• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় প্রদীপ আচার্য

আত্মজার আয়নায়

আব্বু তুমি ক’দিন অফিস যাচ্ছ না যে? -মৌটুসির প্রশ্নের সত্যি উত্তরটা দিতে পারেন না মোনাজাত সাহেব। বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা তিনি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মৌটুসী তার একমাত্র মেয়ে। কদিন হলো রাতে খানিকটা ঘুমের পরই জেগে উঠছেন তিনি। শেষ রাতটুকু কাটছে নিদ্রাহীন। চরম দুশ্চিন্তায় কাটছে একেকটা মুহূর্ত। ব্যাংকের একটি ভুয়া ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করে তিনি সহ কয়েকজন সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। এ কদিনে জীবনে নতুন করে উপলব্ধি করছেন অনেক কিছু। ভোরের আযান কানে আসে এখন। মনে পড়ে সেই শৈশবে আব্বা ভোরের নামাষ শেষে এসে তাদের ভাই-বোনদের ডেকে তুলতেন। আজ সেসব বিস্মৃত প্রায়। এলোমেলো ভাবনার মাঝে হানা দেয় মিনার কণ্ঠস্বর, ঘুমের ঘোরে মিনা বলে, ঘুমানোর চেষ্টা করো। বিছানা ছেড়ে ওঠেন তিনি। ডাইনিং রুমে বাতি জ্বালিয়ে পানি খেতে গিয়ে চোখে পড়ে টেবিলের ওপর মৌটুসির স্কুলের অনলাইন পরীক্ষার কয়েকটি খাতা। উল্টেপাল্টে দেখেন। রুমে গিয়ে মিনাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। মিনা বুঝতে পারে না কী বলতে চায় মোনাজাত।
মিনা, মৌটুসি পরীক্ষায় এত কম নাম্বার পেয়েছে কেন?
মিনা বলে, যেমন লিখেছে তেমন নাম্বার পেয়েছে। মোনাজাত উত্তেজিত হয়ে বলে, বাসায় বসে অনলাইন পরীক্ষায় তো দেখে দেখেই লিখতে পারে। কেউ তো দেখত না।
মিনা মৃদুকণ্ঠে বলে, বাবা হয়েছ ঠিকই, মেয়েকে চেনোনি। তোমার মেয়ে ঠিক যে সময় অনলাইনে প্রশ্ন দেয়, তখনই পরীক্ষায় বসে, শেষও করে সময় মতোই। সে কী বলে জানো, দেখে দেখে কেন লিখব! টিচাররা তো জানে আমি কেমন, বেশি নাম্বার পেলে বরং তারা বুঝবে যে আমি দেখে দেখে প্রশ্নের উত্তর লিখেছি। দেখ, করোনা আমাদের অনেক কিছুই শেখাচ্ছে। লেখাপড়ার পদ্ধতি পাল্টে যাচ্ছে, আবার শিক্ষার্থীদের নৈতিকতায় আসছে চ্যালেঞ্জ।
কথাগুলো শুনতে শুনতে মোনাজাত উদ্দিন কেঁপে ওঠেন। মেয়ের পরীক্ষার খাতা হাতে ছুটে যান মেয়ের রুমের দিকে। ঘুমন্ত মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদেন। মৌটুসির ঘুম ভেঙে গেলে বলে, আব্বু কী হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন? মোনাজাত উদ্দিন বলেন, কিছু না রে মা! কাঁদতে দে! এ বড় সুখের কান্না!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।