• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৪৪)

পিকাশোর প্রেম পিকাশোর শিল্পসৃষ্টির উৎস – ১

Artist Françoise Gilot এর তখন ২২ বছর বয়েস, ১৯৪৪ সালে, পিকাশোর বয়েস তখন ৬৩ বছর। ফ্রাঙ্কোইস বলছেন, সাহসের দরকার যখন এরকম সম্পর্ক গড়ে উঠে। পিকাশো তাকে বলতেন, ‘মহিলারা হয় পাপোশ, নয়তো ঈশ্বরী।’ Françoise বললেন আমি তার ঈশ্বরী ছিলাম। Françoise এর বয়েস এখন ৯৫ বছর। ছবি আঁকেন এখনো। ১০ বছর ঘর করেন পিকাশোর সাথে। দুটি সন্তান হয়। পিকাশো তাকে নিয়ে অনেক ছবির অনুপ্রেরণা খুঁজে পান। ছবি আঁকেন।
সমাজে এরকম মহিলা দুই একজন হাজারে থাকেন। তারা নিজেরাও বড় হন যার কাছে যান তাকেও অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেন। এখানে Françoise এর কিছু ছবি দিলাম
Picasso and Françoise Gilot at the Côte d’Azur
বাম চিন্তা ভাবনা, মানে উল্টোসিধে চিন্তা জীবনের যৌবনের প্রথম দিকেই আসে। ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেই জীবন চলতি সমাজকে , বাপ ঠাকুরদার সমাজকে একবার ঝাঁকিয়ে দেখতে চায়, যদি উলটে দেওয়া হয় তাহলে কেমন হয়! পরিণত মানুষরা, পোড় খাওয়া মানুষরা, বড় বড় করে তাকায় তখন, আর রে রে করে ছুটে আসে, সংস্কার বা চলিত কাঁচের গ্লাসটা ভেঙ্গে যাবে বলে। তারা যৌবনকে থামিয়ে দেয়। কিন্তু দু একজনকে থামাতে পারেনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমাজ আমূল পরিবর্তনের পিছনে তাদের দুরদৃষ্টি।

ধরুন কি হয় বা হবে, যদি একটি ২১ বছরের ছেলে ৪৫ বছরের মহিলার প্রেমে পড়ে? পাত্র পাত্রী ছাড়া অন্যকারুর অসুবিধার হওয়ার কথা নয়। ভাল মন্দ পাত্র পাত্রী বুঝবে। একটা মানুষ যদি পূর্ণ স্বাধীন ব্যক্তি হয়ে জন্মায় বিবাহ প্রথা তার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছেনা? সে সারাজীবন একটি ভুলমানুষের সাথে পড়ে তার জীবন দুর্বিষহ হচ্ছেনা? সমাজ কি করে এসব চাপিয়ে দেয়? সমাজ তো কাউকে খাওয়ায় না। একটা মানুষ বন্দী হয়ে গেলে তার সকল কাজে বাধা আসে। এটা সামাজিক ক্ষতি।
বা ২১ বছরের একটি মেয়ে যদি তার চেয়ে ৪০ বছরের বড় কাউকে বিয়ে করে, অর্থাৎ ৬১ বছরের কাউকে বিয়ে করে, আমাদের সমাজ- একটা ছোটলোক শ্রেণি পাত্রলোকটিকে মেরে গাছে লটকে দেবে। মাঝারি শ্রেণী টা রসিকতা করে মজা লুটবে। আর বড়লোক শ্রেণীটা সমালোচনা করবে আর তার সাথে সাথে পাত্র পাত্রীকে বুঝাবে এটা ঠিক নয়। অর্থাৎতোমরা বিয়ে করে মজা নিওনা আমরা তোমাদের মত করে পারবোনা। আমাদের কষ্ট হবে। আর মুখে বলবে, লোকটা দুদিন পর মারা যাবে, পাত্রী কি করে খাবে? অর্থাৎ এই সিস্টেম হল মানুষের ঘাড়ে মানুষ বেঁচে থাকে। একজন আরেকজনকে শোষণ করে বেঁচে আছে। এটা কেউ বলবেনা, ঠিক আছে, তোর ভাল লেগেছে, তুই কর যদি তুই সবদিকে স্বাবলম্বী থাকিস। আর বুড়ো লোকটাকে বলবে ‘ আপনি মেয়েটার জীবন দিতে পারবেন? দায়িত্ব নিতে পারবেন? কয় পয়সা আছে আপনার? বাড়ি ঘর থাকলে মেয়েটির নামে লিখে দিন।
একটি মেয়ে বিয়ে করবে, তার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। জীবন নষ্ট হওয়া এখানে এত সোজা! কতমেয়ের বিয়ে ভেঙ্গেছে, স্বামী মারা গেছে, স্বামি ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে তারা সবাই মরে গেছে?
তাহলে আর কি সমস্যা থাকে বিয়ের ব্যাপারে বয়সসের?
শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমস্যা করে? না মানসিক স্তর একজনকে আরেকজনে নাগাল পায়না? রাতে খুন্সুটি করতে পারবেনা? না পারলে বিয়ে ভেঙ্গে আবার বিয়ে করবে। তাতে সমস্যা কোথায়? সমাজে উপরি স্তরে, মাঝারি স্তরে, ইটভাটায় লুকিয়ে হচ্ছেনা? প্রচলিত সমাজে একটা লোক, নারী পুরুষ- একাধিক প্রণয় করেনা? এরকম সব প্রশ্ন আমার জেগেছে। শিল্প সংস্কৃতির জগতে এসে এরকম অনেক ঘটনা দেখেছি যারা ৪০ বছরের ছোটবড় অথচ খুশীতে ঘর সংসার করেছে। সাধারণের মধ্যে তো আছেই। প্রেম জীবনে এক আবেগ তাড়িত ও জৈবিক বিষয়। একে ট্যাবু করে, কুসংস্কারে ফেলে জাতির প্রগতি স্তব্দ করে দেওয়া। আমি একথা বলবনা, প্রেম পরিণয় স্বাভাবিক ভাবে আসুক। প্রেম প্রণয় দুটি ব্যক্তির মধ্যেকার বিষয়, এর ভাল মন্দ এরাই বুঝুক। প্রেম ও আবেগ একটা মানুষকে অসীম উৎসাহ উদ্দীপনা এনে দেয়, এটা ঘটনা। উদ্দীপনা সবসময় মঙ্গলকামী।
বয়সের পার্থক্য, অপকার করেছে, এমন খবর আমি শুনিনি। বরং একই বয়সের স্বামীস্ত্রীরা মারামারি করে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে অনেক দেখেছি। ভারতের শিল্পী সাহিত্যিক, ফিল্ম লাইন- অনেক ঘটনা আছে যারা অধিক প্রণয় করেছে প্রকাশ্যে বা আড়ালে এবং তারা সুখী। তাদের প্রেম সমাজের কোন চুল বা তিল নাড়ায়নি।। যারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী সুখী। আজ আমি একটা ফরাসী নারীর ঘটনা বলছি। আমাদের বাংলার রমনী নয়।যারা মনে করে যৌনতা খুব মূল্যবান জিনিস, আর পরের ঘাড় ভেঙ্গে খাওয়ার জিনিস।বা বাঁচার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য এ লেখা নয়। যারা মনে করে, আমি সক্ষম, কাজ করে নিজেকে চালাতে পারি বা সুখী থাকতে পারি, তারাই সত্যি সুখি হন। আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে, এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে Françoise Gilot এর জন্ম। তিনি আইন নিয়ে পাশ করেন। বাপের ইচ্ছা মতো, আর মায়ের ইচ্ছা মতো ছবি আঁকা ইত্যাদি নানা শিক্ষকের কাছে ও নানা প্রতিষ্ঠানে শিখেছেন। ছবির প্রতি অগাধ ভালবাসা ১৯৪৩ সালে বিখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাশোর Pablo Picasso (1881-1973) কাছে নিয়ে এল।
চলুন একনজরে ফ্র্যাঙ্কোইস গিলটকে দেখিঃ
গিলট ১৯২১ সালে জন্মান, একজন ফরাসী শিল্প সমালোচক, এবং বেস্ট সেলিং লেখক। ভার্জিনিয়া উলফ নামে scholarly journal Virginia Woolf Quarterlyএকটি সাংস্কৃতিক পত্রিকার আর্ট ডিরেক্টর। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে Department of Fine Arts at the University of Southern California ১৯৭৬ থেকে ৮৩ সাল অবধি ফাইন আর্টসের বিভাগে শিক্ষকতা করেন।১৯৮০ – ৯০Guggenheim in New York City র সাথে কাজ করেন,কস্টুম, স্টেজ ও মুখোশ বানানোতে। ফ্রান্স সরকার তাকে Chevalier de la Légion d’Honneur in 1990 সম্মানিত করেন। তিনি নিউইয়র্ক ও প্যারিস শহরে তার কাজ ও বসবাস। আন্তর্জাতিক ভাবে তার ছবি ও কাজ প্রদর্শণ করেন। একজন সার্থক মহিলা শিল্পী, ৯৮ বছর বয়েস। এখনো ভালো আছেন।
২১ বছর বয়সে তার থেকে ৪০ বছরের বড় পিকাশোকে বিয়ে করেন। ১০ বছর 1943 to 1953 ঘর করেন, তাদের দুই সন্তান হয় Claude and Paloma।

গিলট পিকাশোকে ছেড়ে ১৯৫৫ তে আবার অন্য একজন শিল্পীকে Luc Simon বিয়ে করেন, তাদের এক কণ্যা হয় নাম Aurelia গিলটের এই সংসার ১৯৬২ অবধি, ৭ বছর টিঁকে ছিল। এরপর American polio vaccine pioneer Jonas Salk কে বিয়ে করেন প্যারিসে। এই বিয়ে টিঁকে ছিল ১৯৯৫ সালে জোনাসের মৃত্যু অবধি।
গিলট ফ্রান্সে Neuilly-sur-Seine, France জন্মান, তার বাবা মা Emile and Madeleine Renoult-Gilot, তার বাবা একজন ব্যবসায়ী ও মৃত্তিকা ও শষ্য বিশেষজ্ঞ। মা ওয়াটার কালার আর্টিস্ট। গিলট শৈশবে বাঁহাতে লিখতেন, তার বাবা জোর করে ডান হাতে লেখা শেখান, ফলে গিলটের দুই হাত সমান সমান দক্ষ ছিল। তার বাবা কঠিন প্রকৃতির মানুষ, মার কাছে ছবি আঁকা শেখা শুরু। তিনি ইংলিশ সাহিত্য নিয়ে English literature at Cambridge University and the British Institute in Paris (now University of London Institute in Paris) পড়াশুনা করেন। উকিল হওয়ার জন্য সকালে আইনের ক্লাশে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু ছবি আঁকার জন্য নিয়মিত ক্লাশ ফাঁকি দিতেন। দর্শণ ও সাহিত্য নিয়ে ১৯৩৪ সালে স্নাতক হন। ১৯৪৩এ তার প্রথম ছবির প্রদর্শনী করেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।