|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় শ্রীতন্বী চক্রবর্তী
by
·
Published
· Updated
রডোডেনড্রন
-“তুমি বললে না তো জর্জ কিভাবে তোমায় বেহালা বাজিয়ে শুনিয়েছিল? “, হরিণ-নয়না একরত্তি মেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান ছড়িয়ে দিলো একরাশ|
-“কি বলবো? ১৮ই মে, ২০১৪| পাহাড়ি কলেজে ও প্রিন্সিপাল ছিল, আমাদের দেখা হলো, তারপরেই সব গোলমাল,ভালোবেসে ফেললাম”, আমার ঠোঁটে কথাগুলো সুতোছেঁড়া বিকেলের বাষ্প হয়ে নিভে গেল।
-“রডোডেনড্রন? নাটকের ক্লাস? কমিউনিটি সার্ভিস? বলবে তো নাকি”- হরিণ-নয়না সদাচঞ্চল।
আমার হাতের আঙ্গুলগুলো নিয়ে একমনে কাটাকুটি খেলে চলেছে, আর মাঝেমাঝেই মিচকি একটা হাসি খেলে যাচ্ছে তার গালের দুধারে, ঠিক যেমন…ধুর এই এক সমস্যা হয়েছে আমার। লাল, নীল, সবুজ ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপের একঘেয়ে বিচ্ছিরি গন্ধে একটা গা-গুলানো পরিস্থিতি, কিন্ত তাতেও…জিভ শুকিয়ে আসছে, রডোডেন্ড্রনের লালগুলো বড্ডো বেশি প্রকট হয়ে উঠছে আজকাল।
-“জর্জ তার মানে আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি, তাইনা? হরিণ-নয়না এবার কিছুটা বিমর্ষ, চোখেমুখে হতাশার আল্পনা।
-“কে বললো তোকে? মায়ের কথা তোর বিশ্বাস হয়না?” আমি ওর কোঁকড়ানো চুলগুলো সযত্নে ঘেঁটে দিলাম। জর্জ, আমি, গীর্জা, ঝড়ের রাত আর নদীতে তখন শুধুই দাঁড় টানার ছলাৎ ছলাৎ। জর্জ তার প্রিয় রডোডেন্ড্রনগুলো সারারাত বুকের কাছে আঁকড়ে ছিলো।আর তারপর সে চলে গেল, আমি রয়ে গেলাম অপাংক্তেয়।
খুব জোর বৃষ্টি এলো। উঠে গিয়ে জানালাগুলো বন্ধ করলাম। হরিণ-নয়না ঘুমোচ্ছে।
-“একি? এই মহিলার মৃত্যুর কারণ তো ভয়ানক। একজন সাইকোসোমাটিক ডিসর্ডার আর হ্যালুসিনেশনের পেশেন্টকে এইসব অপরিমিত মাত্রার ওষুধ কে দিয়েছে? ওনার তো এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর এই মানসিক চিকিৎসালয়ে অনেক কিছুই বারণ ছিলো।উনি তো রীতিমতো হ্যালুসিনেট করতেন ওনার একটি মেয়ে আছে, দেখুন ডায়েরিতে লেখা, ‘হরিণ-নয়না’। এবার মেডিক্যাল বোর্ডকে কে জবাব দেবে?”, পাহাড়ের গ্রামের একটি মানসিক স্বাস্থকেন্দ্র, মেট্রন অগ্নিশর্মা।
ঐদিনই খবরের কাগজে প্রকাশিত একটি খবর: সেইন্ট মাইকেল কলেজের প্রিন্সিপালের আকস্মিক মৃত্যু। কারণ অজানা।
শুধু কলেজের রাতপ্রহরী দেখতে পেয়েছিলো ফাদারের ডায়েরিতে চাপাপড়া নিস্ষ্প্রভ রডোডেনড্রন। ক্যালেন্ডারের তারিখটা দেখাচ্ছিল ১৮ই মে, ২০১৯।