T3 || অবিস্মরণীয় নজরুল || বিশেষ সংখ্যায় অমিতা মজুমদার
by
·
Published
· Updated
কাজী নজরুল ইসলামের
১২২তম জন্মদিনকে স্মরণ করে তাঁরই কথায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই
পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান হওয়ার সুবাদে বর্ণ পরিচয়ের আগেই দুজনের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ঠিক বললাম না। তাঁদের লেখার সাথে পরিচয় হয়। সে সময় গ্রামের স্কুলে বছরে একবার ধুমধাম করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। সে অনুষ্ঠানে প্রায় সবাই ইচ্ছেমতো অংশ নিতে পারত।তাই আমারও সুযোগ হয় দাদা-দিদিদের সাথে স্কুলের অনুষ্ঠানে টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে হাত-পা নেড়ে নেড়ে “লিচু চোর”,খুকী ও কাঠবেড়ালি” নয়তো পূরাতন ভৃত্য গড়গড়িয়ে বলা। সে-সময় এখনকার মতো নাচ, গান, আবৃত্তি শেখার প্রতিষ্ঠান ছিল না। ঐ দাদা দিদিরাই ভরসা। মাইক্রোফোন শব্দটা তখনও জানা হয়নি। টিনের স্কুল ঘরের বাইরে কাছাকাছি কোন গাছে অথবা লম্বা বাঁশ পুঁতে তার সাথে মাইক বাঁধা হতো। মঞ্চে মুখের সামনে একজন মাইক্রোফোন ধরতো আর আমরা যে যেটা পারি তাই পরিবেশন করতাম। মনে পড়ে তখন এটা বুঝতাম না যে মাইক্রোফোনে আস্তে বললেও দূরে শোনা যাবে তাই বেশ গায়ের শক্তি দিয়ে চেঁচিয়েই আবৃত্তি করতাম।
ধীরে ধীরে বর্ণপরিচয় হলো। সাথে বড়দের বই পড়ার নেশাটাও পেয়ে বসল। যদিও আমাদের সেই পাড়াগাঁয়ে সঞ্চিতা, সঞ্চয়িতা, আর জসীম উদ্দীনের কিছু কবিতার দেখা মিলত।
এর বাইরে সুকান্ত, জীবনানন্দ’র বই কদাচিৎ দেখা যেত।
তাই আমাদের মনে আজও রয়ে গেছে ,
“সাম্যের গান গাই, আমার চক্ষে পুরুষ রমনী ভেদাভেদ নাই”
“আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ—”
“কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থু থু ও গায়ে—
অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ পুত্র হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয় !”
“গাহি সাম্যের গান–
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,”
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন ?
কান্ডারী! বলো, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র !”
এই কবিতাগুলোর মধ্য দিয়েই নজরুলকে চেনা বা জানা।
বাদ গেলো অনেক , সিন্ধু, দারিদ্র, বিদ্রোহী, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, খাদু দাদু আরও কত।
গান-নিজে গাইতে পারি না বলে কি শুনতে পারি না? যেমন শুকনো পাতার নুপুর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণিবায়, তেমন করেই আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু, ভালোবাসো মোর গান। তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ ! বাগিচায় বুলবুলি তুই দিসনে আজি দোল, শাওন রাতে যদি —মনে পড়ে মোরে–,মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী,দেবো খোঁপায় তারার ফুল—
এ সকল গান কৈশোরের ভালোলাগা থেকে বয়ঃসন্ধির মন কেমন করা আবার তরুণ মনে আবেগের ঘনঘটা বাজিয়েছে।
সব কিছু মিলিয়ে তিঁনি অন্তরে যে মানবিকতা, ভালোবাসা, কুসংস্কারমুক্ত থাকার বীজ বপন করে দিয়েছেন তা আজ ফুলে-ফলে বিকশিত এক সজীব সতেজ বৃক্ষ হয়ে উঠেছে। যার শিকড় প্রোথিত হয়েছে সেই অন্দরমহলে যেখানে প্রবেশাধিকার নেই হিংসা, কুসংস্কার, অমানবিক বুনো ঘাসের।
কাজী নজরুলকে নিয়ে পন্ডিতজনেরা জ্ঞানগর্ভ কথা বলবেন। আমরা যারা মাটির মানুষ,সাধারণ মানুষ তাদের ভাবনায় নজরুল কেমন ? যে মানুষ টি “মানুষ”” নারী” র মতো কবিতা লিখেছেন তাঁকে তো শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। যাঁর কলমে ভালোবেসে প্রিয়াকে সাজাতে গিয়ে মনে হয়, খোঁপায় তারার ফুল শোভা পায় ,তাঁর অন্তরলোকের ঐশ্বর্যের আলোয় যে বিশ্বভুবন আলোকিত হবে এমনটাই তো স্বাভাবিক। সে কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ? যিঁনি গজল ,আর শ্যামা সঙ্গীত একই ভাবে শব্দের মালায় গ্রথিত করতে পারেন তাঁর তল পাওয়া কি এতই সহজ ?
আমরা শুধু তার সৃষ্টি রসের সুধা পান করতে পারি যার যার মতো করে।