• Uncategorized
  • 0

|| আজ থিসরাসের জন্মদিন || লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

আজ থিসরাসের জন্মদিন

ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে ছিল এ টি দেবের ডিকশনারি। একটি দেখে ইংরেজি শব্দের অর্থ মিলত। আরেকটি ছিল বাংলা থেকে ইংরেজি। অনুবাদ করতে গেলে কাজে লাগত। বাবা বই পছন্দ করতেন বলে কয়েক বৎসর বাদে সংসদের অভিধান এনে দিলেন। ইংরেজি থেকে বাংলা আর বাংলা থেকে বাংলা। ছোট ভাইবোনেদের জন্য ছিল কমন ওয়ার্ডস। ইংরেজি পড়ার সময় বাবা অভিধান ঘাঁটতে উৎসাহ দিতেন। সঠিক অর্থ জানানোর জন্য সেই উৎসাহ। পরে পরে আমাদের বাড়িতে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও ওয়েবস্টার ডিকশনারি এলেন। এলেন সুবলবাবুর অভিধান। মায়ের ছিল আনন্দবাজারের শব্দছক সমাধানের দৈনিক অভ্যাস। বাবা উৎসাহ দিয়ে এনে দিলেন চলন্তিকা। এল পৌরাণিক অভিধান। আত্মদীপা বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও পড়তে পারেন ভেবে এলেন বিজ্ঞান বিষয়ক অনেকগুলি ডিকশনারি। অক্সফোর্ড ও পেঙ্গুইনের। মানসীর জাপানি ভাষা শিক্ষার্থে একাধিক ডিকশনারি। আমার আইন পাঠের সূত্রে একাধিক ডিকশনারি। তালিকা আরো দীর্ঘ।
বহু রকম ডিকশনারি থাকলেও অনেক আগে থিসরাস আমাদের ছিল না। মায়ের শব্দছক সমাধানে উৎসাহ দিতে এল সমার্থ শব্দকোষ, আর মণিমঞ্জুষা। সেই যেন আমাদের বাড়িতে প্রথম থিসরাস। তার পরে আরো কয়েকটি অবতারে থিসরাস এলেন।
আজ থিসরাসের জন্মদিন। ১৮৫২ সালে আজকের দিনেই প্রথম প্রকাশ পায় পিটার রোজেট এর থিসরাস।
আমাদের বাঙালি কবি লিখেছিলেন, শরতে শেফালি কুড়োতে কি মজা, লেখে কি তা অভিধানে?  কিন্তু ভাল করে ভাষা শিক্ষা করতে গেলে অভিধান ছিল অবশ‍্য প্রয়োজনীয়। আমাদের বাংলা ভাষায় আধুনিক যুগে একমাত্র মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখায় “ইরম্মদ” শব্দটি আমায় প্রথম পাঠে চমকে দিয়েছিল। বিদ্যুৎ বোঝাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় কত না শব্দ পেয়েছি তড়িৎ বাজ বিজুলি বিজুরি দামিনী অশনি চপলা…. কিন্তু ইরম্মদ! পদ্মফুলের অনেক রকম নাম জানতাম। কিন্তু “তামরস” আর “কোকনদ” শব্দ দুটিকে অসাধারণ দক্ষতায় প্রয়োগ করেছিলেন মাইকেল। বলা দরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অল্প বয়সেই মেঘনাদবধ কাব‍্য পড়েছিলেন। আর শক্ত শব্দ পেলে লিখে রাখার অভ‍্যাস তাঁর ছিল।
অভিধান বলতে যদি শব্দকোষ বুঝতে হয়, তাহলে তা অনেক দিন আগে থেকেই মানুষের সভ‍্যতায় ছিল। সংস্কৃত ভাষাতে প্রথম অভিধান সংকলন করেন অমরসিংহ। তিনি চতুর্থ শতাব্দীর মানুষ। কাব‍্যের ছাঁদে দশহাজার শব্দ নিয়ে “অমরকোষ” নামে অভিধান লিখেছিলেন তিনি। অনেক পরে ১৩২০ সালে হিন্দুস্তানি ও পারসীক ভাষার শব্দ নিয়ে “খালিক ই বারি” সংকলন করেন আমীর খসরু।  ইংরেজ পাঠক যাতে কঠিন লাতিন ভাষার পুঁথি পড়তে পারেন, তাই গারল‍্যাণ্ডের  জনৈক জন চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ১২২০ সালে একটি শব্দার্থ সংকলন করে তাকে “ডিকশনারিয়াস” অভিধা দিয়েছিলেন। ১৫৮২ সালে রিচার্ড মালকাস্টার একটি শব্দ সংকলন করেন। ওর নাম দিয়েছিলেন “এলিমেন্টারি”। তবে শব্দগুলিকে অকারাদিক্রমে সাজানোর কথা তাঁর মনে হয় নি। ১৬০৪ সালে রবার্ট কাউড্রে কিছু শব্দ অকারাদিক্রমে সাজিয়ে গুছিয়ে অর্থসহ প্রকাশ করেন। নাম দেন “এ টেবিল অ্যালফাবেটিক‍্যাল”।
 ১৭৫৫ সালে স‍্যামুয়েল জনসন সংকলন করেন “এ ডিকশনারি অফ ইংলিশ ল‍্যাঙ্গুয়েজ”। আমেরিকাতে নোয়া ওয়েবস্টার  ডিকশনারিকে আধুনিক রূপ দেবার চেষ্টা করলেন। ডিকশনারি লিখবেন বলে তিনি নিজেকে নানাভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন। আঠাশটি ভাষা শিক্ষা করেছিলেন তিনি। হিব্রু ফ্রেঞ্চ জার্মান গ্রীক লাতিন তিনি শিখেছিলেন। এর উপর যিশু খ্রীস্ট যে ভাষায় কথা বলতেন, সেই আরামাইক ভাষাও তিনি শিখেছিলেন। শুনলে অবাক হতে হয়,  তাঁর ভাষা শিক্ষার তালিকায় ছিল সংস্কৃত , আরবী ও ফারসী।
১৮০৬ সালে নোয়া ওয়েবস্টার অভিধান লেখার প্রথম চেষ্টা করেন। পর বৎসর তাকে আরো বিকশিত করেন। তিনি বানান ও উচ্চারণ বিষয়ে খুব জোর দিতেন। সাতাশ বৎসরের প্রবল চেষ্টায় ইংল্যান্ডের কেমব্রিজের একটি বোর্ডিং হাউসে বসে ১৮২৫ সালের জানুয়ারিতে সংকলন সম্পন্ন করেন। ১৮২৮ এ প্রথম  প্রকাশিত হয় নোয়া ওয়েবস্টার এর ডিকশনারি। সংকলনের নাম ছিল “অ্যান আমেরিকান ডিকশনারি অফ দি ইংলিশ ল‍্যাঙ্গুয়েজ”। এতে সত্তর হাজার শব্দ ছিল, যার মধ‍্যে আগে আর কোনো অভিধানে স্থান পায় নি এমন বারো হাজার শব্দ ছিল। ১৮৪০ সালে এই ডিকশনারির দ্বিতীয় সংস্করণ হয়। নোয়া ওয়েবস্টার জন্মেছিলেন ১৭৫৮ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখে। আর প্রয়াত হন ২৮ মে, ১৮৪৩।
নোয়ার প্রায় সম সময়েই ইংরেজি ভাষার শব্দ ও শব্দার্থ নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন আর এক দিকপাল ব‍্যক্তিত্ব। তিনি পিটার মার্ক রোজেট (১৭৭৯ – ১৮৬৯)।  তিনি একটি শব্দের সমার্থক শব্দগুলিকে এক জায়গায় আনলেন। জন্ম নিল “থিসরাস”। ১৮০৫ সালেই পিটার সাহেব থিসরাস প্রস্তুত করে ফেলেছেন। কিন্তু জনগণের কাছে তুলে ধরেন ১৮৫২ সালের ঊনত্রিশে এপ্রিল তারিখে। সংকলনের নাম দিয়েছিলেন “থিসরাস অফ ইংলিশ ওয়ার্ডস অ্যাণ্ড ফ্রেজ়েস”। প্রথম সংকলনে পিটার সাহেব পনের হাজার শব্দ নিয়ে কাজ করেন। পরবর্তী প্রতিটি সংস্করণে থিসরাস আরো আরো বিকশিত হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ‍্যোগে ইংরেজি অভিধান তৈরি শুরু হয় ১৮৮৪ সালে। ১৯২৮ সালে বারোটি ভলিউমে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি তিনমাসে এই অভিধানকে আপডেট করে চলেছেন প্রকাশক সংকলক গবেষকদের একটা অসাধারণ টিম।
আজ থিসরাসের জন্মদিনে এসব কথা মনে এল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।