• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক গদ্যানুশীলনে গোপা ব্যানার্জি – ৪

যৌনতা – ৪

কিন্তু একি রিমির আবেগে কিছুতেই শুদ্ধ সাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না কেনো ? এমন আগুন যাকে আলিঙ্গন করছে তার তো এই মুহূর্তে জ্বলে ওঠার কথা।কিন্তু কেন সে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারছেনা?
রিমি মরিয়া, সে নিবিড় ভাবে পেতে চাইছে শুদ্ধকে ।
রিমি শারীরিক উত্তেজনায় ভরপুর , হঠাৎ খানিক পরই তার খেয়াল হল শুদ্ধ কিন্তু কেমন যেন নির্বিকার আর সংকুচিত হয়ে আছে।
রিমি শুদ্ধ কে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, শুদ্ধ আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম আমাকে ভালোবেসে তোমার করে নাও।
না, শুদ্ধ পারলনা রিমির আবেগঘন ডাকে সাড়া দিতে। রিমি শুদ্ধকে ঠেলে ফেলে দিয়ে উঠে বসল বিছানায়।
যা বোঝার ততক্ষণে বুঝা গেছে সে, সে রুমের বড় আলোটা জ্বালিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো তুমি আমায় ঠকালে কেনো শুদ্ধ ? আমার কথার উত্তর দাও।
তুমি এত বড় চিটার, আমি ভাবতে পারিনি। তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে কেন?
শুদ্ধ মাথা নিচু করে বসে আছে খাটের এক কোনায় ।মরমে মরে যাচ্ছে মিশে যাচ্ছে ধূলিকণার সাথে।
রিমি দু হাত দিয়ে শুদ্ধর মাথা উঁচু করে তুলে বললো এভাবে মাথা নিচু করে বসে থাকলে আমাকে শান্ত করতে পারবে না, আমার কথার উত্তর দাও।
তুমিতো জানতে নিজের শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কতটা কার্যকরী আর
কতটা নয়।পুরুষ হিসেবে তুমি যে কোন মেয়ের সুখের কারণ হবে না এটা জেনেও তুমি আমায় বিয়ে করলে কেন?
কাম অন শুদ্ধ, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, চুপ করে থেকে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।
তুমি একটা মাকাল ফল, ঘেন্না লাগছে তোমাকে।
শুদ্ধ এবার রিমির চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করলো, তুমি যে অপবাদ দিচ্ছ, যা অভিযোগ করছো আমি তা মাথা পেতে নিচ্ছি, কিন্তু বিশ্বাস করো কখনো সেভাবে বুঝতে পারিনি। আসলে সেভাবে নিজের শরীর নিয়ে কখনো ভাবি নি আমি। হ্যাঁ আমার হয়তো কিছুটা পৌরুষত্ত্বের অভাব আছে, সাধারণের থেকে আমার শরীরে বিশেষ অঙ্গটাও স্বাভাবিক নয়, কিন্তু রিমি তাহলে কি ভালবাসার কোন মূল্য নেই? স্বামী-স্ত্রীর সবটাই কি শরীরভিত্তিক সম্পর্ক ?
আগে তো মনের মিলন হোক তারপর না হয়…
আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম তাহলে নিশ্চয়ই চিকিৎসা করাতাম। হয়তোবা বিয়েই করতাম না, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারিনি আগে। আমি তোমাকে ঠকাতে চাইনি, আমি ঠগ নই ।আসলে আমি আমার নিজের শরীরটাই চিনে উঠতে পারিনি। আমায় ক্ষমা করে দাও । আমি কাল সকালেই একজন বড় ডাক্তার দেখাবো, দরকার হলে দেশের বাইরে গিয়েও চিকিৎসা করাব নিজের। আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ।
রিমি তখন ফুলশয্যার খাট ছেড়ে রাত্রিপোশাকেই ফুলশয্যা ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরচ্ছে।
শুদ্ধ গিয়ে একটা হাত ধরে উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
কোথায় যাচ্ছে রিমি, এত রাত্রে? বাড়ি ভর্তি সমস্ত আত্মীয়-স্বজন, আমায় ক্ষমা করো, একটা সুযোগ দাও।
রিমি পাথরের দৃষ্টিতে তাকাল শুদ্ধর দিকে। চোখে মুখে তার ঘৃণা ঝরে পড়ছে।
ঠান্ডা গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
তোমার এই রোগের নামটা জানো নিশ্চয়ই?
সরি সরি, তুমি তো আবার জানোই না তোমার শরীরে কোন কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো ঠিকঠাক কাজ করে আর কোনগুলো করে না!
শোনো তোমার এই রোগটার নামটা জেনে রাখো আমার কাছে…
‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা যৌন অক্ষমতা’।
এবার নিশ্চয়ই রোগ সম্পর্কে তুমি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছ, নাকি আগের থেকে জানতে আর তার পরেও আমাকে ঠকালে ?
তুমি ঠগ আমাকে ঠকিয়েছো, তারপরেও কী করে আশা করছ তোমার সাথে এই ঘরে এই রাত কাটাব, জীবন কাটাব?
মাই ফুট তোমার আত্মীয় স্বজন। বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল সে।
অনেকক্ষণ ধরে গৌরী এবং বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন অস্পষ্টভাবে এই চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছিলেন আর তাই অনেকেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এত রাত্রে নতুন বউকে ফুলশয্যা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখে গৌরী রিমির হাত ধরে বললেন,
কি হয়েছে বৌমা আমাকে বল। এত রাত্রে এই মুহূর্তে কোথায় যাচ্ছ তুমি?
রিমি তার শাশুড়ি মায়ের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, তোমার ঠগবাজ ছেলের কাছে সব জেনে নিও। তোমার ছেলেকে কে অধিকার দিয়েছে আমার জীবন নষ্ট করার?
এক মুহূর্তে গৌরী দেবীর সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মাটিতে।
তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না ।তার ছেলের মতন ছেলেকে ঠগ বলছে কিন্তু কেন? প্রথম রাত্রিতে কী এমন করেছে যে তাকে এতবড় একটা অপবাদ দিচ্ছে সবার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর বউমা।
তারপর ঘর ভর্তি মানুষের চোখের সামনে দিয়ে তার বাবার দেওয়া গাড়ি স্টার্ট করে রিমি বেরিয়ে চলে গেল তার বাবা-মার কাছে।
শেষ হয়ে গেল একটা মেয়ের ফুলশয্যা রাতের সমস্ত স্বপ্ন। প্রকৃতির খেলায় হার মানল শুদ্ধ।
কিন্তু দোষটা কার?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।