• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৪৫)

পিকাশোর প্রেম পিকাশোর শিল্পসৃষ্টির উৎস- ২

ছবি দুটো গিলটের আঁকা বাঁদিকে জীবনের প্রথম দিকের আর ডান দিকে শেষের দিকে
গিলট (Artist Françoise Gilot) পিকাশোর রূঢ় ব্যবহারে ১৯৫৩ সালে অন্য একজনকে বিয়ে চলে যান In 1953, Gilot left Picasso। গিলট,পিকাশোর পর যাকে বিয়ে করেন, তার সাথে একটি মেয়ে হয়। কিন্তু বিয়ে টেকেনি। এরপর তিনি আবার আরেকজনকে বিয়ে করেন তিনি আমেরিকার এক বিজ্ঞানী
ফরাসী সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক পুরষ্কার দিয়েছেন She was awarded a Chevalier de la Légion d’Honneur, in 1990 তার জীবন একবিন্দুও নষ্ট হয়নি।বড়বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কাজ করেছেন। প্রিন্ট মেকিং সিরামিক ও পেইন্টিং করে অনেক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী করেছেন। পিকাশোর উপর বই লিখে বেস্ট সেলার হয়েছেন। Life with Picasso (with the art critic Carlton Lake), সম্প্রতি তার ডায়েরি, ভ্রমনের আঁকা নিয়ে প্রদর্শনী ও প্রকাশ করেছেন। এখনো তিনি বেঁচে আছেন।নিয়মিত ছবি আকেন।আমেরিকায় তার বাস। কাউকে সিঁড়ি করে নয়। বরং অনেকে বলেন গিলট পিকাশোকে উদ্বুদ্ধ করেছেন বহু ক্ষেত্রে, আর পিকাশো বহু জিনিস গিলটের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করেছেন।গিলট চলে যাওয়ার পর পিকাশো ছবি সংগ্রাহকেদের বারণ করেন তার ছবি না কেনার জন্য। তিনি এতই কঠিন ছিলেন। গিলটের আগে ডোরামারের সাথে ছিল তার সম্পর্ক। গিলটের উপস্থিতি পিকাশোর জীবনে ডোরামার যখন বুঝতে পারেন, তিনি ভেঙ্গে পড়েন।
[Françoise Gilot feeding her daughter, Paloma Picasso, Vallauris, France]
পিকাশোর সাথে ফ্রাঙ্কোইসের চল্লিশ বছরের পার্থক্য ছিল। কি বলেন এরকম সম্পর্ক নিয়ে আমাদের এই বাংলা তথা এশিয়ার নিম্ন, ও মধ্যবিত্ত ঘিঞ্জি সমাজে? যৌনতার মুক্তি রাশিয়া ইউরোপ আমেরিকাকে মুক্ত করেছে ফলে তারা তাড়াতাড়ি অন্যান্য রাস্ট্র থেকে অধিক উন্নতিশীল। আর এশিয়া আফ্রিকাতে ক্রীতদাস প্রথা, শ্রম শোষণ প্রথা ছদ্মবেশে কায়েম করে বিশাল জনবসতিকে ধর্মের নামে, সংস্কারে নামে, ঈশ্বরের নামে রাজনীতির নামে বন্দী করেছে। আজ হোক কাল হোক মানুষ এই শিকল ভাঙ্গবে।
গিলটের সাথে সম্পর্ক থাকা কালীন পিকাশোর স্টুডিওতে একটি মেয়ে আসতেন নাম Genevieve Laporte, ১৯২৭ সালে জন্ম মানে পিকাশোর থেকে ৪৬ বছরের ছোট।গিলট চলে যাওয়ার পর পিকাশো তার সাথে বছর খানেক প্রণয় সম্পর্ক রাখেন ১৯৫৩তেই সেই প্রেম শেষ এবং তার জীবনে প্রকাশ্য বিয়ে হয় জ্যাকুলিনের (1926 -1986) সাথে। ১৯৫২ সালে পিকাশোর বয়েস ৭২,ফ্রান্সের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, জ্যাকোলিন রোক Jacqueline Roque তখন ২৭ বছরের একজন সেলস গার্ল, তাদের প্রথম দেখা হয় pottery studio তে in Vallauris। পিকাশো সেখানে সিরামিকসের কাজ করছিল। জ্যাকুলিন পিকাশোকে ঈশ্বর ভেবে বসল। আর পিকাশো নিজেকে সদাই ঈশ্বর মনে করত। ১৯ ৫৩ থেকে ১৯৭৩, যে বছর মারা যান পিকাশো, ৯২ বছরে, দীর্ঘ ২০ বছর জ্যাকুলিন পিকাশোর সাথ দিয়েছিলেন।পিকাশোর সাথে তার বয়েসেরও পার্থক্য ছিল ৪৬ বছরের।
পিকাশো এতগুলি প্রণয় সংগঠিত করেছিলেন। তার সাথে প্রণয়ীদের বয়সের ৪৬ বছরের পার্থক্য ছিল। কিন্তু কোন রমণির বিবাহিত জীবনে, অস্বাভাবিক কিছু হয়নি। তারা বিয়ে করেছেন, বিয়ে ভেঙ্গেছে, আবার নতুন প্রণয়ে চলেছেন। জীবন চাকার মত ঘুরেছে। এদের সকলের মধ্যে ফ্রাঙ্কোইস গিলট প্রমান করেছেন মেয়েদের জীবনে বিয়ে ভাঙ্গা গড়া কোন সমস্যা নয়।পুরুষদের তো নয়ই।
পিকাশো, তার জীবনে প্রচুর নারীর প্রেম পেয়েছিলেন। নারীর ভালবাসার মধ্যে যেমন বন্যতা ছিল, সংঘাতও ছিল। তিনি সেই নারীকে তার স্বপ্নচারিণী করে ছবি এঁকেছেন, সেই নারী তার জীবন ঘিরে অমর হয়েছেন। ছবি আঁকার জন্য পিকাশো অনেক মডেল ব্যবহার করতেন। সবার সাথেই তার রিলেশন বা সম্পর্ক ছিল। তিনি নারী ভালবাসতেন কিন্তু দুর্ব্যবহারও করতেন।শারিরীক আক্রমন ও দুর্ব্যবহারও ছিল। ফলে অনেকে তার সাথে সম্পর্ক করলেও তার ছবিতে ৮জন নারী প্রতিফলন পেয়েছে। তার নারীদের একটা ছোট তালিকা দিলামঃ
তার প্রথম নারী ফার্নান্দ অলিভিয়ের Fernande Olivier পিকাশোর সাথে Fernande Olivier (1904-1912)ফার্নান্দ অলিভিয়ের ২৩ বছর বয়সে পিকাশোর সাথে মডেল হিসাবে পরিচিত ও প্রায় ৮ বছর প্রেম ছিল। পিকাশোর বয়েসও তখন ২৩ বছর। পিকাশোর প্রথম নারী ও প্রেম ফার্নান্দ। পিকাশো তাকে দেখে ৬০ খানা ছবি ও ভাস্কর্য করেন। তাদের মধ্যে ঈর্ষা ছিল, সন্দেহ ছিল। পরে ফার্নান্দ আরেকজন ইতালীয় শিল্পীর প্রেমে পরে পিকাশোকে ছেড়ে চলে যান। অলিভিয়ের পিকাশোকে প্রতারণা করার পর ফার্নান্দের বান্ধবী Marcelle Humbert আসেন জীবনে, তার প্রেমের ক্ষত সারাতে। পিকাশো তাকে Eva Gouel (1912-1915) বলে ডাকতেন। ইভার সাথে পিকাশোর প্রণয় ভালই ছিল, ১৯১৫তে ইভার যক্ষা রোগ হয়। পিকাশো তার প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন ছিলেন। কিন্তু ইভার অসুস্থতার ফাঁকে প্যারিসের এক রমণী গ্যাবির সাথে সম্পর্ক করেছিলেন। Gaby Depeyre (actual name Gabrielle Lespinasse); এই প্রণয় ১ বছর টিকেছিল। পিকাশোর তখন ৩৪ বছর বোধকরি।
ওলগা হহোলোভা Olga Khokhlova (Born: 17 June 1891, Nizhyn, Ukraine Died: 11 February 1955, Cannes, France) (প্রণয়ের সময় ছিল 1917-1927) পিকাশোর জীবনে চতুর্থতম।গ্যাবির মৃত্যুর পর পিকাশো প্যারিস ছেড়ে রোমে যান সেখানে রাশিয়ার ব্যালে নতর্কী ওলগার সাথে পরিচয়। ওলগাকে ১৯১৮ সালে অফিসিয়ালি বিয়ে করে তার প্রথম স্ত্রীর মর্যাদা দেন। প্রথম প্রথম প্রেম থাকলেও পরে পিকাশো ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাদের প্রথম সন্তান হয় ১৯২১ সালে। নাম রাখেন পাওলো। দশবছর প্রেম টিকিয়ে রাখার পর পিকাশো গোপনে এক স্পেনের ১৭ বছর কিশোরীর সাথে প্রণয় তৈরিকরেন। ওলগা তার ছেলে নিয়ে পিকাশোকে ত্যাগ করে চলে যান। আর কখনো ফিরে আসেননি।
তার পঞ্চম প্রেম Marie-Thérèse Walter (1909-1977), তার নাম। (1927-1936) ১৯২৭ সালে পিকাশোর বয়েস ৪৭। ওয়ালটারের বয়েস ১৭। তার সাথে ৯ বছর প্রণয় ছিল। তাদের একটি কণ্যা সন্তান হয় নাম মায়া। কিন্তু পিকাশো আবার প্রেমে পড়েন ষষ্ঠবার, ১৯৩৬ সালে ডোরা মারের সাথে। . Dora Maar (1907 -1997), (1936-1944 ছিল প্রেমের সময়কাল)।
ডোরামার ছিলেন একজন ফটোগ্রাফার ও পেইন্টার। তার সাথে পিকাশোর ৭ বছর প্রণয় ছিল। এই সময় কালে অনেক ছবির মধ্যে ১৯৩৭ সালে পিকাশো তার বিখ্যাত ছবি গুয়ের্ণিকা আঁকেন। আর একটী ক্রন্দরতা নারী। তারপর সপ্তম প্রণয় Françoise Gilot. এর প্রেমে পড়েন। গিলটের বয়েস তখন ২১, আইনের ছাত্রী, আর পিকাশোর বয়েস ৬১, ৪০ বছরের পার্থক্য। তাদের প্রথম দেখা হয় Le Catalan Restaurant in Paris, in 1943 এক রেস্টুরেন্টে। গিলট তাকে মনে প্রাণে ভালবাসতেন। যদিও তারা বিয়ে করেননি পিকাশোর প্রতিশ্রুতিতে তাদের দুটি সন্তানও হয়।কিন্তু পিকাশোর কঠিন ব্যবহার সহ্য করতে পারছিলেননা। ১০ বছর তাদের প্রেম টিকে ছিল। গিলটের সাথে সম্পর্ক থাকা কালীন পিকাশো ৭২ বছর বয়সে তার অস্টম প্রেম ২৪ বয়সের এক মহিলাকে প্রেম করেন নাম 24-year-old Genevieve Laporte ১৯৫৩ তেই সেই প্রেম শেষ হয়ে যায়। ১৯ ৬১ সালে পিকাশো আবার বিয়ে করেন জ্যাকুলিনকে Jacqueline Roque, 1953-1973 নবম প্রেম জ্যাকুলিনের সাথে পিকাশো মৃত্যু অব্ধি ২০ বছর সম্পর্ক ছিল।জ্যাকুলিনের সাথে পিকাশোর দেখা হয় এক সিরামিকসের কারখানায়। জ্যাকুলিন তাকে ব্যালে নাচ শেখাত। পিকাশো ১৯৭৩ এ মারা গেলে ১৩ বছর পর ১৯৮৬ সালে জ্যাকুলিন নিজের বন্দুক চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মোটামুটি পিকাশোর নারীদের ক্রমপুঞ্জী হলঃ ১।ফার্নান্দ অলিভিয়ের, ২।ইভা গোয়েল(মারসেল হামবার্ট) ৩।গ্যাবি Gaby Depeyre, ৪।ওলগা Olga Khokhlova, ৫।। ম্যারি থেরেসা Marie-Thérèse Walter, ৬।ডোরা মার Dora Maar, ৭।ফ্রাঙ্কোইস গিলট Françoise Gilot. ৮। Genevieve Laporte ৯। জ্যাকুলিনকে Jacqueline Roque,
সমাজে এরকম মহিলা দুই একজন হাজারে থাকেন। তারা নিজেরাও বড় হন যার কাছে যান তাকেও অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেন। এখানে Françoise এর কিছু ছবি দিলাম। গিলট এখন থাকেন on Manhattan’s Upper West Side.৯৬ বছর বয়স।
এখানে তার কিছু ছবি দিলাম। আর পিকাশোর অন্যান্য নারীদের সাথে।

আমাদের ভারতে তথা বাংলাতেও এমন বহু ঘটনা আছে। সাহিত্যে সঙ্গীতে, সিনেমায় নানা শিল্পে।যারা আর্থিক অনটনে তারা প্রেম পরিণয়ে কষ্টপায়। তাদের জীবন এই জৈবিক ও আবেগময় দিকটি তাদের জীবনকে তচনচ করে দেয়। কর্মক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সমাজ তাদের উলটো দুঃখ ও সমস্যা সৃষ্টি করে। মানুষকে কবে আরো মুক্ত পৃথিবী দেখবে, তা নির্ভর করছে এশিয়া আফ্রিকার শিক্ষা সচেতন্তায় আর রাজনৈতিক ভন্ডদের নির্মূলতার উপর। আমাদের জন্মের উপর আমাদের হাত ছিলনা, থাকলে এই দেশেই জন্মাতামনা। ইতিহাস ও বিখ্যাত মানুষদের জীবনথেকে লোকে পাঠ নিক।

 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।