• Uncategorized
  • 0

গল্পেরা জোনাকি তে তনুশ্রী দেবনাথ

ভিটের টান..

বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক এই মধুপুর গ্রাম ছেড়ে আর বেরোয় নি সতী। যাবেই বা কোথায় তিন কুলে তো কেউ নেই। ছেলে বেলায় বাপ মা মারা যাবার পর দূর সম্পর্কের এক কাকার কাছে মানুষ।কাকাই কলকাতায় বাবুর বাড়িতে দিয়ে গেছিল সর্বক্ষণের কাজের লোক হিসাবে। সেখানেই আলাপ গোকুলের সাথে ,ও ছিল ওবাড়ির চাকর। দুজনের মধ্যে ভাব ভালবাসা তৈরি হলে সতীকে বিয়ে করে গোকুল চলে আসে বাপ ঠাকুরদার ভিটে মধুপুরে।জল জঙ্গলে জীবন, তাদের আপন করেই সংসার শুরু করেছিল সতী। বাবুর বাড়ি কাজ করে দুজনে যেটুকু সঞ্চয় করতে পেরেছিল তা দিয়ে ছোট্ট একটা মুদির দোকান খুলেছিল গোকুল বাস রাস্তার ধারে। গাঁ গঞ্জের ব্যাপার বিক্রি বাটা হতো কম বেশি। একটু একটু করে সংসার টা সাজিয়ে তুলছিল সতী।হাঁস মুরগির ডিম, গোরুর দুধ ঘুঁটে বেচে টুকটাক রোজগার হতো। তারপর কচি এল ওদের জীবনে। ভালোই চলছিল সুখে দুঃখে।
কদিন ধরেই মাইকে বলে যাচ্ছে ঝড় আসছে, সবাই কে সাবধান হতে বলছে। ইস্কুল বাড়িতে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে, অনেক মানুষ সেখানে গিয়ে উঠেছে। শেষ সম্বল টুকু গুছিয়ে নিয়ে ইস্কুল বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছে গাঁয়ের মানুষ জন।গোকুলের শত অনুরোধেও ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি হয়না সতী।তার তো সম্বল বলতে ঐ দোকান টুকু,বেড়ার ঘর আর পোষ্য গুলো , ওদের নিয়ে কোথায় যাবে সে!তার চেয়ে এখানেই পড়ে থাকবে ঘাড় গুঁজে। দুদিন ধরেই আকাশে মেঘের আনাগোনা, তাতে পূর্নিমার গণ,ভরা কোটাল। নদী নালা ঘেরা গ্রাম মধুপুর ,সমুদ্র ও খুব কাছে।
সকাল থেকেই জল বাড়তে লাগলো নদীতে।কুল ছাপিয়ে,বাঁধ ভাসিয়ে জল ঢুকতে লাগলো গ্রামে। দেখতে দেখতে উঠোন পেরিয়ে ঘরের ভেতর। চাষের জমি, রাস্তা, পুকুর কিছুই আলাদা করে চেনার উপায় নেই, চারদিকে শুধু জল আর জল। চোখের সামনে হাঁস মুরগি গুলো ভেসে যাচ্ছে, গরুদের ও বাঁধন আলগা করে দিয়েছে গোকুল।সতী বুঝতে পারলো আর কোনো উপায় নেই,কচিকে বুকে করে গোকুলের হাত ধরে এক কাপড়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে, হাতড়ে হাতড়ে চললো ইস্কুল বাড়ির দিকে। জলের টানে ভেসে যাবার জোগাড়।
দিন দুই পড়ে জল নামতে শুরু করলে সতী গুটি গুটি বেরিয়ে এলো ইস্কুল বাড়ি থেকে, চললো ভিটের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোথায় কি ! কোথায় বাড়ি ঘর! দিগন্ত বিস্তৃত শুধু মাঠ, সেখানে এখনো জল জমে আছে।পচা দুর্গন্ধ উঠছে চারধার থেকে। পুকুরের মাছ,পোষা জীব জন্তু মরে পচে পড়ে আছে যত্রতত্র। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির মাঝে তার ছোট্ট কুঁড়ে টুকু কোথাও খুঁজে পেলনা সতী।
সব গেছে, আগ্রাসী বানের জল কিছুই বাদ দেয়নি, সামনে যা পেয়েছে সবটাই কাছিয়ে নিয়ে গর্ভ ভরিয়েছে। কি করবে কোথায় যাবে কিছুই ভেবে পেল না সতী, শুধু চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ছেলে বেলায় বাপ মাকে হারিয়ে অনাথ হয়েছিল এবার বানের জলে আরো একবার নিঃস্ব হলো সতী।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।