আমি আসি।
আচ্ছা।
আমি আজ আসবো না।
বেশ।
আর কোনোদিনই আসবো না।
ভালো… অ্যাঁ, কেন? কেন আসবে না? কোথায় গিয়ে থাকবে তুমি? কী খাবে? আর…
থাক, অনেক ভেবেছো আমার জন্য, আর ভাবতে হবে না প্লিজ। আমি জাহান্নামে যাবো, যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকেই যাবো!
— তুমি তো আমার কোনো কথাই কোনোদিনও শুনলে না, জানি, তোমায় বলেও কোনও লাভ নেই। তবু বলি, আর যেখানেই যাও না কেন, জাহান্নামে যেও না, জায়গাটা ভালো না। শুনেছি মরা পচা দুর্গন্ধে নাকি ভরে থাকে জায়গাটা।
— আছে তো আছে। কী আছে আর কী নেই, সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। বড় আমার ভালোমন্দ দেখনেওয়ালা রে! হুঁহ, ভালো দেখে দেখে আমায় উদ্ধার করে দিয়েছে একেবারে!
খবরের কাগজটা ভাঁজ করে রেখে সৌম্য অভ্যাসমতো বেডসাইড টেবিলের দিকে হাত বাড়ায়। কিন্তু চায়ের কাপের কোনো হাতল ওর হাতে ঠেকে না। কী হলো? চায়ের কাপ নেই কেন? এতোক্ষণে যেন হুঁশ ফেরে সৌম্যর।
এই শোনো, বলি গুডমর্নিং টি নেই কেন?
করিনি তাই।
করোনি? কেন? কেন করোনি শুনি?
— করিনি, কারণ আর কোনোদিনও করবো না, তাই। এখন থেকে রান্নাবান্না, জামাকাপড় কাচা, ঘর গোছানো সব কিছু তো তোমাকেই করতে হবে।
— বেশ, সেসব না হয় করে নেবো। কিন্তু এই পোঁটলা পুঁটলি নিয়ে যাচ্ছো কোথায় শুনি? আর, যাচ্ছোই বা কেন?
— যাবো না? এ বাড়িতে আমার কী আছে, শুনি? ফ্ল্যাটের কাগজপত্তর, ইলেকট্রিকের বিল, ট্যাক্সের বিল, ফিক্সড ডিপোজিট, এমনকি আমার নামে একটা সেভিংস অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত, …
সৌম্য অনির সবকথা মন দিয়ে শোনে। কিচ্ছুটি না বলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। মিনিট তিনেক অখন্ড নীরবতা। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে বাসন পড়ার ঝনঝন শব্দের সাথে সৌম্যর আর্তনাদ ভেসে আসে। অনি একদৌড়ে ছুটে যায় রান্নাঘরের দিকে। সৌম্য মেঝেতে পড়ে ছটফট করছে। অনি ছুটে গিয়ে সৌম্যর মাথাটা কোলে তুলে নেয়। সৌম্য হা হা করে হেসে ওঠে।
— এলে কেন ন্যাকামো করতে? যাও, যেখানে খুশী যাও…
অনির দুটো হাত সৌম্যর বুকে পিঠে এলোপাথাড়ি পড়তে থাকে।