‘ফেট ডে লা মিউজক’ (Fete de la Musique) এই শব্দগুলো শুনেছেন তো ? যার অর্থ বিশ্বজুড়ে সঙ্গীতের দিন। ১৯৮২ সালে বিশেষ এই সঙ্গীত উৎসবের দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সঙ্গীত দিবসের শুরুটা হয়েছিল ফ্রান্সে। তবলাবাদক তন্ময় বসুর কথায়, “সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য প্রতি দিনই সঙ্গীতের দিন। একটা দিনকে সঙ্গীত দিবস বলে চিহ্নিত করা পাশ্চাত্য ধারণা। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালন করলে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দিবসও পালন করা উচিত।”
শুধু গানের জন্য একটা দিন উদ্যাপন শুরু হয় বছর তিরিশ আগে ফ্রান্সে। পারির রাস্তায় বহু শিল্পী মিলে রূপ দেন ‘ফেৎ দো লা মিউজিক’-এর ভাবনায়। তার পরে অনেকটা পথ পেরিয়ে ২১ জুন আজ ‘বিশ্ব সঙ্গীত দিবস’। মন খারাপ কিংবা ভাল যে কোনও আবেগ নিমেষে পরিবর্তন করার ক্ষমতা শুধু সঙ্গীতের আছে। তাই চিকিৎসা শাস্ত্রও সঙ্গীত থেরাপিকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷
কথায় বলতে বলে ফুল শিশু আর সঙ্গীত যার ভালো বাসে না তারা নাকি খুনও করতে পারে! প্রকৃতির কোথায় সঙ্গীত নেই বলুন তো ? নদীর ধারায় মিশে রয়েছে এক অনন্ত সঙ্গীতের মূর্ছনা৷ সে সঙ্গীত আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে যখন সে নুড়ি পাথর ঠেলে এগিয়ে চলে৷ পলাশ বনের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ার মাতাল সুরে বারবার আমি বাউন্ডুলে হই৷ কিংবা পাখির কুজনে যে ব্রাম্ভ সঙ্গীত বেজে ওঠে ভোরের আকাশে তা যেন মুক্তির সঙ্গীতের মত শোনায়৷ গাছের পাতার নড়াচড়া, নৌকার দাঁড় টানা, চাষের সময় চাষীর হাঁকডাক, বৃষ্টির পতনের শব্দ, ফেরিওয়ালার ডাক কিংবা দূরে মিলিয়ে যেতে থাকে গরুর গাড়ির শব্দ, সবখানেই সুরের ছোঁয়া৷ এ পৃথিবী যেন সুরের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে সারাক্ষণ৷
এত মুঠো মুঠো অন্ধকার এত স্বজন বিয়োগ এত যন্ত্রণার গনগনে আঁচে, সঙ্গীতই একমাত্র প্রক্রিয়া যা শান্তির বারির মত ঝরে পারে আমাদের এই ক্ষতবিক্ষত জীবনের ওপর৷ সঙ্গীতের মত বন্ধু, যে কোনদিন হাত ছাড়বে না দূরে যাবে না, পাওয়া খুব মুশকিল! প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত এই বন্ধুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত আমাদের হাতের মুঠিতে চেপে ধরে মহাকালের স্রোতের অভিমুখে এগিয়ে যাব৷ সঙ্গীত এমন এক মন্ত্র যা জীবনকে সুন্দর, আর আকাশের মত বিস্মৃত করে তোলে৷