• Uncategorized
  • 0

গদ্যানুশীলনে মহুয়া দাস

লঙ্কাকান্ড

শ্রীলঙ্কা বেড়াতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল নবীনের। প্রতি শীতে একবার করে শ্রীলঙ্কা বেড়াতে যাওয়ার কথা উত্থাপন করবেই সে। কিন্তু মৌ একেবারেই নিমরাজি। রামায়ণের লঙ্কা‌কান্ড ছোটবেলা থেকেই মৌয়ের মনে একটা বিচ্ছিরি টাইপের ভীতি ‌ সঞ্চার করেছে। যেমন‌ লোভী ঐ হনুমান , তেমনি জেদী ঐ রাবণ আর তেমনি গাধা টাইপের ছিল ওই সীতার বরটা। আর সীতাটাও কিছু কম যায় না । যেমনি অবাধ্য তেমনি বায়নাবাজ। ব্যাটাচ্ছেলে হনুমানটার দোষ তো সব থেকে বেশি। তুই তো ‌কত্ত কত্ত আম খেতে পেতিস , আর এ পোড়া দেশে আর কিছু তোর ভালো জুটুক না জুটুক, মধুর মত আম থেকে বিশল্যকরণী কিছুরই তো তোর অভাব ছিল না রে । সীতা মোলাকাতের কাজটা নির্বিঘ্নে সেরে মানে মানে চলে আয় তুই ল্যাজ উঁচিয়ে। তা নয়, তুই রাবণের ঐ সুন্দর সাজানো আমবাগান দেখে লোভ সামলাতে পারলি না। যদি আট দশটা আম খেয়ে চুপচাপ চলে আসতিস তাও তো হত, কিন্তু না, তুই কি করলি? রাবণের সাধের বাগানে ঢুকে মর মর মরাৎ করে একটার পর একটা গাছের ডাল ভেঙে, রাবণের চেরীদের বক দেখিয়ে, ধুন্ধুমার বাঁধালি । তারপর তো বিশ্রী রকম ধর ধর মার মার কান্ড। আগ লাগিয়ে সোনার লঙ্কাকে ভাজা ভাজা করে তবে ফিরে এলি। এই লঙ্কাকান্ড মৌয়ের মনকে সেই ছোট্টবেলা থেকেই শ্রীলঙ্কার প্রতি একেবারে বিতৃষ্ণ করে রেখেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার প্রতি মৌয়ের একটুও প্রীতি না থাকলেও লঙ্কার প্রতি তার চরম প্রীতি কেউ ঠেকাতে পারে না। মানে কাঁচা লঙ্কার প্রতি একটা তীব্র টান তার হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে। তারও একটা কারণ রয়েছে। মৌ অকারণে কোন কাজ আজ অবধি করে নি। যেদিন যেইমাত্র কোথায়, কার কাছে যেন মৌ শুনল যে লতা মঙ্গেশকর নাকি রোজ কচমচ করে লঙ্কা চিবিয়ে খান সেই থেকে তার রান্নাঘরে লঙ্কার ব্যবহার বেড়ে গেল। বাড়তে বাড়তে গতকাল একেবারে লঙ্কাকান্ড। নবীন এমনিতে শান্ত মানুষ কিন্তু কেউ জানে না সময় ও ক্ষেত্রবিশেষে সে কেমন কুরুক্ষেত্র বাধাতে পারে। গতকাল সন্ধ্যেয় হঠাৎ কি মনে করে অনুষ্কা শংকরের সেতার চালিয়ে মৌ নাচতে শুরু করেছে অনেকদিন পরে। ইতিমধ্যে ভুলে গেছে ওভেনে একপাশে খিচুড়ি আর একপাশে চা চাপানোর কথা। হঠাৎ দরজায় নবীনের আবির্ভাব। সঙ্গে সঙ্গে মৌয়ের মনে পড়েছে চায়ের কথা। নাচ ফেলে হুড়মুড়িয়ে ছুট রান্নাঘরে। আদা , তেজপাতা,এলাচ দেওয়াই ছিল চায়ে । মৌ দেখে চায়ের জল ফুটতে ফুটতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে । আর ওদিকে খিচুড়িও ওপাশে প্রবল বেগে দাপাদাপি করছে ছোট্ট হাঁড়িতে। মৌ প্রথমে আরও এক কাপ জল দিল চায়ের সসপ্যানে, তারপর ফ্রীজ খুলে প্রথমেই দৌড়ে ছটা লঙ্কা নিয়ে এসেই খিচুড়িতে চালান করে দিল। একই সঙ্গে দৌড়ে গ্রীন টিও এনে ঝপাং করে ফুটন্ত চায়ের জলে দিয়েই ঢাকনা চাপা। তারপর যেটা করল সেটাতেই ঘটে গেল মহা বিপত্তি। কোনদিন যেটা করে না ,আজ সে সেটাই করে বসল। নবীনকে অনুরোধ করল চাটা একটু ছেঁকে তাদের দুজনের জন্যে নিয়ে নিতে। সাধারণত মৌ এমন করে না। আর নবীনও তার হাতে চা ধরিয়ে না দিলে হাত বাড়িয়ে চা নিয়ে খেতে আগ্রহ বোধ করে না। তাতে তার চা খাওয়ার আনন্দটাই নাকি মাটি হয়ে যায়।গতকাল নেহাত অনুষ্কার বাজনায় নাচের ঘোর চেপে যাওয়াতে নবীনকে এমন উটকো অনুরোধ করবার কথা মাথায় এলো মৌয়ের। আর ঠিক ২মিনিট পরেই ঘটল সেই মহাবিপত্তি। যাকে বলে একেবারে লঙ্কাকান্ড। রান্নাঘরের দিক থেকে নবীনের কেমন একটা হুঙ্কার জাতীয় গলা ভেসে আসাতে মৌকে তার নাচ ফেলে ছুটতেই হল। গিয়ে দেখে নবীনের ফর্সা মুখ রাগে টকটকে লাল। প্রথমে একটা হুমমম জাতীয় ধ্বনি বেরিয়ে এল তার গলা থেকে। তারপর টানা কিসব যে বলে যেতে লাগল ,মৌ তার বিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারল না। শুধু “এটা কি হয়েছে?” এই প্রশ্নটাই বোধগম্যতায় এল। মৌও চিল্লাতে শুরু করল, “কেন? কি হয়েছে শুনি?”
অবশেষে অনেক ঝামেলা ঝঞ্ঝাটের পর যে মহা আহ্লাদের তথ্য পাওয়া গেল তা হল, নবীন চা ছেঁকে কাপে ঢালতে গিয়ে, গ্রীন টিয়ের বড় বড় পাতার মাঝে ছয় ছয়খানা কাঁচা লঙ্কা আবিস্কার করেছে। এবং প্রবল রাগে সেই চা রান্নাঘরের বেসিনে নিক্ষেপ করেছে।
ঠিক এমনি মোক্ষম সময়ে তাদের ব্যালকনির ঝোলানো খাঁচা থেকে এক নম্বরের নারদ, ফুলন দেবীটা লাল টুকটুকে ঠোঁটে চিল্লিয়ে উঠল,
“জয় রাধে জয় রাধে”!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।