আহিরীটোলার ঘনবসতি আর ভৌতিক বাড়িগুলো আরো ঝুঁকে পড়েছে বৃষ্টির সন্ধ্যায়।একটা সরু গলি থেকে আরেকটা এভাবে এগুলি সেগুলি পেরিয়ে একটা বাড়ির শ্যাওলা ঢাকা ইঁটখসা দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে মিসকল দেয় কালো বর্ষাতি পরা আগন্তুক।নিরবে দরজা ফাঁক হতেই লোকটা ঢুকে পড়ে ভেতরে।
ঠিক একই সময়ে অঝোর বৃষ্টিতে চেক শার্ট আর ময়লা জিন্স পরা আরেকটি লোক পা রাখল কলকাতা স্টেশনে।লোকটার দোহারা গরন।চোখে পড়ার মতো কিছু নেই যদি না চোখাচোখি হয়। ভিড়ের মধ্যে সেঁধিয়ে যায় লোকটা।
সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের অরিন্দম মাইতি লোকটা কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না আর যে কাজটা মাথায় ঢোকে সেটা নিয়ে আশপাশের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে ছাড়ে। কালীকৃষ্ণ মহন্ত এইকথাই ভাবছিল। অরুণ তলাপাত্র বলেই ফেলল।আরে স্যর এই কলকাতা হাওড়া বেল্ট ক্রাইমের অসীম সমুদ্র। কটা ধরবেন স্যর, আর কীভাবেই বা।আমরা সাইবার ক্রাইম নিয়ে পড়াশোনা করে ফেল মেরে যাচ্ছি এদের কেরামতি দেখে। ভুরি ভুরি সিম পথে ঘাটে বিক্রি হচ্ছে। বেক আইডি আর হাজারখানেক রিপোর্ট। খড়ের মধ্যে ছুঁচ খুঁজছেন স্যর।
অরিন্দম ঘন ঘন মাথা নাড়ে। মধ্য বয়স।মাথার মাঝখান হালকা হয়েছে।রং ফর্সা। ” না হে , এ গভীর জলের মাছ এবং কলকাতায় নতুন মনে হচ্ছে এর কাজকর্ম দেখে “।
একসঙ্গে অনেকগুলো আলাদা কেস কিন্তু কোথায় যেন একটা মিল রয়েছে।
কালীকৃষ্ণ বলে , যেমন ধরুন এই যে রঞ্জিত উপাধ্যায় নামে সোসাল মিডিয়ায় যে রয়েছে সে আই টি আই এর প্রফেসর বলেছে নিজেকে খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে কস্মিনকালেও আই টি আই তে এই নামের কেউ ছিলো না ফ্যাকাল্টি তে। “একই ফেক আইডি ব্যবহার করে অন্য সোসাল মিডিয়াতে লোকটি ফাণ্ড তুলছে অনাথ স্পেশালি চ্যালেঞ্জ শিশুর জন্য “, যোগ করে তলাপাত্র এবং ওয়াটস্যাপ এ তার কিডনি ফেল করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইমের ক্ষেত্রে এগুলো বেশ প্রচলিত হলেও এই কেসটায় একটা নতুনত্ব আছে।
প্রোফাইল ও কথপোকথনের ধারা একেবারে একাডেমিক এবং সুভদ্র। কিছুদিন কথা বলার পর দু একটি ছোটো ছোটো উপকার। বিশেষত গনিত ও বিজ্ঞানে বেশ পারদর্শী এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক।
অথচ কেউই তাকে দেখেনি সব ট্রানসাক্শন ব্যাঙ্কে র মাধ্যমে।সন্দেহের অবকাশ কম সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী সাধারন মানুষের কাছে।
খুব ইম্প্রেসিভ।
-“হ্যাঁ আর এই ফেক আইডি তে এইসব যে করছে সে একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ে করছে।”
স্যর যে ব্যঙ্ক একাউন্টে টাকা যাচ্ছে তার অস্তিত্ব নেই তদন্ত করতে গেলে দেখা যাচ্ছে।
অরিন্দম গম্ভীর। “আর তারপর আর একটা ফেক আইডি, আরেকটা নতুন আইএফএ সি কোড অন্য ব্যাঙ্কে…
খুব দ্রুত তুলে নিচ্ছে টাকা।
স্যর আপনার কেন মনে হচ্ছে এটা একই লোকের কাজ ?
–“গনিত। সিম্পল গনিত তলাপাত্র “।
দেবলীনা আর রজত মিলে মোহিনীমোহনের ব্যবসার একটা পরিষ্কার হিসেব করে ফেলে। এবং আয় ও ব্যয়ের অসঙ্গতি রীতিমতো চমকে দেবার মত একটি ব্লকের একটি গ্রাম কাম মফস্বল ব্যবসায়ীর পক্ষে।