শুদ্ধ, আমার সাথে একটু নিউমার্কেট যাবে?
কাজে নিমগ্ন হয়ে থাকা শুদ্ধ, চমকে ফিরে তাকালো তার সহকর্মী চন্দ্রার দিকে।
চলো না প্লিজ। অফিস ছুটি হতে আর মাত্র চল্লিশ মিনিট বাকি আমরা যদি আর একটু পরে বেরোই তাহলে কি তোমার অসুবিধা হবে?
শুদ্ধ একটু হেসে বলল, তোমাকে এক বছর ধরে অফিসে দেখছি চন্দ্রা। তুমি যা নাছোড়বান্দা মেয়ে না বললেও তুমি যে শুনবেনা সে আমি খুব ভালো করেই জানি।
চন্দ্রা চোখ পাকিয়ে শুদ্ধর দিকে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলল ও তাই বুঝি, আমি নাছোড়বান্দা?
শুদ্ধর পাশের টেবিলে বসে রাকেশ।সে ও তাদের এই খুঁনসুটিতে যোগ দিয়ে বলল শুধু শুদ্ধ নয় চন্দ্রা, অফিস শুদ্ধু লোক জানে তুমি কতটা নাছোড়বান্দা।
রাকেশের কথায় শুদ্ধ হাসতে লাগল আর কপট রাগ দেখাতে গিয়ে চন্দ্রাও হেসে উঠল।
মধ্যবিত্ত ঘরের হাসিখুশি এই মেয়েটা অফিসের সবার খুব প্রিয়।অফিসের সবার সুখে দুঃখে চান্দ্রা জড়িয়ে আছে।
এক বোন আর বাবা মাকে নিয়ে তার জীবন ।
অফিসের সবাই চন্দ্রাকে বলে, কবে বিয়ে করবি? এবার বিয়ে করে সংসারী হ, আর আমরাও তোর বিয়েতে খুব আনন্দ করি।
চন্দ্রার ঠোঁটে উত্তর তৈরি। সে হাসতে হাসতে বলে, আগে একটা অমানুষ পাই তারপর তো বিয়ে করবো। তার উত্তর শুনে সবাই হো হো করে হাসতে থাকে।
অফিসের সবাই শুদ্ধর অতীত বিবাহিত জীবনের অল্পস্বল্প হলেও জানে, কিন্তু বিয়েটা যে কেন ভেঙে গিয়েছিল সেটা কেউ জানেনা।
আজ প্রায় এক বছর ধরে শুদ্ধকে দেখছে চন্দ্রা। দিনের অনেকটা সময় অফিসেই সময় কাটে তাদের একসাথে, তাই অনেকটা কাছ থেকেই শুদ্ধকে দেখতে পায় চন্দ্রা। শুদ্ধর মধ্যে সে এই এক বছরে এমন কিছু পায়নি যাতে তার মতন ছেলেকে কোন মেয়ে রিজেক্ট করতে পারে। বরং বলা যেতে পারে শুদ্ধর মধ্যে যেসব গুনগুলো আছে খুব কম মানুষের মধ্যেই হয়তো সেসব গুণগুলো দেখতে পাওয়া যায়।
পরোপকারী তার মধ্যে একটা বড় গুণ তার, শুধু তাই নয় সে খুব ভদ্র, শান্ত বিনয়ী ও বটে।
চন্দ্রা অবাক হয়ে ভাবে কেন এমন একজন মানুষকে রিজেক্ট করেছে সেই না দেখা মেয়েটি।
বেশ কিছুদিন ধরেই চন্দ্রা খুব চঞ্চল হয়ে আছে। তার বিচারবুদ্ধি সিক্সথ সেন্স যদি তার বিরোধিতা না করে তাহলে মানুষ চিনতে সে সাধারণত ভুল করে না।
নিউমার্কেটের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত খানিকটা সময় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল দুজনে, তারপর কিছু অপ্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিস কিনতে লাগলো চন্দ্রা।
একটা খুব সুন্দর লেদারের ব্যাগ পছন্দ করে কিনে শুদ্ধর হাতে দিল চন্দ্রা।
শুদ্ধ অবাক হয়ে বললো এত মহিলাদের ব্যাগ এ নিয়ে আমি কি করব?
চন্দ্রা একমুখ হাসি নিয়ে বললো জানি মশাই, তুমি পুরুষ মানুষ, এটা আমি মাসিমা মানে তোমার মার জন্য কিনলাম।তুমি দয়া করে একটু দেখে বল মাসিমার এই ব্যাগটা পছন্দ হবে কিনা?
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলল মার জন্য কেন ব্যাগ কিনতে গেলে?
চন্দ্রা বললো, কারন আজ আমি তোমার সাথে তোমার বাড়ি যাবো মাসিমার সাথে দেখা করতে, আশা করি তোমার কোন আপত্তি হবে না।
আমার বাড়িতে? মার সাথে দেখা করতে? আপত্তি করব কেন ? যেতেই পারো তবে জানতে ইচ্ছে করছে হঠাৎ কি মনে করে।
চন্দ্রা এক গাল হেসে বলল নিয়ে যাবে কি যাবে না সেটা আগে বল। দরকারটা আমি মাসিমাকে বলব তোমাকে নয়।