প্রবন্ধে রতন বসাক

স্বাধীন ও মুক্ত জীবন প্রত্যেকটি জীবই চায়

স্বাধীন অর্থাৎ মুক্ত থাকতে কে না চায় কিংবা ভালোবাসে না এই জগতে ? আমার যতদূর বিশ্বাস কোন প্রাণীই বদ্ধ কিংবা পরাধীন থাকতে চায় না । আমরা জানি যে বৃক্ষেরও প্রাণ আছে তাই বৃক্ষও চায় স্বাধীন ও মুক্ত থাকতে । আমরা যদি কোন বৃক্ষকে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না করি, তাহলে বৃক্ষও দেখা যায় নিজের মতো এগিয়ে চলতে থাকে । শুধু মানুষ কেন, কোন জীবই পরাধীন কিংবা বদ্ধ থাকতে পছন্দ করে না ।
দেখা গেছে আমরা অনেকেই পশুপাখি গৃহে পালন করে থাকি । তাদের বেঁধে কিংবা খাঁচার মধ্যে রেখে দিলে যতটা না খুশি থাকে, তার চেয়ে অনেক বেশী খুশি থাকে তাদের যদি আমরা বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে রাখি । পথের কুকুর কিংবা বন জঙ্গলের পশু পাখিরা অনেক স্বাধীন থাকে নিজেদের মতো করে । তাদেরই আমরা ধরে এনে বাড়িতে রেখে দিয়ে ঠিকমতো পরিচর্যা করি ও খাওয়া-দাওয়া দিই । তাতেও তারা কিন্তু ততটা সুখে থাকতে পারে না । কেননা তখন তারা পরাধীন হয়ে যায় নিজের মতো আর চলতে ফিরতে পারে না তাই ।
আমার জন্মস্থান হলো ভারতবর্ষ । এই ভারতবর্ষ প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি পরাধীন ছিল বিদেশী ইংরেজদের হাতে । আমার দেশ তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত ছিল । তাই বিদেশি ইংরেজরা আমাদের দেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে । আর আমাদের দেশের থেকে লাভের অংশ নিজের দেশে পাঠাতে থাকে । ধীরে ধীরে তারা আমাদের দেশের নিরীহ মানুষদের আয়ত্তে করে নিয়ে, তাদের দিয়ে জোরজবস্তি ব্যবসার কাজে লাগায় । কেউ তাদের কথায় কাজ করতে না রাজি হলে, তার ওপর অত্যাচার করত তারা ।
এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসার বাহানায় আমাদের দেশের শাসনভার নিজেদের আয়ত্তে করে নেয় । আর জোর জুলুম ও অত্যাচার করতে থাকে আমাদের দেশের নিরীহ মানুষদের ওপর তাদের ব্যবসার কাজের জন্য । এই ভাবেই আমাদের দেশ ধীরে ধীরে পরাধীন হয়ে যায় ওদের হাতে । এরপর আমার দেশের মানুষেরা আর নিজের স্বাধীন মতো চলাফেরা বা কিছুই করতে পারত না । ওদের রক্ত চক্ষুর সামনে দিনের পর দিন বিপর্যস্ত হতে থাকে নিরীহ সব মানুষরা আমার দেশের ।
সব কিছুরই একটা সীমা থাকে । তাই ওদের অত্যাচার যখন চরমে পৌঁছে যায়, তখন আমার দেশের বীর মা’য়ের বীর সন্তানেরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দেয় । দেশের কোণে কোণে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে । অনেক বীর সেনানী দলনেতা হয়ে দেশকে মুক্ত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন সাধারণ মানুষদের নিজে সবার সামনে থেকে । এর জন্য তারা তাদের নিজের জীবন বলিদান দিতেও কেউ পিছপা হননি । প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে ও জীবন দান করতে হয়েছে ।
সবার মনে একটাই প্রতিজ্ঞা ছিল যে, হয় মরবো নয় দেশকে মুক্ত করবো । এরপর বিদ্রোহ, আন্দোলন ও আইন অমান্য আরো জোরদার হয়ে যাওয়ার পর এক সময়ে ইংরেজরা নত স্বীকার করে । আমার দেশ ভারতবর্ষ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট । এরপর ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী তারিখে নতুন সংবিধান রচনা হয় আমার দেশের জন্য । তখন থেকেই আমরা পুরোপুরি স্বাধীন হয়ে যাই আমার দেশে ।
স্বাধীনতা হলো এমন একটা জিনিস যেটা কোনো জীবই চায়না হারাতে । না খেয়ে কষ্ট করে দিন কাটাবে কিন্তু পরাধীন কোন মতেই থাকতে চায় না কেউই । নিজের ইচ্ছে মতো কথা বলবো, যেখানে খুশি সেখানে যাবো, আর যা কিছুই আমার জীবনে আমি করবো ; সব আমি নিজের ইচ্ছা মতোই করতে পারবো । এমন স্বাধীনভাবে থাকতে প্রত্যেকটা প্রাণীই চায় । স্বাধীনতা ও মুক্ত জীবন মনকে খুশি ও আনন্দে ভরে দেয় ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।