তারপর যা ঘটলো তা খুবই মর্মান্তিক । আমি তখন জার্মানিতে ছিলাম না । দুমাসের জন্য আমেরিকায় গেছিলাম পেন্সিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে গেস্ট লেকচারার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে । ওখানেই খবর পেলাম ABC আত্মহত্যা করেছে ।আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না । কি এমন হল যে আত্মহত্যা করতে হল ।আমি যতদূর ওকে চিনি ও কিন্তু হাল ছেড়ে দেবার লোক নয় । পরোমুহূর্তেই চিন্তা হল ওর ছেলের কি হবে?ABC এর স্ত্রী মানে ছেলেটির মতো ভারতে । জার্মানিতে বাবা ও ছেলে থাকতো । এই অবস্থায় ছেলেটা তো অনাথ ও অসহায় হয়ে যাবে । আমারতো তাড়াতাড়ি জার্মানিতে ফেরারও উপায় নেই ।বন্ডে সই করে এই অ্যাসাইনমেন্টটা নিয়েছিলাম । প্রায় সপ্তাহ তিনেকপর জার্মানিতে ফিরেই আগে ABC এর বাড়ি যাই । ওখানে গিয়ে জানতে পারি ওর ছেলে রুডিকে ওর মা ভারতে নিয়ে গেছে ।শুনে একটু আশ্বস্ত হলাম । লোকাল থানা কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এবং ওর আমার কমন ফ্রেন্ড দের কাছথেকে খবর পাওয়ার চেষ্টা করলাম ।কিন্তু বিশেষ লাভ হল না । আমার সঙ্গে ইস্লোভাও আমেরিকায় ছিল । তাই ABC এর ব্যাপারটা ধোয়াশাই রয়ে গেল । যাইহোক আমরা এসেছি জানতে পেরে পোস্টঅফিস থেকে পোস্টম্যান এসে একটা পার্সেল দিয়ে গেল । প্রেরকের কোনো নাম নেই । মোড়কটা খুলে দেখি একটা ডায়েরি। সঙ্গে একটা কভার লেটার। চিঠিটা যে ব্যক্তি পাঠিয়েছে সে তার লেটারহেড এই পাঠিয়েছে ।ব্যক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং অমিতবিক্রম চৌধুরী । চিঠির তারিখ যেদিন সে আত্মহত্যা করেছে, সেই তারিখেই লেখা আমি ওর বিরাট চিঠি পড়লাম এবং চরম বিস্মিত হলাম । ABC লিখেছে যে ওর চরম প্রাণ সংকট যাচ্ছে বুঝতে পারছে । কোয়ার্ক (Quarko) আবিষ্কারের কথা সে তার অ্যালকেমিস্ট গ্রুপকে নিজেই বলেছিলো । তাঁদের সাহায্য নিতে হয়ে অনুসন্ধান চালানোর জন্য । যে তিনজন ইতালি থেকে ফিরে অসুস্থ হয়েছিল তাঁদের থেকে জানা যায়, যখন ওরা লাইমস্টোন খাদানের খনন কাজ করছিলো । তখন ওরা এক অদ্ভুত জিনিস খাদানের ভেতর থেকে খুঁজে পায় । পদার্থটা জলের মতো তরল দেখতে কিন্তু জলের মতন নয় । খাদানের বিভিন্ন গর্তে খুঁজে পায় । স্বচ্ছ জেলির মতো পদার্থ টা ওরা তিনজন নিয়ে এসেছিলো । একদিন পরেই ওই পদার্থ শক্ত বলের মতো হয়ে যায় । ওদের এই বিষয় এতো কৌতূহলি করেছিল যে ওই পদার্থ ওরা জার্মানিতে নিয়ে আসে ।ABC দেখতে চাইলে ওকে দেখায় ও বিশেষ অনুরোধে একটা বল ABC কে দিয়ে দেয় । ABC বেশ কিছুদিনের রিসার্চ চালিয়ে এক বিস্ময়কর তথ্যের হদিশ পায়, যা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার । আমরা জানি স্বাভাবিক অবস্থায় পদার্থের মৌল ধর্ম অপরিবর্তনীয় । তার কারণ কোনো নিউক্লিয়াসে যে প্রোটন গুলি থাকে তারাই এই মৌলিক ধর্মের জন্য দায়ী । কিন্তু নিউক্লিয়াস থেকে কোনো প্রোটন কে আলাদা করা যায়না বা বাড়তি কোনো প্রোটন যোগ করা যায়না । তাই পদার্থের মৌলিক ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে । তবে পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগ করে এটি পরিবির্তিত করা যায় বা ভাঙা যায় । কিন্তু তার জন্য যে কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন বা অর্থের প্রয়োজন তা সংকুলান করা সম্ভব নয় । তাত্ত্বিক গবেষণায় এটা একটা এচিভমেন্ট হতে পারে কিন্তু কোনো ব্যবসায়িক সাফল্য নেই । সোজা কোথায় যদি এই পদ্ধতিতে কেউ তার কাঙ্খিত পদার্থ তৈরি করতে চায় তালে ঢাকের দায়ে মনসা বিকবে । কিন্তু এই পদার্থটি ইতালির খাদান থেকে পাওয়া গেছে তার এমন এক শক্তি আছে, যার সাহায্যে সে যেকোনো মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়ার লেভেলের পরিবর্তন আনতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এক এলিমেন্টকে আরেক এলিমেন্টে পরিবর্তিত করতে পারে ।ABC লিখেছে “এখনও পর্যন্ত আমি পাঁচটি এলিমেন্টের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছি । শুধু তাই নয় আমি ল্যাবে সোনাও তৈরি অন্য এক বেসিক এলিমেন্ট থেকে । অ্যালকেমিস্ট দের চিরাচরিত মিথ যে মিথ্যে নয় আমি তা আবিষ্কার করে ফেলেছি । আমি এই পদার্থের নাম দিয়েছি (QUarko) এক কোয়ার্ক কিন্তু নিজে পরিবর্তন হয়না অন্যকে পরিবর্তন করে ।আমরা যাকে কেমিস্ট্রির ভাষায় বলি ক্যাটালিস্ট। সমস্ত রহস্য উদ্ঘাটন করতে আমার আরও সময় লাগবে । কিন্তু আমি বোধহয় সেই সময় পাব না । অ্যালকেমিস্টএর দুই দল RAS আর SOAM আমার আবিষ্কারের কথা জানতে পেরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে । বলতে পারো রীতি মতো যুদ্ধ বেঁধে গেছে দুই দলে । সত্যি বলতে আমি আমার এই আবিষ্কার দুই হীনসার্থন্নেসি দলের কাউকেই দিতে চাইনা । কারণ তাহলে এই বিস্বয়কর আবিষ্কার মানব কল্যানে লাগবে না । মুস্তামেয় কিছু লোকের কুক্ষীগত হয়ে থাকবে । আমার এই ডায়েরিটা তোমার দায়িত্বে দিয়ে গেলাম । আমার ছেলে বড় হোল ওকে দিও । আমি চাই এই আবিষ্কার দেশের ও দসের কাজে লাগুক । আমি জানি ও ভারতেই ফিরে যাবে ।তুমি বন্ধু, ছেলেকে সঠিক সময় এই ডায়েরিটা দিয়ে দিয়ো । ও যদি পারে এই রহস্যের উদ্ঘাটন করে বিশ্বকে Quatko র বিস্বয়কর ধর্ম সম্পর্কে অবহিত করবে । ওর প্রতিভার প্রতি আমার আস্থা আছে । তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারলাম না । ভালো থেকো। বিদায় বন্ধু বিদায় । “