• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব – ৪)

কলকাতার ছড়া 

বাবু কৃষ্ণকান্ত নন্দীর কথা আগের পর্বেই বলেছি। কাশিমবাজারে তাঁর ছিল বিখ্যাত রেশমের ব্যবসা। বাংলার অভিজাত সমাজে তাঁর তখন খুবই নামডাক। লোকে তাঁকে কান্তবাবু বলেই চিনতেন। প্রথম দিকে মুদি ব্যবসায়ী হবার সুবাদে কান্তমুদি নামেও চিনতেন বহুজন। ধারে ভারে তাঁর মত বাবুরা তখন কলকাতার বেশ পরিচিত মুখ। কলকাতার প্রথম ব্ল্যাক জমিদার গোবিন্দরাম মিত্তির বা টাকার কুমীর নকু ধরের মতোই তার হাঁকডাক। এমনকি স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস সাহেব তাঁকে ইংরেজ কোম্পানির বেনিয়া নিযুক্ত করেছিলেন। নবাব সিরাজ কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ আক্রমণ করলে এই কান্তমুদিই তাঁকে রক্ষা করেন। সেই উপকার হেস্টিংস ভোলেন কিকরে। ফলতায় লুকিয়ে থাকার দিনগুলোতেও তাঁর উপকার ভোলার নয়। কলকাতা দাপিয়ে বেড়ানো ইংরেজ মুরুব্বিদের যে এমনভাবে মুখ লুকিয়ে আত্মগোপন করে থাকতে হবে তা কি আর কখনও কেউ ভেবেছে? তারমধ্যে প্রায় মহামারীর মত মৃত্যু। কোম্পানির চাকরি নিয়ে জাহাজে চড়ে কলকাতায় নেমেছেন আর তারপর রাতও কাটেনি এমনও প্রচুর আছে। নয় অজানা কালাজ্বর অথবা ম্যালেরিয়া, ইংরেজ সাহেবদের এইসব অজানা শত্রুদের থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বহু সময় লেগে গেছিল। সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরস্থানে আর জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ালে নতুন জায়গার খোঁজ পর্যন্ত করতে হয় তাঁদের। তারপরেই খোলা হয় নর্থ পার্ক স্ট্রিট কবর (বর্তমানে যেখানে অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ স্কুল)। এইসব ঘোরতর বিপদের মুহূর্তে কলকাতার ধনী বাবুদের আনুকূল্য না লাভ করলে ইংরেজ বেনিয়ারা কতদিন এদেশে টিকতে পারতেন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে বৈকি। শোভাবাজারের রাজা স্বয়ং নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুরও প্রথম দিকে ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংসের পার্সি শিক্ষক। এমনকি শোনা যায় সিরাজদ্দৌলা কলকাতায় যুদ্ধের জন্য ঘাঁটি করে বসলে তিনিই নাকি কোম্পানির তরফে মধ্যস্ততার প্রস্তাব নিয়ে যান নবাবের কাছে। পলাশীর যুদ্ধের পরেপরেই তিনি ইংরেজ আনুকুল্যে নির্মাণ করেন শোভাবাজার রাজবাড়ি এবং লর্ড ক্লাইভের উপস্থিতিতে শুরু করেন দুর্গোৎসব। এমনই ছিল তখনকার বাবুয়ানার গল্প। এইসব বাবুয়ানি নিয়ে কলকাতা শহরের আমমানুষের মুখে মুখে ফিরত বহু প্রচলিত ছড়া। যেমন এহেন কান্তবাবুর বাবুয়ানা নিয়ে এই ছড়া প্রচলিত ছিল মুখে মুখে –
“কান্তবাবু হয়ে কাবু হাবুডুবু খায়
তুড়ুং লাগাতে তায় ক্লেভারিং যায়
হেষ্টিংস যাহার হাতে তারে করে কাবু
বাংলায় এমন লোক আছে কে হে বাবু?”

আবার কখনো সৌখিন বাবুদের দুর্গাপুজো উপলক্ষে বুলবুলির লড়াই বা এইধরনের মোচ্ছব নিয়েও এমন ছড়া প্রচলিত ছিল –
“দুর্গাপূজা ঘন্টা নেড়ে খোকা হাল বাজে ঢাক
কাকাতুয়া ছেড়ে দিয়ে খাঁচায় পুরলে কিনা কাক
বিষয় কর্ম গোল্লায় গেল লড়িয়ে কেবল বুলবুলি
প্রকৃতি বিকৃত হায় হায়, মারা গেল লোকগুলি।”

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।