরা সবাই বোবা, রাণী তোমার দারুণ রাজত্বে,
ন‌ইলে মোরা তাসের দেশে এলাম কি কত্তে!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।