সে এক রােববারের কথা। সকালে উঠেই বাজার যাবার তাড়া থাকে । আর এই বয়সে আমার মত বেশির ভাগ পেনশনারদের বাজার যাওয়াটা শুধু নিত্যনৈমিত্তিক কাজ নয় , এটা একটা নেশার মত হয়ে যায়। করােনাকালে বাজার যাওয়ার আগে স্যানিটাইজার মাস্ক এসব বাড়তি অথচ বাধ্যতামূলক নিয়মবিধে তাে থাকেই। বাজারে ঢুকেই ফলের দোকানের কাছে আসতেই হঠাৎ এক ভদ্রলােক আমার পথ আটকে দাঁড়ালেন। খুব পরিচিতের মত আন্তরিকভাবে আমার হাতদুটো ধরে বললেন -কি রে , ক্যামন আছিস ? দুজনারা মুখে মাস্ক থাকার ফলে আমি ওনাকে চিনতে পারছিলাম না। আর সেজন্য মনে মনে খুব সঙ্কোচ হচ্ছিল। নিশ্চয়ই খুব কাছের পরিচিত মানুষ হবেন তাই আমি চেনার ভান করেই ওনাকে বললাম-ভালাে , আপনার কি খবর ? আমাকে আরাে অবাক করে দিয়ে বললেন -এর মধ্যে একদিন বাড়িতে আয় , অনেক কথা আছে আর অনেক কাজ করার আছে । বললাম-ঠিক আছে যাবাে । উনি বললেন-আসবি কিন্তু , আমার ফোন নম্বরটা নিয়ে নে, সেভ করে রাখ । আমিও ওনার ফোন নম্বরটা নিলাম কিন্তু কি নামে সেভ করবাে সেটা আর ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম না, কারণ এত কথাবার্তার পর যদি উনি বুঝতে পারেন যে ওনাকে আমি চিনতেই পারিনি তাহলে ওনার খারাপ লাগতে পারে। বাড়িতে ফিরে প্রাণপন চেষ্টা করলাম মনে করার । কে হতে পারে লােকটা ! কিছুতেই মনে করতে পারলাম না বলে একটা ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল।
এরপর আরেক রােববার যথারীতি বাজারের ভীড় ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় দেখি সেই ভদ্রলােক আমার পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করছেন-কি রে , ক্যামন আছিস ? তারপর সেই একই সংলাপ বলে গেলেন আমার পাশের লােকটিকে। ফোন নম্বরও দিলেন। আমাকে কিন্তু এবারে দেখেও চিনতেই পারলেন না! এবারে বুঝতে পারলাম যে এই সুবেশ মধ্যবিত্ত চেহারার ভদ্রলােক প্রকৃতিস্থ নন। প্রতিদিন কতজনকে যে বলে বেড়াচ্ছেন অনেক কাজ করার আছে। একটা স্বাভাবিক মানুষের মনের ভিতর অলক্ষ্যে কোন অঘটনের ফলে ওলােটপালট হয়ে যায় সবকিছু কে জানে! কিছু অপূর্ণ স্বপ্ন জ্বালিয়ে খায়। চন্দ্রাহত মগজের আনাচকানাচ । সবাইকে জানাতে চায় অনেক কিছু করার আছে । বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরলাম।