• Uncategorized
  • 0

মার্গে অনন্য সম্মান এণাক্ষী কয়াল মণ্ডল (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৪৮
বিষয় – নজরুল শ্রদ্ধাঞ্জলি / শেষ চিঠি / রম্য রচনা

এক কন্যা ভ্রূণের পত্র

দোলনাটা বাতাসের মধ্যে দুলে চলেছে নির্ভার।রুমার খোলা চুল বাতাসে উড়ছে হাওয়ায় ।চারিদিকে ফুটে থাকা নাম না জানা ফুলেদের মেলা।
এমন সময় কোথা থেকে ঝরে পড়তে লাগল বৃষ্টি।অগুণতি বৃষ্টির ফোঁটারা রুমাকে ছুঁয়ে দিল।যেন হাজার হাজার কান্নার ফোঁটারা সব।শুধু রুমাকেই ছুঁলো সে সব বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটারা আধ ফোঁটা জুঁইয়ের মতন লেগে রইল রুমার কপালে , গালে , মেঘের মতন চুলের গোছায়।
ভিজে বাতাসে ফুলের মিষ্টি গন্ধ যেন বদলে গেল মনখারাপি এক বেদনার গন্ধে !
মনের মধ্যে কে যেন হুহু শব্দে কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করে উঠল , কে কাঁদে! এ কার কান্না!’
অঝোর কান্না ছুঁয়ে দিল , আশরীর ভিজিয়ে দিল রুমাকে!
এই ভাবনার মাঝেই একটা স্বচ্ছ সবুজ পাতার ফলক কোথা থেকে উড়ে এসে পড়ল মমতার কোলের মধ্যে ।
সুন্দর পাতার ফলকটাকে তুলে ধরে সে চোখের সামনে।
দেখে মনে হয় চোখের জলে লেখা এক পত্র।
কার চিঠি জানে না রুমা।তবুও পড়তে থাকে সে।
আমার আদরের মা,
আমি তো এখনো দেখিনি তোমায় ।কিন্তু আমি জানি চাঁদের আলোর মতন স্নিগ্ধ তুমি।আমি রোজ গুণতে থাকি আর কত মাস, আর কয় দিন !
তোমার কোলটাতে শুয়ে তোমাকে দেখবো।তোমার দিঘির মতন চোখের মমতায় দেখব আমার আমিকে।আমি দিন গুণি কবে তোমার আদর পাব ।অবশ্য তুমি এখনোও আমায় আদর করো আমি জানি।তুমি যখন তোমার পেটের উপর হাত রেখে আমাকে অনুভব করো আমি তখন তোমার আদরের ছোঁওয়া পাই।
জানো মা , আমি কতদিন অপেক্ষা করেছি তোমার কোলে শুয়ে ঘুম পাড়ানি গান শুনব !
তুমি যখন আমার কপালে চুমু খেয়ে ঘুম পাড়ানি গান গাইবে, আমি পরীর দেশের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমের মধ্যে তলিয়ে যাব ধীরে।
তারপর যখন আমি হামাগুড়ি থেকে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াব , হাঁটতে শুরু করব টলোমলো পায়ে।তুমি আপ্লুত হয়ে কোলে তুলে নেবে আমায়।
তারপর আমার দুষ্টুমিতে তুমি অস্থির হয়ে উঠে কখনো হয়তো বকবে , শাস্তি দেবে আমায়।আর তার পরক্ষণেই আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর দেবে।
তারপর একটা সময় আমার মেয়ে বেলার শেষে আমরা দুজনে বন্ধু হব।আর এভাবেই দিনে দিনে আমি যখন পূর্ণতা পাল, তোমার বন্ধু থেকে তোমার মা হয়ে যাব আমি।
আজ দু মাস ধরে আমি এসব স্বপ্ন দেখি মা গো !
আমি তো এখনো লিখতে শিখিনি।শিখবও না হয়ত কোনোও দিন।তোমার মুখে চাঁদ মামার ছড়া শুনব না কোনও দিন।রূপকথার গল্পে তেপান্তরের মাঠে ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর সাথে ঘুমন্ত রাজপুত্রের দিকে চেয়ে দেখতে পাব না কখনোই।
তবুও আমার মনের ইচ্ছা গুলো , যা পাওয়া হবে না কখনোই তা খুব লিখতে ইচ্ছা করল।তাই আমার সরু আঙুল বুলিয়ে তোমার পেটের এই অন্ধকার অন্ধকার দেওয়ালটাতে লিখে যাচ্ছি এ সব ।এ আমার প্রথম চিঠি ।শেষ চিঠিও বটে।
আমি তো শুনে ফেলেছি বাবার কথা।তোমাকে কাল ওরা নিয়ে যাবে।আমাকে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। আমি তো মেয়ে।তাই মনে হয় আমি বাড়তি বোঝা!
মা আমি জানি , তুমি মনে মনে আমাকে রুশা বলে ডাকো।তোমার আর বাবার নামের আদ্যাক্ষরে আমার নাম। কিন্তু আগামীকালের পর থেকে রুশা বলে আর কেউ থাকবে না মা! আমি তোমার মনের আকাশে স্মৃতি হয়ে যাব ।যে স্মৃতি তোমার কোনো একলা সময়ে তোমাকে কাঁদাবে !
আমার আদরের মা, আমি দূর আকাশের তারা হয়ে গিয়েও রোজ তোমাকে দেখব , ভালোবাসব দূরের থেকে।
– ইতি
তোমার রুশা।
ধড়মড় করে ঘুম ভেঙ উঠে বসে রুমা।তারপর শান্তনুকে ডাকে।
‘ অ্যাবর্শান আমি কিছুতেই করাব না।যে আসছে সে আমাদের প্রথম সন্তান।তাকে আমি এই পৃথিবীর আলো দেখাবো।আমার থেকে কেউ কাড়তে পারবে না তাকে! কেউ না!’
কান্নায় ভেঙ্গে পড়া রুমার কণ্ঠস্বরে জেগে থাকে দৃঢ় প্রত্যয়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।