ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৬)

সুমনা ও জাদু পালক
অসুস্থ মাকে ঘরে একলা ফেলে রেখে কিছুতেই বাইরে বেরোতে ইচ্ছা করছিল না সুমনার। মাকে সে কথা বলতেই মা বলল, আমার জন্য একদম চিন্তা করিস না । আমার কিচ্ছু হবে না। তাছাড়া আজকে তো একটু ভালো আছি ।জীবন মাস্টারের ওষুধটা ভালো।
—— তুমি সত্যি বলছো তো? কোন কষ্ট নেই তো তোমার? মাথাব্যথা, গা হাত পা ব্যথা?
—-নারে, কিচ্ছু নেই।
—– তাহলে কপালটা এখনো অত গরম কেন?
—— জ্বরটা হয়তো পুরো ছাড়েনি তাই।
—– তাহলে আর ভালো হলে কি করে?
—– দূর বোকা!
—-মানে, কি করলাম আমি?
——ওরে, একবারে কি সবটা ভালো হওয়া যায়?
তাছাড়া এখনো তো তিনদিনের ওষুধ আছে।সবটা শেষ করি আগে।
শেষ পর্যন্ত পুটু পিসির কথা মত প্রাচীরের গায়ের দরজাটায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে, বাদল ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঘর ছেড়ে বেরোয় সুমনা। মাকে অবশ্য দরজায় তালা লাগানোর ব্যাপারটা জানায়নি। মা শুনলে হয়তো হাসতে পারে তাই।
বামুন পাড়ায় খ্যাপা কালীর থানের পাশ দিয়ে পেরোবার সময় তাঁতি পাড়ার অশোক কাকার সামনাসামনি হয়ে গেল সুমনা। এখন অবশ্য সবার কাছে ওর পরিচয় ‘অশোক ক্ষ্যাপা’ বলে। সুমনা মায়ের কাছে শুনেছে যে, একসময় নাকি খুব ভালো তাঁতের শাড়ি তৈরি করত অশোক কাকা।ফী হপ্তায় নিজের হাতে তৈরি তাঁতের শাড়ি গুলোকে একটা সাদা কাপড় দিয়ে ভালো করে মুড়ে শহরে মহাজনের ঘরে জমা দিয়ে আসত । মহাজনের ঘর থেকে নতুন সুতো আর মজুরির টাকা নিয়ে ফিরতো বাড়িতে।
একবার ঐরকম মহাজনের ঘরে শাড়ি জমা দিয়ে ফিরতে, কোন একটা কারণে ,একটু নাকি রাত হয়ে গেছিল অশোক কাকার ।শহর থেকে ফেরার শেষ বাসটা ধরতে পারেনি। হোটেলে থাকতে গেলে অনেক পয়সা লাগবে, তাই বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী শেডে রাত কাটিয়েছিল অশোক কাকা। ওখানেই গভীর রাতে বুকে ছুরি ঠেকিয়ে অশোক কাকার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। থানা পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও কিছু উদ্ধার করতে পারেনি অশোক কাকা। আর তখন থেকেই অশোক কাকার মাথায় একটু গোলমাল দেখা দেয়।
প্রথমদিকে খুব নাকি চুপচাপ থাকতো অশোক কাকা।কারুর সঙ্গে কথাথ্যৃ বলতো না। কিছুদিন পর থেকেই নাকি বেশি কথা বলতে শুরু করে অশোক কাকা। অপ্রয়োজনীয় অসংলগ্ন কথাবার্তা। সব সময় যে অসংলগ্ন কথা বলে, এমনটা নয়। তবু গ্রামের লোকেরা ওর নাম দিল ‘অশোক ক্ষ্যাপা’।
অশোক কাকার বউ, মানে শিউলি কাকিমা এখন তাঁতে গামছা তৈরি করে কোন রকমে সংসার চালায়।