• Uncategorized
  • 0

মার্গে অনন্য সম্মান ডঃ সুকান্ত কর্মকার (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার 

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৪৩
বিষয় – মনমাঝি / মধুমাস

ফিরে এসো

অনন্যা অফিস থেকে ফিরে আসে নির্দিষ্ট সময়েই। কয়েক বছর আগে এই দিনটি তার কাছে অন্যরকম ছিল। কোন কোন বছর ছুটি নিয়েছে বা তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। এখন সবকিছু হারিয়ে গেছে।
অনন্যা বাড়িতে এসে স্নান সেরে নিজের পোষাক বদলে ছেলের কাছে আসে। স্কুলের হোম টাস্কের কিছু অংশ দেখিয়ে দিয়ে চলে আসে দোতলার খোলা ব্যালকনিতে। তখন বৈশাখী চাঁদের আলোয় ভেসে উঠেছে
রাতের আকাশ। তারই মাঝে তারাদের মিটিমিটি চাউনি। ব্যালকনির গা বেয়ে নীচের থেকে উঠে আসা মাধবীলতা গাছটা একই রকমভাবে রঙিন ফুলের ঝালর গায়ে চাপিয়ে খুশিতে দুলছে। হালকা সুবাস ছড়িয়ে দিতে চাইছে অনাবিল সুখে। ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় গা এলিয়ে বসে পড়ে অনন্যা। আজকের দিনটা সৌমেনের জন্মদিন। একে একে পুরানো স্মৃতিগুলো ভিড় করতে থাকে মনের মাঝে। তখন বাড়িতে ছোটখাট একটা উৎসবের আয়োজন হত। কেক কেনার দায়িত্ব থাকতো অনন্যার ওপর। বাড়িতে শাশুড়িমা ছেলের জন্য বানাতেন পায়েস, মাংস আরও নানাবিধ উপাদেয় খাদ্য সামগ্রী। অনন্যার উপহার দেওয়া পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়ে সৌমেন এসে কেক কাটতো। বেশ সুখে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। কত সুখের মুহূর্ত কেটেছে
তাদের এই ব্যালকনির চেনা পরিসরে। তারপর বুবাইয়ের জন্ম হল। নাতিকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে কী উচ্ছ্বাস !
এরপর ঘটে গেল সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বুবাইয়ের বয়স তখন আড়াই বছর। অফিসের কাজ নিয়ে দু-তিন দিনের জন্য বিহারে গেছিল সৌমেন। যেদিন ফেরার কথা সেদিন আর ফিরে এল না। মোবাইলটাও বন্ধ। অফিসে খোঁজ নিয়ে অনন্যা জেনেছিল কাজ সেরে যথা সময়ে বেরিয়ে এসেছিল সে। তারপর থেকে সে নিখোঁজ। থানা-পুলিশ, হাসপাতালের মর্গ, কাগজে বিজ্ঞাপন, কাজের জায়গায় গিয়েও কোন কিনারা হয়নি। সেই থেকে দেখতে দেখতে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। অনন্যা এখনও মনে মনে বিশ্বাস করে সৌমেন জীবিত। হয়তো কোন অভিমান নিয়ে দূরে সরে গেছে ! এখনও চুলের ফাঁকে সিঁদুরের চিহ্নটা সযত্নে ঢেকে রাখে। এত ভাবনার সাথে বেরিয়ে আসে শুধু দীর্ঘশ্বাস। একবুক শূণ্যতাকে আশ্রয় করে আশায় দিন গুনে যদি সৌমেন একবার তার কাছে ফিরে আসে। অনন্যার ভাবনার সাগরে ভাসতে ভাসতে পেরিয়ে যায় সময়।
“মা, আমার হোম টাস্ক সব শেষ হয়ে গেছে, খিদে পেয়েছে, খেতে দেবে চলো,” বলে পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বুবাই। বুবাইয়ের আদরে সম্বিৎ ফিরে আসে অনন্যার। শক্ত করে চেপে ধরে বুবাইয়ের হাত, তারপর ধীরে ধীরে উঠে আসে এক অন্য টানে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *