• Uncategorized
  • 0

গদ্যের পোডিয়ামে মালা মিত্র

আহা! তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা…….

খেলা সে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে, কখনো বা একা একা,কতরকম খেলাই তো খেলা যায়।খেলা অবসর বিনোদনের এক অপরিহার্য অঙ্গ।
খেলা দেহ-মনের এক নিবিড় সুখদ অবস্থা সেখানে কোনো কঠিন শৃঙ্খল থাকে না,থাকে এক অনাবিল প্রশান্তি।
ইনডোর আউটডোর নানান খেলা আছে।খেলা শেষে নিজেকে উজাড় করে দেবার পর, একটা স্থিত অবস্থা হয়,এক উচ্চমার্গীয় আনন্দ থাকে সেখানে, আর যেখানে এটা নেই, সেটা খেলা নয়, শৃঙ্খল।
কিছু অন্তর্মুখী মানুষ-জন আছে, তারা নিজের মনের মধ্যে এক খেলাঘর তৈরি করেন, কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর, চিত্রপরিচালক, সৃষ্টি কর্মী মানুষই এ আওতায় পড়েন অবশ্যই।
তারা মনে মনে খেলেন মগ্ন হয়ে, কখনো সেটা বাস্তবে রূপ পায়, আবার পায়ও না অনেক সময়।
তাদের এই মগ্ন খেলায় তারা বলেন,’খেলা ঘর বাঁধতে লেগেছি,আমার মনের ভিতরে, কত রাত তাইতো জেগেছি, বলব কি তোরে’।
নিজের মনোবাগানে এক পরমের সঙ্গে মগ্ন খেলায় মেতে ওঠেন, ‘ওরে আয়রে সবে মাতরে আজি আনন্দে, আজ নবীন প্রাণের বসন্তে’।
সে মানসিক খেলায়, সে আর তার প্রিয়, কেবল এক অলৌকিক আলোয় উদ্ভাসিত থাকে।
পার্থিব লেন দেনের কোনো স্থান নেই সেখানে। ‘প্রেম নিয়ে শুধু খেলা,প্রাণ নিয়ে হেলা ফেলা’।বুকে কেবল,’ওই খেলা, ওই গান, ওই মধু হাসি’।
এই খেলায় এক অপার্থিব আনন্দ,একটা স্বর্গীয় সুষমা থাকে।
আবার খেলায় হারজিত তো থাকেই, তাই কখনো বিরহে হার মেনে, কবি বলেন,’একি খেলা মোরা খেলেছি, শুধু নয়নের জলে ফেলেছি,ওরি যদি জয় হোক, মোরা হারি যদি যাই হেরে’।
এ খেলা এ দুনিয়া থেকে একদম নিজেকে সরিয়ে মনো রজ্যের এক খেলার জগৎ তৈরি।
যখন মনে হয়,’জীবনে পরম লগন, কোরোনা হেলা কোরোনা হেলা হবে গরবিনী, বৃথাই কাটিবে বেলা, সাঙ্গ হবে যে খেলা, সুধার হাটে ফুরাইবে বিকিকিনি’।
পরমলগ্নে এ খেলা না খেললে, জীবন যেন ব্যর্থ হয়ে যায়।
পৃথিবীতে সব স্বপ্নপূরণ কখোনোই সম্ভব নয়, ব্যথা যন্ত্রণা থেকেই যায়, এই যন্ত্রণায় মলমের প্রলেপ বুলিয়ে দিতেই, খেলতে হয়, পৃথিবী ছাড়িয়ে ব্রহ্মাবন্ড লোকে,যেখানে শুধু প্রেমিক ও তার প্রেমিকা।
মনের মাঝে সে আামি,আমি সে সেজে যুগপৎ এক স্বপ্ন রাজ্যের জন্ম দেওয়া,যেখানে মলিনতার স্থান নেই,অন্তরাজ্যে সুখের এক বানবন্যা বয়ে যাওয়া।
প্রত্যেক মানুষের এইরকম এক মনোভূমি থাকে, যেখানে দৈন্যতা নেই, বাস্তবের আঘাত ভুলতে তাই নক্ষত্রলোকে খেলে বেড়ানো শান্তির আশায়।
আবার মনোখেলায় প্রিয় কে না পেয়ে, বুভুক্ষায় আর কিছুই ভাল লাগে না, মিলনমেলা ভেঙে যাওয়ার নিদারুণ কষ্টে, কবি বলেন,’যখন ভাঙলো, ভাঙলো মিলন মেলা,ভেবেছিলেম পড়বে না আর চক্ষের জলে ফেলা’।
এই খেলা কখনো গ’ড়ে, কখনো ভেঙে কবি মন সৃষ্টিতে মগ্ন থাকে,হৃদয় বলে, ‘আজ খেলা ভাঙার খেলা, খেলবি আয়’।
বলাই যায় প্রত্যেক মানুষের এক অলৌকিক স্বপ্নের জগৎ থাকে, মনাকাশে জগৎ থাকার অবশ্যই দরকার,প্রত্যেকের। অতি বাস্তবতা মানুষ কে কলকব্জায় রুপান্তরিত করে, তার মনের যে একটা sensitive নরম দিক থাকে,সেটা অবহেলিত থেকে যায়।
শুধু কাজ খাওয়া ঘুম হলেই মানুষ জন্ম সফল হয় না, তার একটা স্বপ্নের ভাললাগার ভালবাসার, নিজের সাথে নিজের খেলার জগৎ থাকা খুব জরুরি,যেখানে তার প্রিয়ের বাস,যেখানে ডুব দিলে এক স্বর্গীয় শান্তি মেলে, অথচ জাগতিক সমস্ত ঘাত প্রতিঘাত গায়েও লাগে না,
তাইতো কবি ভালবাসার মানুষটির সাথে নিবিড় একটা যোগ স্থাপন করে, গেয়ে ওঠেন, ‘আহা!তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, প্রিয় আমার ওগো প্রিয়,বড় উতলা এ পরাণ আমার, খেলাতে হার মানবে কিও’।
এ সদা মগ্ন প্রেমরাজ্যে প্রিয় ও তার প্রিয়ার স্বর্গীয় অক্ষয় প্রেমকাহিনী সোনার অক্ষরে লেখা হয় কালজয়ী হয়ে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।