• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সুদীপ পাঠক (পর্ব – ৪)

বুন্দি ও তার অলৌকিক চশমা

এছাড়াও এবাড়িতে যারা থাকে বা কাজের জন্য আসে যায় তারও এক প্রকার এই পরিবারেরই একজন হয়ে গেছে । যেমন ভগীরথ মিশ্র ওরফে ভোগু দাদা । তিনি সর্বজনীন দাদা । বয়েস তার কত সে হিসেব সে নিজেও জানে না । শশধরবাবুর চার দশকেরও বেশি সময়ের সহকারী । সেই পাটনা প্রবাসের দিন গুলি থেকেই মিশিরজী তাঁর ছায়াসঙ্গী । তিন কুলে তার কেউ নেই । অবসর গ্রহণের পর মায়া পরবশ হয়ে বোস মশাই ভগীরথকে নিজের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন । শখের বাগানের উদ্ভিতচর্চা ভোগু ব্যতীত সম্ভব নয় । এ ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে তার সাহায্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । মানুষটার চোখে যে ঘোলাটে ঘোলাটে মতন কিছু বস্তু দিয়ে তৈরী চশমা আছে সেটি নিঃসন্দেহে মান্দ্ধাতার বাবার আমলের । ওর ভেতর দিয়ে কিছু স্পষ্ট দেখা যায় কিনা সন্দেহ ! এছাড়াও ভোগু দাদার দুই কানে হিয়ারিং এইড আটকানো আছে । তিনিই এখন এবাড়ির মালি কাম ওয়াচ ম্যান কাম কেয়ার টেকার । বোঝ ঠ্যালা ! কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন । চোখে ভালো দেখে না , নাম তার নজরআলি ।
এছাড়াও আছে রাঁধুনি মারুতি পিসি । পঞ্চাশোর্ধ এই মহিলা সকলেরই পিসি । এমনিতে সে দামিনীর প্রতি খুবই স্নেহ প্রবণ । কাজু , লাড্ডু ও বুন্দিকে অকৃত্তিম ভালোবাসে । শাশুড়ি বৌমার আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক তা সে বিলক্ষণ জানে । ইচ্ছে থাকলেও দামিনীর পক্ষ নিতে পারে না । কারণ মাসের শেষে মাইনেটা বিউটিদেবীর কাছ থেকেই সংগ্রহ করতে হয় । যেমন ঠিকে কাজের মেয়ে শালিখ । কোজাগরীর সমবয়সী এই মেয়েটি ঝাড়পোঁছ করা , ঘরদোর মোছা , বাসন মাজা , কাপড় কাচা ইত্যাদি করে থাকে । সে আর তার পাঁচ বছরের ভাই চড়ুই দুজনেই দামিনীর খুব নেওটা । বিশেষতঃ বুন্দির সঙ্গে চড়ুইয়ের খুব দোস্তি । হবেই তো একেবারে সমসমাধি যে । তবে ঠাকুমার ভয়ে সবাই কাঁটা । যাই হোক এতো কথা বলার উদ্যেশ্য হলো এই বাড়ীর সকলের চোখে চশমা আছে । একমাত্র চড়ুই ছাড়া । হ্যাঁ ঠিক তাই , আর সেই কারণে একে বসু বাড়ী না বলে চশমা বাড়ী বললে মোটেই বাড়িয়ে বলা হয় না ।
আরো কিছু না মানুষি প্রাণী আছে তাদের কথাই বা বাদ যায় কেনো ? যেমন মার্জার দম্পতি মিয়াও চিয়াও । সারমেয় দম্পতি হালুম হুলুম । কোজাগরী ও দামিনীর প্রাণাধিক প্রিয় মেরিন ফিশ এ্যাকোরিয়াম আর তাইতে পুড়ুক পুড়ুক করে সাঁতরে ঘুরে বেড়ানো ছোট বড় মাঝারি বিভিন্ন আকৃতির ডজন দুয়েক রেড ক্যাপ অরেন্ডা । পাখি খাঁচায় বন্দি করার ঘোরতর বিরোধী বসু পরিবার । কিন্তু সকাল সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা এসে বসে বাগানে , তারা দানাপানি খায় আবার উড়ে যায় । আর যাদের সংখ্যা গোনাগাঁথা নেই সেই সব অবাধ বিচরণকারি টিকটিকি গিরগিটি , সাপ নেউল , ছুঁচো ইঁদুর , আরশোলা মাকড়সা তারাও বোধহয় এতদিনে বসুবাড়ী ওরফে চশমাবাড়ীর নিয়ম কানুন বা আদব কায়দা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে গেছে ।
শাশুড়ি বৌমার ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে বিয়ের পর থেকেই , যা আজও অব্যাহত । মাঝে মধ্যে সিজ ফায়ার হয় বটে তবে তা ক্ষণস্থায়ী । সবাই মোটামুটি বুঝে গেছে এ লড়াই চলছে চলবে । দুই মহীয়সি রমণী প্রত্যাশা করেন তাঁরই অঙ্গুলি হেলনে জল পড়বে পাতা নড়বে । পাখি ডাকবে সুয্যি উঠবে । কিন্তু ‘এ্যক ম্যেয়ান মে দো তলবার’ তাই কি কখনো হয় ? বিউটিদেবী সম্প্রতি নিজের স্বামীর পিছনে গুপ্তচর বৃত্তি করার জন্য শালিখকে নিয়োগ করেছেন । শশধরবাবু হ্যাংলা পেটুক মানুষ সে কথা সর্বজন বিদিত । কিন্তু ইদানিং তাঁর রক্তে চিনির মাত্রা কিছু বেড়েছে । মুশকিল হল ‘চোরা না শোনে ধর্মের বাণী’ । হঠাৎ করেই চোখের আড়াল হয়ে যাওয়াটা বেশ কিছু দিন ধরে চলছে । গন্তব্য জগন্মোহিনী মিষ্টান্ন ভান্ডার । বাড়ীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । তাই এখানে তিনি নির্দ্বিধায় টপাটপ চালিয়ে যান । ফেরার সময় ভোগুর জন্য আনতে ভোলেন না । লুকিয়ে পাচার হয়ে যায় । শালিখ খবর সরবরাহ করে বখশিস পায় আর দিব্যি খোশ মেজাজে আছে । কিন্তু টাইম টু টাইম গিন্নীর ভর্ৎসনা মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে । সচেতন বোস মশাই এখন আর দোকানে বসে রসাস্বাদন করেন না । অন্য কোনো লোক মারফৎ ইপ্সিত বস্তু সংগ্রহ করে ঝিলের ধারে চলে আসেন । দেখা যাক এই ব্যবস্থা কতো দিন বজায় থাকে !

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।