• Uncategorized
  • 0

সম্পাদিকা উবাচ

Sustainable development কথাটা আমরা খুব ব্যাবহার করি আজকাল৷ কিন্তু Sustainable development কথাটার মানে কী৷ চলতি বাংলায় বলতে গেলে যা দাঁড়ায় তা হল ” টেকসই উন্নয়ন “৷ এই টেকসই উন্নয়ন জিনিসটা কী ? গায়ে মাখে না মাথায় লাগায় ? কৌতূহল ছিলাম৷ যেটুকু জানলাম তাতে মনে বাংলা সাহিত্যের কবিরা ত্রিকালদর্শী ৷ কেন? আলোচনার শেষেই নয় এই প্রসঙ্গের উত্তর দেব !
টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হল আগামীর চাহিদা ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে বর্তমানের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানো। আমরা আজকে যেভাবে প্রয়োজন মেটাতে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পরিবেশের উপাদানসমূহ ব্যবহার করছি, তাতে যেন ভবিষ্যতে তা নিঃশেষিত হয়ে না যায়। এককথায়, আগামী প্রজম্মের সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য পরিবেশের ক্ষতি না করে এবং প্রকৃতিতে নিঃসরিত কার্বনের (কার্বন-ডাই- অক্সাইড ) পরিমাণ কমানোসহ, সহনীয় মাত্রায় রেখে যে কোন উন্নয়ন /পরিবর্তন কাজই টেকসই উন্নয়ন।
এই উন্নয়নের উদ্দেশ্য পরিবেশের সংরক্ষন ও বর্তমান অবস্থার উন্নতি ঘটান। এই টেকসই উন্নয়ন মানুষের কোন কাজ/জিনিস সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা ,ব্যবহারের ধরণ এবং নৈপুণ্যে পরিবর্তন আনে। যেমন আমরা আসবাবপত্র তৈরির জন্য কাঠ ব্যবহার করে থাকি, কাঠ পেতে গাছ প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা যে তুলনায় আমরা গাছ কেটে পরিবেশের বিপর্যয় আনছি, ঠিক সে পরিমাণ গাছ লাগাচ্ছি না, এতে বন যেমন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ,জীব জন্তু,পশু পাখির ও বৈচিত্র্য নষ্ট করে ফেলছি। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ও বেড়ে যাচ্ছে। গাছ কাটার পাশাপাশি গাছ লাগানো এবং পরিচর্যার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং বিকল্প উপায় (আসবাবপত্রে লোহা ,প্লাস্টিক ইত্যাদি পুনঃব্যবহারযোগ্য উপাদানের ব্যবহার) এর ধারনা এবং বাস্তবায়নই টেকসই উন্নয়ন।
এই ধারনাটি অনেক পুরনো । যদিও এর গুরুত্ব বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অনুধাবন হয়। টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন শব্দ টি প্রথম ব্যবহৃত হয় ব্রুন্ডল্যান্ড কমিসনে।
ব্রুন্ডল্যান্ড কমিশন /Brundtland Commission (১৯৮৭) টেকসই উন্নয়নের যে সংজ্ঞা দেয় তাহল – ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা কে বজায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানো কে টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে।
টেকসই উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য
১) স্থিতিশীল উন্নয়ন এক ধরণের কার্যাবলি যা পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
২) স্থিতিশীল উন্নয়ন এ প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশের গুনগত মান বজায় রেখে মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।
৩) মানুষ যে প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক সম্পদ গুলো ব্যবহার করছে, সেগুলি হ্রাস বা ধ্বংস না করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
ভারতবর্ষ তথা বাংলার গর্ব নবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ অমর্ত্য সেনও এই Sustainable Development এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন৷
এবার তো উপসংহারে আসার পালা৷ তাই খোলসা করে বলেই ফেলি৷ আগেই আলোচনা করেছি বিংশ শতকে টেকসই উন্নয়নের সাথে মানুষ বিশেষভাবে পরিচিত হয়৷ ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মারা যান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, এবং তাঁর জীবিত কালে তিনি ” ছাড়পত্র ” কবিতায় লিখেছিলেন;-
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
কবির উচ্চারণে এ কোন বাণী ধ্বনিত হয়েছিল ! সেই একই Sustainable development বা টেকসই উন্নয়নের অন্তর্নিহিত গুঢ় তত্ত্বের প্রকাশ নয় কি ? বিজ্ঞানের এই স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ বা অর্থনীতির ব্যাখ্যাকে শাব্দিক বা ছান্দস পরিবেশনে কবিতার কলেবরে আবদ্ধ করে ছিলেন কবি অবলীলায়, বহু পূর্বেই৷ সুতরাং বাংলা সাহিত্যের কবিরা যে ত্রিকালদর্শী, এ কথা বলে যে কোন অত্যুক্তি করিনি, তা বোধহয় আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না৷

ভালো থাকুন৷ সুস্থ থাকুন৷ লিখতে থাকুন৷ পড়তে থাকুন৷

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।