• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সুদীপ পাঠক (পর্ব – ১)

বুন্দি ও তার অলৌকিক চশমা – ১

বিদ্যুৎপর্ণা ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসে । তার ভীষণ ইচ্ছে বড় হয়ে সে ভারতের জাতীয় মহিলা ফুটবল টিমের সদস্য হয় । শুধু তাই নয় সঙ্গে আরো একটু আছে । মনোবাসনার প্রথমাংশ সে নিজেই সকলের কাছে প্রকাশ করে বলে । আর বাকী অর্ধাংশটুকু মনের ভিতরে রাখা আছে অতি গোপনে , সন্তর্পণে। সেটা কি ? কৌতূহলী হয়ে উঠবে সকলেই ! আসলে সে উক্ত দলের অধিনায়ক অথবা বলা ভালো অধিনায়িকা হতে চায় । এখন থেকেই নিজেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে ।
চোখ বন্ধ করলে ছবিটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে । তার গায়ে ন্যাশানাল টিমের সি ব্লু কালারের জার্সি যার পিঠে বড় সাদা হরফে লেখা নাম্বার টেন আর বাম হাতে একটা ব্যান্ড আটকানো যাতে বোল্ড এ্যান্ড ক্যাপিটালে শুধু একটা লেটার লেখা : সি । অর্থাৎ দ্যা ক্যাপ্টেন অফ্ দ্যা শিপ । দ্যা স্কিপার , দ্যা ওয়ারিয়র , দ্যা গ্ল্যাডিয়েটর … আরো আরো অনেক কিছু । ইচ্ছের ফানুস ক্রমশ বড় হতেই থাকে ।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচের আসর বসেছে ইউরোপের কোনো এক নামজাদা শহরে । চোখ ধাঁধিয়ে দেবার মতন জাকজমক । টসে জিতেছে ভারত , সুতরাং ফার্স্ট কিক করবে টিম ইন্ডিয়া । নতুন চকচকে বল বসানো হয়েছে সেন্টারে । রেফারির হুইসেল বেজে উঠলো আর সঙ্গে সঙ্গে শট নিতে দেখা গেলো দলনেত্রী বিদ্যুৎপর্ণাকে । ছোট্ট একটা পাসে সতীর্থ রাইট উইঙ্গারকে বল বাড়িয়ে দেওয়ার পরই নিজের পজিশন পাল্টে ফেলেছে সে । তীরের গতিতে ছুটে চলে এসেছে বিপক্ষ দলের বক্সের সামনে । আর ঠিক তখনই লম্বা পাসে উড়ে আসা বলটিকে খুব সহজেই ট্যাকেল করে নিল সে । তারপর শুরু হলো ড্রিপলিং । অবশ্য একে জাগলিং ও বলা যায় । দু’পায়ের জাদুতে প্রতিপক্ষের চার চারজন খেলোয়াড়ের চোখে ধুলো দিয়ে সে এখন পেনাল্টি পয়েন্টে পৌঁছে গেছে । সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়ে সে এখন একা । সামনে খালি তিন কাঠি আর তার নিচে হনুমানের মতন লাফালাফি করছে ওদের গোলকিপার । মনে হচ্ছে বিপক্ষ দলের গোল রক্ষক যথেষ্ঠ অসহায় বোধ করছে ।
বিদ্যুৎপর্ণা গোলির চোখে দিকে তাকিয়ে এক সেকেন্ডের কম সময়ে বুঝে গেলো যে সে নার্ভাস । একে ধোঁকা দেওয়া তার কাছে জলভাত । শুধু একটা অসতর্ক মুহূর্তের অপেক্ষা ! কি আশ্চর্য ! ভাবতে না ভাবতেই সুযোগ এসে গেল । গোলকিপার ধৈর্য হারিয়ে বারপোষ্ট ছেড়ে এগিয়ে আসছে । ভাবছে বোধ হয় জোরালো শটে উড়িয়ে দিতে পারবে বলটা । কিম্বা ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরে ফেলবে , তার তো হাত দিয়ে বল ধরতে কোনো বাধা নেই । কিন্তু দুটোর কোনোটাই হলো না । তার দুর্বলতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র দেরী করলো না ক্যাপ্টেন ইন্ডিয়া । ডায়াবায়া ডোজ করে খুব হাল্কা চালে লিফ্ট করে দিলো সে বলটা , যেটা গোলকিপারের ঠিক মাথার ওপর দিয়ে স্পিন করতে করতে সোজা চলে গিয়ে ক্রস বারের দু’ইঞ্চি নিচ দিয়ে ঢুকে জড়িয়ে গেলো জালে । গো ও ও ও ল ! গোল ! গোল ! এতো অকল্পনীয় ! খেলা শুরু হবার এক মিনিটের মধ্যেই প্রথম গোল । চাক্ষুষ দেখেও বিশ্বাস করা মুশকিল ! গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে তুমুল চিৎকার , কান পাতা দায় । মনে হচ্ছে যেন মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে ! দুটো শব্দ আছড়ে পড়ছে বারংবার :
ইন্ডিয়া … ইন্ডিয়া … ইন্ডিয়া …
আর
বুন্দি … বুন্দি … বুন্দি … ।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *