• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ১০)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা – ১০

আমরা বন্ধুরা গাল- গল্পে মেতে সেই জঙ্গলে পাহাড়ের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সাইকেল চালিয়ে। সামনে যে এক মিলিটারী জিপ দাঁড়িয়ে আছে পাত্তাই দেইনি। আমাদের এগিয়ে যেতে দেখে বাজখাঁই গলায় দুজন আর্মীম্যান আমাদের থামতে বলল– রোকো বাচ্চালোগ! আগে মত যাও। গণেশবাবা খাড়া হ্যায় সামনে, ওহী পে। মরোগে ক্যায়া?
আমরা ধপাধপ করে সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেলাম। মড়মড় করে গাছের ডালপালা ভাঙ্গবার আওয়াজ পেলাম। সেই নিস্তব্ধ জঙ্গলে এক ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি হল। সাইকেল নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে একদম হাতির মুখোমুখি। মিলিটারীরা আমাদের একদম চুপ করে থাকতে বলেছে, আমরা তাই রয়েছি। কতক্ষণ? জানিনা। সে আধঘন্টা হতে পারে আবার ঘন্টাখানেক! সব শুনশান নিস্তব্ধ হবার পর দেখলাম দূরে পাখিদের উড়ে যাওয়া আর ভেসে আসতে লাগলো কিচিরমিচির।

(Crimson sunbird,Mahananda Wildlife Sanctury , 14th April’2021. ফটো- নেচার ফটোগ্রাফার পাপুন ভট্টাচার্য্য।)
মিলিটারীরা বলল— আমরা আগে জিপ নিয়ে চলেছি, তোমরা একটু বাদে এসো। ওরা জিপ নিয়ে এগুতেই, আমরাও সাইকেলে চাপলাম। কিছুটা গিয়ে একটা বাঁক নিলেই বেশ অনেকটা নেমে আসা যায়। রাস্তাটি সোজা এরপর খাপরাইল ক্যান্টনমেন্ট হয়ে মাটিগাড়া- মিরিক রোডে পড়েছে। এখন তো প্রতিমুহূর্তে অসংখ্য গাড়ি চলে এই রাস্তায়। সেসময় তা প্রায় চল্লিশ বছর আগের কথা, একদম অল্পস্বল্প গাড়ি চলতে দেখা যেত।

(গ্রীষ্মে মহানন্দা শুকিয়ে কাঠ। গুলমাখোলা ফরেস্টে। ফটো- নেচার ফটোগ্রাফার পাপুন ভট্টাচার্য্য।)
বাঁকের মুখে দুদিকেই গভীর জঙ্গল, নিচে নামতেই ছোট্ট এক কালভার্ট। ডালপালা ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে দস্যুরা আর তাদের বিষ্ঠা ছড়ানো। বুঝলাম ঐ গভীর জঙ্গলে এখনও দামাল হাতিগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরাও সাইকেলে চেপে খাপরাইল ক্যাম্পের দিকে এগুলাম। রোহিণী নদীর পারে এসে দাঁড়ালাম। পাহাড় জঙ্গল নদী সবমিলিয়ে অপরূপ এক দৃশ্য দেখলাম রোহিণী নদীর দিকে উত্তরমুখে তাকিয়ে।

(দিগন্তে জঙ্গলের রেখা। ফটো- পাপুন ভট্টাচার্য্য।)
এক কথায় চোখ জুড়িয়ে যায়। তখনও আর এখনও তাই হয় এখানে এলে। এখন তো সুন্দর একটা সাজানো- গুছানো পার্ক হয়েছে পাশে, মধুবন নাম তার। তবে সেই আঙ্কেলের ক্যান্টিন আর নেই এখন এই পার্কে। কী সুন্দর কত কী খাবার পাওয়া যেত একসময়।

(Children are the most important resource for future, 13/04/2021 জঙ্গলের মাঝে প্রকৃতিতে পড়াশোনা চলছে। ফটো- নেচার ফটোগ্রাফার পাপুন ভট্টাচার্য্য।)
এই নির্মল প্রকৃতির মাঝে এলে দেখবে তোমাদের মনটাও কেমন ফুরফুরে হয়ে যাবে। হিমালয়ের বরফগলা জলের ধারা, জঙ্গলে রঙ- বেরঙের পাখি, রাতে শ্বাপদের হুঙ্কার, চা- বাগানের সবুজে, নুড়ি- পাথরের গড়াগড়িতে, শাল- সেগুনের গন্ধমাখা এখানকার প্রকৃতি যেন ঠিক একটুকরো স্বর্গ!
চলে তো এসেছি সাইকেলে চেপে প্রকৃতির নেশায় দেখতে দেখতে এত দূর। এবারে ফিরতে হবে তো! জানিনা বাড়ি থেকে কত কিলোমিটার দূরে? সময় জানলাম দুপুর দুটো। দুপুরের খাওয়া তো তখন ছুটির দিনে দেড়টার মধ্যে। তবে উপায়? আমরা এবারে ফিরে চললাম বাড়ির দিকে দক্ষিণে।

এরপর আবার
সামনের শনিবার———

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।