জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর।
বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন।
চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।
এক দুর্মর আশাবাদের কবি পার্সি বিশ শেলি (০৪.০৮.১৭৯২ – ০৮.০৭. ১৮২২)। তিনি বলেন, হে বাতাস, শীত যদি আসেই, তাহলে কি বসন্ত আসতে আর দেরি থাকে? আবার বলেন, আমাদের সবচেয়ে বিষণ্ণতার চিন্তাগুলোই মধুরতম গান হয়ে ওঠে। কবিতাকে তিনি বিদ্যুতের তরবারি বলে মনে করেন। কবিতা যেন সেই নাঙ্গা তলোয়ার, যা এ জগতে সমস্ত অন্যায়, বঞ্চনা আর অসাম্যকে খান খান করে দেবে। আর বলেন, কবিরাই এ জগতের বিধান রচনা করেন। অস্বীকার করেও তাঁদের এড়ানো যায় না।
জীবৎকাল ত্রিশ বছর পেরোয় নি শেলির। কিন্তু গোটা জীবন ধরেই তিনি বিদ্রোহের কথাই বলে গেলেন। ভয়ঙ্করভাবে স্থিতাবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন শেলি। রাজা রাজড়াকে মোটেই পাত্তা দিতে চাইতেন না। যেন বলতে চাইতেন, ‘আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ’। জাঁ জাক রুশোর বৈপ্লবিক ভাবনা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। শেলি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। শেলি দেখেছিলেন তাঁর সময়ে তাঁর স্বদেশ ইংল্যাণ্ডে মিশরের ফ্যারাও দ্বিতীয় রামেসিসের স্ট্যাচুর একটি খণ্ড আনা হয়েছিল। ফ্যারাওয়ের এই ভগ্ন মূর্তিটি দেখে শেলির মনে হয়েছিল পৃথিবীর বড় বড় শাসকেরা ওইরকম। ঠিক যেমন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন, ‘রক্তমাখা অস্ত্র হাতে যত রক্ত-আঁখি/ শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি’, তেমনি করে ‘ওজিম্যানডিয়াস’ কবিতায় শেলি লক্ষ করেন মহাকালের সম্মার্জনীর ধাক্কায় এক সময়ের প্রবল প্রতাপান্বিত ফ্যারাও ভয়ে মুহ্যমান। তিনি আরো লক্ষ করেন, ধর্ম আর স্বার্থপরতা যেন দুই সহোদরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লক্ষ করেন, যারাই মানুষকে পায়ের নিচে রাখতে চেয়েছে, তারা ধর্মমোহকে অস্ত্র করেছে।
কৈশোর পুরোপুরি শেষ হবার আগেই নাস্তিক্যবাদে দৃপ্ত হয়ে উঠেছিলেন শেলি। ১৮১১ সালে, বয়স তখন ঊনিশ পেরোয় নি, তখনই শেলি একটি বই লেখেন, দি নেসেসিটি অফ এথেইজম বা নাস্তিক্যবাদের প্রয়োজনীয়তা। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ অথবা ১৪ তারিখ এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হবার পর, শেলি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊনিশ বছর বয়সের ছাত্রটি বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপকদের কাছে পুস্তিকাটি পাঠান। অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ শেলির এই দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় ভীষণ ভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করেন। শেলি ঘোষিতভাবেই নাস্তিক ছিলেন। তিনি বলতেন, ধর্ম সামাজিক শোষণ শাসনকে দীর্ঘায়িত করে। ওই যে তিনি পুরোহিততন্ত্র, খ্রীস্টানী ভাবধারা আর ধর্মকে আক্রমণ করেছিলেন, তার জন্য ১৮২১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অবশ্য এরপর বেশিদিন বাঁচেননি শেলি। ১৮২২ এ প্রয়াণ। আমরা মহাকবি শেলিকে গভীর শ্রদ্ধায় আজ স্মরণ করব, কেননা, ২১০ বছর আগে এমন একটা ২৫ মার্চ শেলিকে পুস্তিকা লিখে নাস্তিক্যবাদ প্রচারের অভিযোগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করা হয়।