• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – সাতাশ

টুকরো হাসি – সাতাশ

রসিক কবি নজরুল

যখন তাঁকে বলি বিদ্রোহী কবি, তখন যেন রক্তে দোলা দেয়। অনুভব করি উত্তেজনা। যোদ্ধাও তিনি।
যখন কবিতা পাঠ করি, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার’
তখন গলার কাছে যেন জমে থাকে একটা কষ্ট। মনে হয় এখন এমন একজন মানুষের আমাদের কাছে থাকার খুব প্রয়োজন ছিল। তার কাছে থাকলে, আশ্রয় নিলে তিনি বলতেনঃ-
‘আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়ব লুটে
পাতাল ফেড়ে নামব নিচে, উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে’
কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের কাছে আছেন। থাকবেন চিরকাল। তাঁর বিভিন্ন ধরনের লেখা, গান ও জীবনের নানা কর্মধারার মধ্য দিয়ে। তবু কেন বারবার মনে হয় এমন একজন মানুষের সশরীরে উপস্থিত থাকার কথা।
এসব ভেবে বা তেমন মানুষ খুঁজে লাভ নেই। কেননা বর্তমান সময়ের উলুবনে মুক্তো যে ছড়ানো নেই এটা টের পাওয়া যায়।
তাই দেখি- একই বৃন্তে দুটি কুসুম এই আবেগের স্বপ্নকে সার্থক করার বদলে বৃন্তচ্যুত করে নানাভাবে নিজস্ব কার্যসিদ্ধির জন্য নানা রঙের খেলার সমারোহ নিয়ে মাতামাতি। মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে।
এসব কথা থাক। যেহেতু প্রসঙ্গ- টুকরো হাসি, তাই কবি নজরুলের হাত ধরে হেঁটে আসি তাঁর রসিকতার দুনিয়ায়।
একদিন এক গানের আসরে গিয়েছেন নজরুল। সেখানে চা মুড়ি খাওয়ার পরে যখন পান খেতে যাবেন তখন একটি মেয়ে এসে বলল, ‘তুমি এত পান খাও কেন?
নজরুল হেসে উঠে বললেন, ‘গান গাই যে।’
একবার নজরুলকে একজায়গায় খাবার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের দই দেওয়া হল নজরুলের পাতে। যিনি দিচ্ছিলেন বললেন, ‘খেয়ে দেখেন খুব ভালো দই।’
নজরুল খেয়ে বললেন, ‘তোমাদের দই তেঁতুল গাছে হয়?’
এমন প্রশ্ন শুনে যিনি দিচ্ছিলেন বললেন, ‘তা কেন?’
নজরুল বললেন, ‘তাহলে এত টক কেন?’
কাজী নজরুল ইসলামের দুটি নজরুলগীতি করেছিলেন ইন্দুবালা। পরে নজরুল সঙ্গীতের তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রথম শ্রেণীর গায়িকা।
নজরুল ইসলাম তখন গ্রামোফোন কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি দোতলার ঘরে বসে আছেন এমন সময় একজন এসে বলল, ‘কাজীদা ইন্দুদি আপনাকে নিচে ডাকছেন।’
কথাটা শুনেই নজরুল কৌতুকের সঙ্গে বললেন, ‘আর কত নিচে নামব।’
বেগম সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের একজন নামকরা কবি ও লেখিকা। শুধু তাই নয় তিনি ছিলেন নারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব।
তিনি নজরুল ইসলামকে দাদু ডাকতেন। সুফিয়া কামালের বাড়িতে সাহিত্যের ও গানের আসর বসত। নজরুল ইসলাম সেখানে প্রায় যেতেন। সাহিত্য ও গান ভালবাসেন এমন অনেক মানুষও আসতেন সেখানে।
ইংরেজ আমলে কবি নজরুলের উপর গোয়েন্দাদের নজর থাকত। কবি যেখানে যেতেন সেখানে সাদা পোশাকে হাজির হতেন গোয়েন্দারা। কবির তা অজানা ছিল না।
একদিন সুফিয়া কামালের বাড়িতে সাহিত্য ও গানের আসর বসেছে। নজরুল সেখানে উপস্থিত।
একজন ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে নজরুল বললেন, ‘তুমি যে টিকটিকি, জানি ঠিকঠিকই।’
এমন কবিতা শুনে ছদ্মবেশে থাকা গোয়েন্দা ধরা পড়ে মুখ লাল করে সেখান থেকে উঠে গেলেন।
তখন কিশোরী সুফিয়া কামাল বললেন, ‘দাদু তুমি একে চিনলে কি করে?’
নজরুল বললেন, ‘গায়ের গন্ধে, বড় কুটুম যে।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।