মা জানো আজ না ম্যাম মস্ত বাটারফ্লাই এঁকেছিল বোর্ড জুড়ে| বান্টি বললো ওটা
প্রজাপতি ও ওর মামাবাড়িতে অনেক প্রজাপতি দেখেছে, লাল, নীল, জংলা রঙের|
সেটা আবার কেমন রং মা !!
আমাদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে একটাও বাটারফ্লাই সরি প্রজাপতি আসে না কেন গো? ও যেন মা জল ফড়িং দেখেছে, পানকৌড়ি, মাছ রাঙা কত্তো কি! জানো মা ওর দিম্মা না ভোর বেলায় বাগানে গিয়ে ফুলেদের ঘুম ভাঙ্গায়, বিশ্বাস কর বান্টি বলেছে! তারপর নাকি টুপ টুপ টুপ টুপ করে সারা বাগান বিছিয়ে ঝরে পড়ে আগের রাতের ফোটা ফুল |
ওই ফুল দিয়েই পুজো হয় দেবী সর্বমঙ্গলার, রোজ সকাল বেলায় | ওই বাড়িতে একটা চন্দনা আছে সে নাকি ঘন্টা বাজলেই প্রসাদের ছোলা আর কলা খাবার জন্য রন্টুর নাম ধরে ডাকা ডাকি শুরু করে দেয় | তোমাকে বলা হয়নি রন্টু কে জানো ! বান্টির মামার ছেলে, ওর দাদা হয়| বান্টি আর রন্টু তারপর সাজি ভরে দুধ সাদা টগর, শিউলি, চাঁপা, গন্ধরাজ ফুল কুড়োয় | নাম না জানা কতরকমের ফুল ফোটে সেই বাগানে | ওর দাদু বলে এটা নাকি পারিজাত বন | গন্ধরাজের গন্ধে নাকি ঘুম এসে যায় চোখ জুড়ে, তাই মা ! বান্টি চড়ুই পাখিকে মুড়ি খাওয়ায়| বসন্তবৌরি পাখি নাকি খুব ছোট্ট| ওদের মামার বাড়ির রাস্তার সামনে যে মস্ত শিরিষ গাছ সেখানে এসে বসে | সকাল হলেই টি টি করে ডাকে| কেন ডাকে মা! ওর মা কি আলো ফুটলেই ওকে ফেলে রেখে চলে যায়? আমারও খুব কষ্ট হয় — ! রন্টু নাকি কাঠ বিড়ালিকে দুধ খাওয়ায় | হি হি কাঠ বিড়ালি পিয়ারা খায় তো বলো? বান্টি কি যে বলে না | পাগল একটা ! বাগানের দুব্বো ঘাসের ওপর নাকি এত্তো বড়ো বাস্তু সাপ শীত কালে রোদ পোহায়, কেউ লাঠি নিয়ে তাড়াও করে না| বাস্তু সাপ কি মা!
শুধু ছোট্ট পুষি ঝুমঝুম রাগে গজ গজ করতে করতে বাগানের মাটিতে নখ দিয়ে আঁচড় কাটে | আর ওবাড়ীর কুকুর কালুয়া নাকি
চোর এলেও ঘুমোয় | কি কুঁড়ে তাই না বলো ? সন্ধে হলেই মিষ্টি চাঁদের আলো এসে ওদের গোলাপ উঠোন ধুইয়ে দেয়| জানো মা শিরিষ গাছের ছায়া দূরে নাকি চাঁদের গায়ে গিয়ে পৃথিবীর ম্যাপ আঁকে| তাইতো চাঁদ সারা রাত ওই ম্যাপ ধরে ধরে পৃথিবীর সব কোণে জ্যোৎস্না ছুঁয়ে দেয় | আর ওর দাদু ছাদে বসে বান্টি আর রন্টুকে কালপুরুষ চেনায়, লুব্ধক চেনায় জ্বলজ্বলে শুকতারাও|
মা এখানে কাছে কোনো ছাদ নেই কেন? আকাশের গায়ে হেলানো এতো মস্ত মস্ত উঁচু বাড়ী একটুও আকাশ দেখতে দেয় না|কদিন আগে পার্কে যেতে গিয়ে যে নিম গাছটা মাথা দোলাতো কটা দুষ্টু লোক এসে একদম কেটে দিয়েছে | বীনা পিসি বলেছিলো এ তল্লাটে নাকি ওই একটা গাছই অবশিষ্ট ছিল | পাখী গুলো খুব কিচির মিচির করেছিল হয়তো বাসা ভেঙে যাবার জন্য| তারপর উড়ে যেতে যেতে মরেই গেছে | সত্যি! মানুষ এতো গাছকে হিংসে করে কেন বলোতো! তুমি টবে যে তুলসি গাছটা পুঁতেছিলে সেটাও মরে গেছে | আমি ওয়াটার-বটল থেকে জল দিয়েছি বলে আন্টি খুব বকেছে | আজ বলছি মা তুমি তারা হয়ে যাবার পর বীনা পিসি ছাড়া আমাকে কেউ ভালোবাসে না | দেখো একদিন পাখি, গাছ ফুলের মতো বাচ্ছারাও আর থাকবে না | ভালো না বাসলে কেন থাকবে বলো??