কবি সম্পাদক এবাদুল হকের সঙ্গে আমার পরিচয় খুব বেশি হলে বছর দুয়েক। “আবার এসেছি ফিরে” পত্রিকার জন্য লেখা চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন। আমি ওনাকে ইনবক্সে জিজ্ঞাসা করলাম, কতগুলো লেখা পাঠাব? কবিতায় কি লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে? দিন তিনেক পরে উত্তর দিলেন, কোনো কিছুই সীমাবদ্ধতা নেই। আপনার খুশি মতো একাধিক কবিতা পাঠিয়ে দিন। কবিতা ভালো হওয়াটাই শর্ত। পছন্দ হলে সব কবিতাই প্রকাশ করা হবে।
কবিতা পাঠিয়ে দিলাম। অপেক্ষায় থাকি, কি উত্তর আসে। অনেকগুলো মাস কেটে গেল । কোনো উত্তর এলো না। বুঝতে পারলাম, আমার লেখা ওনার পছন্দ হয় নি। হঠাৎ দেখি “এবং পুনশ্চ” পত্রিকার জন্য আবার কবিতা চাইছেন। তখনও আমি জানি না, উনি দু দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। উনি চাইছিলেন টানা গদ্যে লেখা কবিতা। ভাবলাম আমার কবিতা তো ওনার পছন্দ হয় নি, আবার বিরক্ত করব? সাহস করে আবার একদিন ইনবক্সে ঢুকে পড়লাম। তখন আমি “মধ্যরাতের সংলাপ” সিরিজের কবিতাগুলো লিখছি। দু তিনটি পাঠালাম। উনি পড়ে বললেন, অসাধারণ কবিতা লিখেছেন তো আপনি। আমার সবগুলো চাই। আমি বললাম দাদা, সে তো সংখ্যায় অনেক। উনি বললেন, হোক না, আমি একশটা হলেও ছাপব। আর তো কথা চলে না। ঠিক এইসময় উনি আরও বললেন, আপনার অনেকগুলো কবিতা তো আমি আগেও প্রকাশ করেছি। আপনি পত্রিকা পান নি? বুঝতে পারলাম আমার আগের কবিতাগুলি তাহলে ওনার পছন্দ হয়েছে।
“এবং পুনশ্চ” পত্রিকায় “মধ্যরাতের সংলাপ” সিরিজের সবকটি কবিতা উনি প্রকাশ করলেন। এরপর যা ঘটেছিল সেটা তো আমার কবিজীবনকে ধন্য করেছে। উনি আমাকে না জানিয়ে অভিভাবকের মতো “মধ্যরাতের সংলাপ” -কে একফর্মার বহ আকারে প্রকাশ করে ফেললেন। শুধু তাই নয়, করোনার আবহাওয়ার মধ্যেই উনি সেই বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানও করে ফেললেন। পরে বুঝেছি এসব শুধু ওনার পক্ষেই সম্ভব। এমন মানুষ আমি জীবনে কখনও দেখি নি।
এবাদুল হক আমার জীবনে এক বিরলতম মানুষ। উনি পৃথিবীতে এসেছিলেন হাত উপুড় করতে। আমার পরম সৌভাগ্য, আমি ওনার মতো মানুষের কাছে আসতে পেরেছিলাম। উনি আমাকে আর আমার কবিতাকে ভালোবেসে ছিলেন।