এপ্পার সাই মুওভ : তবুও পৃথিবী ঘুরছে।
(বাইশে জুন, ২০২১)
মহাবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গালিলির বিচার চলছে। বিচারকর্তা খ্রীস্টীয় চার্চের ধর্মনেতারা। ১৬৩২ সালে বেরিয়েছে গ্যালিলিওর বিখ্যাত পুস্তক “ডায়ালগ”। পুরো নামটা বাংলা ভাষায় বললে দাঁড়ায়, “দুটি প্রধান বিশ্বব্যবস্থা বিষয়ে কথোপকথন”। বইটি বেরোনো মাত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কথোপকথনের ঢঙে লেখা এই ডায়ালগ। তিনটি চরিত্র কথা বলছেন। প্রথমজন সালভিয়াতি, কোপার্নিকাসের মতাবলম্বী একজন বৈজ্ঞানিক, দ্বিতীয় জন সাগরেদো, একজন নিরপেক্ষ বুদ্ধিদীপ্ত হাসিখুশি দার্শনিক, আর তিন নম্বর ব্যক্তিটির নাম সিম্পলিসিও। তিনি একজন গোঁড়া আরিস্ততলপন্থী লোক।
ডায়ালগে প্রবল উৎসাহ নিয়ে কোপার্নিকাসের মতবাদের জয় ঘোষণা করা হয়েছে। আর আরিস্ততলের মত, যা কিনা চার্চের ধ্যানধারণার সঙ্গে খাপে খাপে মিলে যায়, তাকে নিয়ে কৌতুকমিশ্রিত ব্যঙ্গ করা হয়েছে। ডায়ালগ তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ধর্মধ্বজীদের খুব বিরক্তি হয়েছে। মেলকয়ার ইনকোফার, আগসতিনো ওরেগি, আর জ্যাকেরিয়া পাসকুয়ালিগো, এই তিনজনকে নিয়ে তৈরি একটি অনুসন্ধান কমিটি ডায়ালগ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে চার্চের বিচারালয়কে জানালেন, বইটি কট্টরভাবে কোপার্নিকাসের মতবাদের প্রোপাগান্ডা করেছে। ধর্মীয় আদালতের বিচারে ডায়ালগের লেখক গ্যালিলিও গালিলি আরিস্ততলের মতের বিরুদ্ধতা করায়, ও নিষিদ্ধ হয়ে থাকা কোপার্নিকাসের মতবাদ সোল্লাসে প্রচার করায় গ্যালিলিও দোষী সাব্যস্ত হলেন। তারিখটা আজকের মতোই একটা বাইশে জুন। সাল ১৬৩৩। মাঝখানে কেটে গেছে ৩৮৮ বছর। মধ্যযুগে বিজ্ঞান গবেষণার প্রতি ধর্মধ্বজীদের প্রচণ্ড বিরুদ্ধতা ছিল। বিজ্ঞানের প্রতিটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ধর্মীয় পুঁথি ও কেতাবের বাণীগুলিকে নয়ছয় করে দিচ্ছিল। আর তাতেই ধর্মধ্বজীরা বিপন্ন বোধ করছিলেন। গ্যালিলিও গালিলি ( ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৫৬৪ – ০৮ জানুয়ারি, ১৬৪২) তাঁর গবেষণা আর আবিষ্কারের জন্য চার্চের কুনজরে ছিলেন ১৬০৯ থেকেই। আজ থেকে ৩৮৮ বছর আগে চার্চের আদালত গ্যালিলিওকে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। বলতে বাধ্য করে যে, আমি যা জানি বুঝি সব ভুল। সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সে বৃদ্ধ ও শারীরিক ভাবে দুর্বল গ্যালিলিও চার্চের ধর্মীয় আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হন। মনে রাখতে হবে, সাতাত্তর বছর বয়সে গ্যালিলিওর মৃত্যু হয়। প্রবীণ বয়সে তাঁর ইচ্ছা ছিল আরো কিছু গবেষণা করেন। তাই ১৬৩৩ সালের এইরকম একটা বাইশে জুন তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলে তিনি ক্ষমা চেয়ে ধারাবাহিক মানসিক এমনকি শারীরিক অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে চেয়ে শান্তিতে গবেষণা করার সুযোগ খুঁজেছিলেন। কথিত আছে, ওইরকম ক্ষমা চাইবার পরমুহূর্তেই প্রবীণ বিজ্ঞানী বিড়বিড় করে বলেছিলেন, এপ্পার সাই মুওভ – তবুও পৃথিবী ঘুরছে।
আমরা জানি যে, হান্স লিপারসে নামে এক চশমার কারিগর একটা চোঙের দুদিকে পরকলা বা লেন্স বসিয়ে দূরের জিনিসকে কাছে দেখার একটা সরঞ্জাম তৈরি করেন। ধনী পরজীবী পরিবারের বিলাসী সদস্যদের অফুরন্ত ফাঁকা সময়ে বিনোদন ও খেয়াল মেটানোর কাজে এই সরঞ্জামটির আদর হয়েছিল। এই সরঞ্জামের বার্তাটুকু গ্যালিলিওর কানে পৌঁছেছিল, এবং তার উপর ভিত্তি করেই নিজের গাণিতিক প্রতিভা ও পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বৈজ্ঞানিক টেলিস্কোপ বানালেন। বিজ্ঞানের নিয়মের ভিত্তিতে ফোকাস দূরত্বকে মাথায় রেখে, এই জিনিসটি তৈরি হওয়ায়, তা আর নিছক সরঞ্জাম মাত্র ছিল না। তা হয়ে উঠল যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক যন্ত্র। হান্স লিপারসে তাঁর সরঞ্জাম বানিয়েছিলেন ১৬০৮ সাল নাগাদ। আর পরের বছরেই ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও যে যন্ত্র বানালেন, তাতে প্রথম দিকে তিনগুণ বড় করে দেখা গেলেও, অল্প কয়েকটি যন্ত্র তৈরির পরেই কোনো বস্তুকে আট থেকে নয়গুণ বড় করে দেখাতে পারলেন। অচিরেই ত্রিশগুণ অবধি বড় করে দেখানোর টেলিস্কোপ তৈরি করলেন তিনি। আর শুধু যন্ত্র তৈরি করেই ক্ষান্ত দিলেন না, ওই যন্ত্র দিয়ে রীতিমতো আকাশ পর্যবেক্ষণে মেতে উঠলেন গ্যালিলিও। অবশ্য ১৬০১ থেকেই তিনি জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে জোরদার চর্চা করছিলেন। আর টেলিস্কোপ বাগিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণের নেশায় মশগুল হয়ে কী দেখছেন, তা নোটবইতে লিখে রাখছিলেন। ১৬১০ সালের মার্চ মাসে তিনি তাঁর আকাশ পর্যবেক্ষণের নির্যাসটুকু নিয়ে একটা ছোট বই লিখে ফেলে প্রকাশ করেছিলেন, যার নাম ছিল সাইডেরিয়াস নানসিয়াস বা নক্ষত্রের আলোকদূত। ১৬০৯ সালের ত্রিশ নভেম্বর গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন চাঁদ আদৌ একটি নিটোল, অপার্থিব মোহময়ী সৌন্দর্যগোলক নয়। চাঁদ রীতিমতো কালো, শক্ত, এবড়ো খেবড়ো, পাথুরে জিনিস। ১৬১০ সালের ৭ জানুয়ারি তারিখে তিনি বৃহস্পতি গ্রহকে ঘিরে ঘুরতে থাকা তিনটি উপগ্রহ দেখেন। এই তিনটির নাম হল আইও, ক্যালিস্টো ও ইওরোপা। জানুয়ারির ১০ তারিখে দেখলেন ওই তিনটির দুটি চোখে পড়ছে, আরেকটিকে দেখা যাচ্ছে না। গ্যালিলিও বেশ বুঝতে পারলেন, সেই জ্যোতিষ্কটি বৃহস্পতির আড়ালে চলে গেছে। ১৩ জানুয়ারি তিনি দেখলেন বৃহস্পতির সবচাইতে বড় উপগ্রহকে, নাম তার গ্যানিমিড। বৃহস্পতির এই চারটি উপগ্রহকে গ্যালিলিওর চারি চন্দ্র বলা হয়।
ওই যে চারটি উপগ্রহকে তিনি বৃহস্পতিকে ঘিরে ঘুরতে দেখলেন, ওতেই সমাজ জীবনে একটা বিরাট পরিবর্তনের সূচনা হল। দার্শনিকদের মহাগুরু আরিস্ততল বলেছিলেন, পৃথিবী স্থির এবং তাকে কেন্দ্র করে আকাশমণ্ডলে তাবৎ জ্যোতিষ্ক এমনকি সূর্যও ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাইবেলীয় মতের সঙ্গে আরিস্ততলীয় মত বেশ খাপ খেয়েও গিয়েছিল। কিন্তু গ্যালিলিওর পর্যবেক্ষণ এবং তা থেকে তাঁর সিদ্ধান্ত আরিস্ততলীয় মত তথা সমসময়ে সামাজিক ভাবে প্রচলিত মতকে বিপন্ন করে দিল। ১৬১০ এর সেপ্টেম্বরে গ্যালিলিও শুক্রগ্রহের কলা পর্যবেক্ষণ করলেন। আমরা পৃথিবী থেকে সহজেই চাঁদের কলা লক্ষ্য করি। অমাবস্যায় চাঁদ দেখা যায় না। এবং তারপর প্রতি রাত্রে একটু একটু করে চাঁদ বর্ধিত আকারে প্রকাশিত হতে হতে পূর্ণিমায় চাঁদ পূর্ণাঙ্গ শরীরে আকাশে দেখা দেয়। শুক্রগ্রহেও এমনটা হওয়া উচিত বলে নিকোলাস কোপার্নিকাস বলে রেখেছিলেন। কিন্তু কোপার্নিকাসের হাতে টেলিস্কোপ ছিল না। শুধুমাত্র সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্রস্থলে ধারণা করে কোপার্নিকাস ওই মতপ্রকাশ করেছিলেন। এই মত যে যথার্থ, তা গ্যালিলিওর টেলিস্কোপে প্রমাণ হল। গ্যালিলিও বেশ বুঝে গেলেন, আরিস্ততল ও টলেমির মত সঠিক নয়। সঠিক হল পাইথাগোরাসের মতটি। গ্রীক মহাপণ্ডিত পাইথাগোরাসের জন্ম হয়েছিল খ্রীস্টজন্মের ৫৭০ বৎসর আগে। পঁচাত্তর বৎসর বয়সে ৪৯৫ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। পাইথাগোরাস কিন্তু অতোদিন আগেই বলেছেন সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ঘুরছে। পাইথাগোরাসের এই মত নিকোলাস কোপার্নিকাসের মতো বিজ্ঞান সাধককেও প্রাণিত করেছিল। কোপার্নিকাসের অরবিয়াম বইয়ের পাতায় সে স্বীকৃতি আছে। এইবার, সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ সঠিক, না, পুরাকথিত ভূকেন্দ্রিক মতবাদ সঠিক, তাই নিয়ে জোরদার তর্ক বাধল। চার্চের মতাবলম্বী কিছু জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যাঁরা ধর্মগ্রন্থের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং একই সাথে বিজ্ঞানও খানিকটা বুঝতেন, তাঁদেরকে নিজের পক্ষে আনার জন্য ১৬১১ খ্রীস্টাব্দে গ্যালিলিও রোম শহরে কলেজিয়াম রোমানাম- এ গিয়ে উপস্থিত হন। চার্চপন্থী জ্যোতির্বিদদের মধ্যে ক্রিস্তর গ্রিয়েনবার্গার গ্যালিলিওর চিন্তাপদ্ধতির প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হলেন। কিন্তু ওই পণ্ডিতদের নেতা ক্লদিয়া অ্যাকুয়াভিভা হুঁশিয়ারি দিলেন কোনোভাবেই যেন আরিস্ততলের মতকে খাটো না করা হয়। সেই সময়কালের সবচাইতে নামজাদা জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টোফার ক্লেভিয়াস কিছুতেই মানতে চাইলেন না যে, চাঁদের বুকেও পৃথিবীর মতোই পাহাড় ও খাদ বর্তমান। এই সব দেখেশুনে দুঃখপ্রকাশ করে গ্যালিলিও বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কেপলারকে চিঠি লিখে সব জানালেন। এইসব চলতে চলতে গ্রীক সাহিত্যে বিশেষজ্ঞ এক পণ্ডিত ও দর্শনের অধ্যাপক কোসিমো বসকাগলিয়া ১৬১৩ সালে ঈশ্বর ও দৈবী ক্ষমতার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের অভিযোগ আনলেন। ক্রমশঃ নানা মহল থেকে গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকানো শুরু হল। গ্যালিলিওর সুহৃদ বন্ধুরা তাঁকে পরামর্শ দিলেন, সামাজিক মতকে মান্যতা দিয়ে চুপ করে যেতে। এঁদের মধ্যে একজন ছিলেন পিয়েরো গুচ্চিয়ারদিনি। তিনি রোম শহরে টাসকানির রাজদূত ছিলেন। গ্যালিলিও তাঁকে পাত্তা দিলেন না।
১৬১৬ সালে খ্রীস্টধর্মের প্রতি অসম্মানের অভিযোগে ধর্মীয় আদালত গ্যালিলিওর বিচার করেন।
তার গোড়ার কথাটা হল, এই বিষয়ে গ্যালিলিও তাঁর অনুগামী অনুরাগী গুণগ্রাহী বন্ধু বেনেডিটো কাস্তেলিকে একটি পত্র লিখেছিলেন। সেটা ১৬১৩ সাল। ততদিনে কাস্তেলি খ্রীস্টীয় সাধু হয়েছেন, তিনি আবার গণিতের অধ্যাপকও ছিলেন। হয়েছিল কি, শিক্ষা সংস্কৃতির অনুরাগিণী অভিজাত রাজবালা ক্রিস্তিনা অফ ফ্লোরেন্স বেনেডিটো কাস্তেলির সাথে তর্ক জুড়ে বলেছিলেন, পৃথিবী ঘুরছে এটা বললে বাইবেলকে অস্বীকার করা হয়। সাধু কাস্তেলি গ্যালিলিওর গুণগ্রাহী ছিলেন বলে তিনি গ্যালিলিওর দৃষ্টিভঙ্গিটা তুলে ধরতে চান। কাস্তেলি যাতে জোরদার ভাবে তর্কটা চালাতে পারেন, সেজন্যই গ্যালিলিও কাস্তেলিকে চিঠি লিখে ব্যাপারটা বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন। এই চিঠিটা ছিল আট পাতার। গ্যালিলিওর এই চিঠিটা তখনো প্রকাশ না হলেও, সকলের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতেই তুলকালাম বেধে গিয়েছিল। এর বছর দুয়েক পরে ১৬১৫ সালে গ্যালিলিও ক্রিস্তিনা অফ ফ্লোরেন্স এর উদ্দেশে আরো বিশদে, আরো তথ্য দিয়ে, যুক্তিসমৃদ্ধ করে একটি চিঠি লেখেন। বিষয়গত ভাবে এই চিঠিটি কাস্তেলিকে লেখা চিঠির অনুরূপ হলেও এবারের চিঠিটি দাঁড়াল চল্লিশ পাতার। চিঠির আকারে লেখা হলেও ভেতরের গুণমানে ও চারিত্র্যে এটা একটা গবেষণা সন্দর্ভের মতোই ছিল। এই চিঠিটা অনেক পরে ছাপাও হয়েছিল। ততদিনে কুড়িটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তখন ১৬৩৬ সাল। ক্রিস্তিনাকে লেখা চিঠিটি ছেপে বেরোলো। বইটি ইতালীয় ও লাতিন, দুই ভাষাতেই ছাপা হয়েছিল। বইটি প্রকাশের সাথে সাথে খ্রীস্টীয় ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ সেটিকে নিষিদ্ধ করেন।
গ্যালিলিওর মতবাদ যে ধর্মীয় শাস্ত্রকে কতদূর ক্ষুণ্ন করে, তা দেখানোর জন্য পণ্ডিতদের একটি দলকে নিয়োগ করা হয়েছিল। এঁদেরকে কোয়ালিফায়ার বলা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৬১৬ তারিখে এই কোয়ালিফায়াররা সমবেত ভাবে চার্চ কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যালিলিওকে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্ট দেখেশুনে, ধর্মনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে, তদানীন্তন পোপ পঞ্চম পল রবার্ট বেলারমিনকে নির্দেশ দেন যে, গ্যালিলিওকে বুঝিয়ে বলতে, তিনি যেন এসব গবেষণা পরিত্যাগ করেন। সতর্ক করতে বলেন যে, যদি এই আদেশ গ্যালিলিও অমান্য করেন, তাহলে কঠিনতর সাজা দেওয়া হবে।
রবার্ট বেলারমিন ছিলেন সে যুগের সবচাইতে সম্মানিত ক্যাথলিক ধর্মনেতাদের অন্যতম। তিনি গ্যালিলিওকে সহানুভূতিপূর্বক ডেকে নিয়ে চার্চের মতে চলার পরামর্শ দিলেন। তারিখটা ছিল ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৬১৬। বেলারমিন তাঁর নিজের বাসভবনে গ্যালিলিওকে ডাকিয়ে এনে পোপের নির্দেশ বুঝিয়ে বললেন। বললেন যে পোপ চাইছেন না, গ্যালিলিও কোনোভাবেই যেন সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ আর চলমান পৃথিবী সংক্রান্ত নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করেন। কিন্তু গ্যালিলিও তাতে দমলেন না। বেলারমিন গ্যালিলিওকে বললেন, সৌরকেন্দ্রিক বিশ্ব মতবাদকে একটি নিছক কাল্পনিক বিষয় বলে ঘোষণা করতে। আরো বললেন যে, সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রচার করা মানে আগুন নিয়ে খেলা করা। তাতে শুধু যে ধর্মধ্বজী পণ্ডিতদের ক্ষেপিয়ে দেওয়া হবে তাই নয়, খ্রীস্টীয় ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করা হবে। বেলারমিন বললেন, সবাই জানে যে, পৃথিবী যে তাবৎ বিশ্বজগতের কেন্দ্রে, এটা শ্রীভগবান তাঁর শ্রীমুখে বলেছেন। বেলারমিন মধ্যস্থতা করতে চেয়ে বললেন, গ্যালিলিও যদি স্বীকার করেন যে, সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ সম্পূর্ণ কাল্পনিক, তাহলে ওই মতবাদ নিয়ে আলোচনা করতে তাঁর সমস্যা নেই। গ্যালিলিও কিন্তু বেলারমিনের এইসব সুভাষিত পরামর্শকে পাত্তা দিলেন না। তবে বেশ কিছুদিন ধরে এসব নিয়ে নিবৃত্ত থাকলেন।
মজার ব্যাপার হল, গ্যালিলিও তাঁর ছাত্রজীবনে পাদরি হতেই চেয়েছিলেন, অথচ তাঁকে প্রবীণ বয়সে চার্চের সঙ্গে প্রখর লড়াই লড়ে যেতে হল। ১৫৮০ সালে যখন তাঁর বছর ষোল বয়স, তখন তিনি মেডিক্যাল বিষয়ে পড়বেন বলে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। কিন্তু এক চার্চের দোলায়মান আলো তাঁর ভিতর থেকে বের করে আনল অন্যরকম একটা মানুষকে। গণিতে আকৃষ্ট হলেন তিনি। বছর পঁচিশ বয়সে ওই পিসা বিশ্ববিদ্যালয়েই গণিতের অধ্যাপক হলেন গ্যালিলিও। ১৫৯২ তে তিনি চলে এলেন পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৬১০ অবধি সেখানে পড়িয়েছেন জ্যামিতি, বলবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যা। আর এই জ্যোতির্বিদ্যাকে হাতে কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিদান করে তিনি একে জ্যোতির্বিজ্ঞান করে দিলেন। আজ আমরা গ্যালিলিওকে আধুনিক পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান ভাবনার পিতার সম্মান দিয়ে থাকি।
ওই যে তিনি টেলিস্কোপ বাগিয়ে হাতে কলমে চাঁদকে লক্ষ্য করলেন, ভাল করে ও নিখুঁত করে দেখবেন বলেই ক্রমাগত উন্নতি ঘটিয়ে চললেন টেলিস্কোপের, তারপর বৃহস্পতির চারিচন্দ্র দেখলেন, শুক্রের কলার হ্রাসবৃদ্ধি দেখলেন, এবং সেই দেখাটাকে গণিতের যুক্তি দিয়ে, বলবিদ্যার বাস্তবতা দিয়ে যাচাই করতে করতে নিঃসংশয়ে বুঝে গিয়েছিলেন। সেই বোঝার ফসলটাই হল “সাইডেরিয়াস নানসিয়াস” বইটি। সেটা ১৬১০। আর তাতেই চার্চের লোকেরা টের পেয়ে গিয়েছিলেন এই লোকটা আরিস্ততলীয় ভাবনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কোপার্নিকাসের ভাবনাকে বুকে নিয়ে মাথা তুলছে। গ্যালিলিওর আকাশবীক্ষণ চাঁদের কাব্যসুষমামণ্ডিত অলৌকিক বিভাকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে আনল। বৃহস্পতির চারিচন্দ্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভূকেন্দ্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি কতদূর দুর্বল, আর শুক্রের কলার হ্রাস বৃদ্ধি দেখিয়ে দিল শুক্রগ্রহ সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণশীল। এর প্রতিটিই টলেমির দুর্গে কামানের গোলার আঘাত। এরই ভিত্তিতে ১৬১৫ সালে ক্রিস্তিনা অফ ফ্লোরেন্স এর উদ্দেশে চিঠির আকারে লেখা চল্লিশ পাতার সন্দর্ভটি চার্চের লোকেদের ভীষণভাবে খেপিয়ে দিল। টেলিস্কোপ যখন আসে নি, তখনো গবেষক জ্যোতির্বিদগণ আকাশ দেখেছেন, গণনা করেছেন, ভেবেছেন যথেষ্ট। কিন্তু টেলিস্কোপের মাধ্যমে জ্যোতিষ্ক দেখার ক্ষেত্রে একটা গুণগত পরিবর্তন ঘটে গেল। যা বলছি, তা হাতে কলমে দেখিয়ে দিতে পারছি। তুমি যা বলছ, তা হাতে কলমে দেখাও। এই জিনিসটাই চার্চের লোকেদের বিপদে ফেলে দিল। রবার্ট বেলারমিনকে দিয়ে বলাতে হল, ওহে তুমি থামো। কোপার্নিকাসের মতবাদ নিয়ে টুঁ শব্দটিও কোরো না। এ যেন সেই প্রবাহণ রাজার সভায় বসে গার্গীকে হুমকি দিচ্ছেন যাজ্ঞবল্ক্য, চোপ্, আর একটাও প্রশ্ন তুলেছ কি তোমার কাটামুণ্ডু গড়াগড়ি যাবে। গ্যালিলিও ভাবলেন একটু চুপচাপ থাকা যাক। কিন্তু আলোকে তো মুঠির মধ্যে ধরে দমিয়ে রাখা যায় না। গ্যালিলিও বেলারমিনের তর্জনী শাসনে ভাবলেন, ক’বছর অন্য কিছু নিয়ে গবেষণা করি। সুসময় এলে দেখা যাবে। কিন্তু তিনটে বছর কাটল না, আবার একটা গোলমাল পেকে উঠল। কেননা, এসে পড়ল একটা ধূমকেতু। ওই ধূমকেতু নিয়ে বিতর্ক বেধে গেল ফাদার ওরাজিও গ্রাসির সঙ্গে। গ্রাসি কিন্তু যে সে লোক নন। তিনি জেসুইটদের কলেজিও রোমানোর গণিতের অধ্যাপক। কৃতবিদ্য ব্যক্তি। গ্যালিলিওও মূলতঃ গণিতের অধ্যাপক। দুই গণিতবিদের মধ্যে লাগল জোর লড়াই। সেটা ১৬১৯ সাল। গণিতবিদ হিসেবে তিনি ফাদার ওরাজিও গ্রাসির সঙ্গে যে মতবাদিক লড়াই চালিয়েছিলেন, তার সারাৎসার সুচারু যুক্তিবিন্যস্ত রূপে একটা বইতে তুলে ধরলেন গ্যালিলিও।
১৬১৯ সালে অধ্যাপক গ্রাসি একটা বই লেখেন লিব্রা অ্যাসট্রোনমিকা আক ফিলজফিকা। এরই পাল্টা বই লিখলেন গ্যালিলিও, দি অ্যাসায়ার। লাতিন নাম হল ইল স্যাগিয়াটোর। বই বেরোলো ১৬২৩ সালের অক্টোবরে। কিন্তু শুধু মাত্র একটা দ্বন্দ্ব যুদ্ধের স্মারক হয়ে থাকল না দি অ্যাসায়ার। বিজ্ঞান কি, এবং বিজ্ঞান কেন, কেমন ভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হয়, বৈজ্ঞানিকের দায়বদ্ধতা কি, এইসব গভীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গ্যালিলিও তাঁর মনের কথা উজাড় করে দিলেন এই বইতে। নিছক বিতর্কমূলক প্রবন্ধের সীমানা ছাড়িয়ে এ হয়ে উঠল একটা বৈজ্ঞানিক ম্যানিফেস্টো।
১৬২৩ সালে গ্যালিলিওর বন্ধু মাফিও বারবেরিনি খ্রীস্টীয় সমাজের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বভার পেলেন। তিনি পোপ অষ্টম আরবান হিসেবে নির্বাচিত হলেন। অষ্টম আরবান ছিলেন একজন পড়াশুনা জানা বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। তার উপর শিল্প কলা স্থাপত্য চর্চায় তাঁর অনুরাগ ছিল। এমনকি তিনি যুবা বয়সে গ্যালিলিওর জ্যোতির্বিদ্যা চর্চাকে স্বাগত সম্ভাষণ জানিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন। গ্যালিলিও তাঁর এই পুরোনো বন্ধুকে ধরলেন, যাতে তিনি স্বাধীন ভাবে কোপার্নিকাসের ভাবধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গবেষণা, লেখালেখি, আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন। সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বভাবনায় তাঁর চিন্তাকে যেন চার্চ বেড়ি না পরান। ওই ১৬২৩ এ প্রকাশিত “দি অ্যাসায়ার” বইটি তিনি পোপ অষ্টম আরবানকে উৎসর্গ করলেন। নিজের নামে বই উৎসর্গ হতে দেখে পোপ তো খুব খুশি হলেন। তিনি গ্যালিলিওর পাশে দাঁড়াবেন বলে আশ্বাস দিলেন। সুযোগ বুঝে পুরোনো সুহৃদকে গ্যালিলিও অনুরোধ করলেন নিকোলাস কোপার্নিকাসের অরবিয়াম বইটির উপর থেকে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। কোপার্নিকাসের অরবিয়াম এর উপর থেকেই যদি নিষেধাজ্ঞা কেটে যায়, তাহলে কোপার্নিকাসের তত্ত্ব নিয়ে কোনো আলোচনার উপরেই নিষেধাজ্ঞা থাকে না। কিন্তু পোপ অরবিয়ামের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে, গ্যালিলিওকে অনুরোধ করলেন একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কোপার্নিকাসের তত্ত্ব ও টলেমির তত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা লিখতে।
গ্যালিলিও ধর্মীয় নেতাদের সমাজপতিদের বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের মধ্যে বাইবেলকে অপমান করার কোনো উপাদান নেই। বাইবেল হল ধর্মবিশ্বাস ও নৈতিকতার সম্মাননীয় শাস্ত্র। কিন্তু এটা কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয়। কিন্তু গ্যালিলিওর পক্ষে আপস করা সম্ভব ছিল না। পোপ অষ্টম আরবান বন্ধুত্বের খাতিরে কোপার্নিকাসের মতবাদ ও টলেমির মতবাদ নিয়ে তাঁর যে মাপের নিরপেক্ষ আলোচনা চাইছিলেন, সেই তথাকথিত নিরপেক্ষ হওয়া গ্যালিলিওর পক্ষে সম্ভব ছিল না।
গ্যালিলিও বই লিখলেন ডায়ালগ। পুরো নামটা হল ডায়ালগ কনসারনিং দি টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেমস। কথোপকথনের ঢঙে লেখা বইটি প্রকাশ পাওয়া মাত্র তুমুল জনপ্রিয় হল। ১৬৩২ সালের বাইশে ফেব্রুয়ারি তারিখে ডায়ালগ বইটি মুদ্রিত আকারে প্রকাশ হল। এই বইটি ইতালীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল। এই বইতে গ্যালিলিও কোপার্নিকাসের মতবাদের সঙ্গে টলেমির মতবাদের একটা তুলনামূলক আলোচনা পেশ করেছেন। পোপ অষ্টম আরবানের সৌজন্যে ইনকুইজিশন আদালত থেকে রীতিমতো লাইসেন্স আদায় করে ফ্লোরেন্স থেকে বইটি বেরোলো। এর সর্বপ্রথম কপিটি এক অভিজাত রাজপুরুষের হাতে তুলে দেওয়া হল। তিনি দ্বিতীয় ফার্দিনান্দো দা মেদিচি, গ্র্যাণ্ড ডিউক অফ টাসকানি। তারিখটা ফেব্রুয়ারির ২২, ১৬৩২। কিন্তু এত সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হল না। মনে পড়ে যাচ্ছে, ষোল বছর আগে ১৬১৬ সালে এই ফেব্রুয়ারিতেই গ্যালিলিওর প্রথম বিচার হয়েছিল, আর কোপার্নিকাসের মতবাদ নিয়ে লেখালেখি, এমনকি কথাটি পর্যন্ত বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পোপ তাঁকে বলেছিলেন নিরপেক্ষতার সঙ্গে বইটি লিখতে। প্রকৃত বিজ্ঞানসাধক তথাকথিত নিরপেক্ষ নন। তিনি সত্যের পক্ষে, যুক্তির পক্ষে। ডায়ালগ বইতে গ্যালিলিও পোপের মনোমত নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করেননি। তিনি সোল্লাসে যুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রমাণ হাতে নিয়ে পরীক্ষালব্ধ সত্যের কথা বলেছেন। বিজ্ঞানচর্চার নামে যারা কুযুক্তির পূজা করেন, তাদেরকে হাস্যাস্পদ করেছেন। পোপ অষ্টম আরবান গেলেন চটে। ভাবলেন গ্যালিলিও তাঁকেই কটাক্ষ করে হাসাহাসি করেছেন। এরপর বিরক্ত পোপ বন্ধু থেকে শত্রু হলেন। ১৬৩৩ সালের ২২ জুন ইনকুইজিশন আদালত গ্যালিলিওর বিচার করল। প্রমাণিত হল যে গ্যালিলিও ভয়ংকর ভাবে ঈশ্বরবিদ্বেষী, ধর্মদ্রোহী, সমাজবিরোধী। আদালতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। আমৃত্যু তাঁকে গৃহবন্দী হয়ে অন্তরীণ থাকতে হয়েছিল। ইনকুইজিশন আদালতের নির্দেশে মহান বিজ্ঞান সাধককে হাঁটু গেড়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। বলতে হয়েছিল, আমি যা বলেছি, তা ভুল বলেছি। আমি যা জানি তা সব ভুল জানি। কথিত আছে সেই ২২ জুন এভাবে হীনতার সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থনা করার পরেই গ্যালিলিও বিড়বিড় করে বলেছিলেন, এপ্পার সাই মুওভ, তবুও সে ঘুরছে। বাস্তবে গ্যালিলিও বিড়বিড় করে ওটা বলে থাকুন, বা না থাকুন, এপ্পার সাই মুওভ কথাটি বিখ্যাত হয়েছে। চিরকালের মানুষী স্পর্ধা ফুটে উঠেছে ওই তিনটি শব্দে, তবুও পৃথিবী ঘুরছে।
অনেক পরে চার্চের বিশ্বনেতৃত্ব নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। ১৯৯২ সালের ৩১ অক্টোবর তারিখে পোপ দ্বিতীয় জন পল যেভাবে গ্যালিলিওকে চার্চ অপমান করেছিলেন, সে ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করেন। যথাযথ ভাবে বৈজ্ঞানিক সত্যকে তুলে ধরা সত্ত্বেও যেভাবে গ্যালিলিওর উপর নির্যাতন করেছিল চার্চ, তা যে ভ্রান্তিপূর্ণ ছিল, তা পোপ দ্বিতীয় জন পল স্বীকার করেছেন। চার্চের পক্ষে একটি কমিটি সেই সময়ের নথিপত্র দেখে একটি রিপোর্ট দিলে তার ভিত্তিতে খ্রীস্টীয় সমাজের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব হিসেবে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই বক্তব্য রাখেন।
নিজেদের ত্রুটির অপনোদন করতে চেয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে টেলিস্কোপ বাগিয়ে গ্যালিলিওর আকাশ পর্যবেক্ষণের চারশ বছর পূর্তি উপলক্ষে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশে গ্যালিলিও গালিলির অবদানকে নতমস্তকে স্বীকার করেছেন।