• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র – ১৫)

যাপন চিত্র – ১৫

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পোস্টার মাত্র

আজ নারী আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৷ আমার মতে এটা একটা পোস্টার মাত্র ৷ আমরা আজও একই তিমিরে রয়েছি ৷মুখে নারী স্বাধীনতা নিয়ে হাজারো কথা বললেও বাস্তবে আমরা এখনো চিরাচরিত মনোভাবই পোষণ করি ৷ আমার মতে নারী বা পুরুষ দিবস পালনের জন্য কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন পড়ে না যদি আমরা একটু উদার হতে পারি তাহলে প্রতিটি দিনই নারী বা পুরুষ দিবস হতে পারে ৷
আজ যদিও আন্তজার্তিক নারী দিবস তাই আজ আবার বলছি ,আমাদের শুধু আমাদেরই প্রয়োজন। পরিচিত বা অপরিচিত কোনো মেয়েকে তার স্বামী গায়ে হাত তুলেছে জানলে তার পাশে দাঁড়ান। আইনী সাহায্য করুন। তাকে শক্ত থাকতে বলুন। ওই সময় একটা হাতের প্রয়োজন হয়। যে হাত টেনে বের করে আনতে পারবে আপনাকে একটা বৃত্ত থেকে যা বহুদিন নিশ্চুপে চলেছে।
মহিলা হিসাবে আর একটি অনুরোধ করবো
অনেক সময় আমরা জেনেশুলেও বাড়ীর ছেলে বা পুরুষের দোষ জেনেও আমরা অপর পক্ষের মহিলাটির পাশে দাঁড়াই না উল্টে তাকে দোষারোপ করি এতে নিজেরাই অজান্তে পুরুষদের অন্যায়কাজের সমর্থন করে তাদের সাহস বাড়িয়ে তুলি ৷ আমাদের মায়েদের উচিৎ মেয়েদের জন্য বিধি নিষেধ তৈরী না করে ছেলেদের ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের সম্মান করার শিক্ষা দেওয়া ৷ তবেই সমাজ থেকে নারী বিষয়ে কিছু অপরাধ হয়তো কমবে ৷
নারী নির্যাতনের সাথে সাথে আমাদের একটা বিরাট সমস্যা হল প্যারেন্টাল অ্যাবিউজ ৷ আমাদের অনেকেরই হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে ধারনা নেই ৷ অনেকে আবার রে রে করে উঠবেন এটা আবার কি ! বাবা মা ছেলে মেয়েকে শাসনও করতে পারবে না ? কি দিনকাল এলো রে বাবা ! আমরা ভাবতেই পারিনা বাবা বা মা ছেলে বা মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। বকা বা ধমক না,নির্যাতন। কিন্তু বহু ঘরে ঘটছে। সেই মেয়ের আপনাকে প্রয়োজন।।এই ধরনের কেউ অভিযোগ করলে হেসে উড়িয়ে না দিয়ে মন দিয়ে তার কথা শুনুন মানসিক ভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করুন প্রয়োজনে পুলিশ,আইন,কানুন,আপনার মূল্যবান সময়,ধৈর্য্য ধরে তার পাশে দাঁড়ান।
রাস্তায় ঘাটে অন্যায় ঘটতে দেখলে চুপ করে থাকবেন না ৷পাশে দাঁড়ান ভিক্টিমের ৷রাস্তায়,বাসে ট্রামে অন্য কোনো মহিলার বুকে হাত দেওয়া ছেলেটাকে টানতে টানতে পুলিশ স্টেশন নিয়ে গিয়ে ফেলুন। আপনার সাথে হয়নি তবুও এটাকে নিজেরই সমস্যা ভাবুন।
কোনোও মহিলার চেহারা,রঙ,চর্বি,উচ্চতা নিয়ে হাসি ঠাট্টা তে যোগদান বন্ধ করুন। নিজের ইনসিকিউরিটি কাটানোর জন্য অন্য কাউকে ছোটো করার প্রয়োজন নেই। নিজের ওপর বিশ্বাস করুন সাথে সাথে তার কনফিডেন্সও একই সাথে বাড়াতে সাহায্য করুন। কোনো মহিলা নিজেকে সাজাতে মেক আপ করলে সেটা তার কমফোর্ট জোন। যে মেয়ে টিপ,কাজল,এলো চুলে থাকতে ভালোবাসে,সেটা তার কমফোর্টজোন। মেক আপ কে আটা ময়দা বলে নিজের অশিক্ষা কে বাইরে এনে খিস্তি খাওয়ার দরকার নেই। নারী শাড়িতেই সুন্দর নাকি হট প্যান্টে এটা নারীই ঠিক করুক। চায়ের কাপ,ফুলের তোড়া,ভোরের সূর্যের পিছনে লেখা মীম নিজের ফোনে গুছিয়ে রাখুন। নারী কিভাবে সুন্দর সেটা নারীই বুঝুক।
ফেসবুক একটি অ্যাপ। স্ট্রং ওপেনিয়ন দিলে যদি তথাকথিত চরম প্রোগ্রেসিভ পুরুষ মহলেও আপনার চরিত্রের কোনো নাম দেওয়া হয়,ভেঙে পড়বেন না।
তাদের ভিতরের পুরুষতান্ত্রিকতাকে বাইরে বেরাতে দিন। অপেক্ষা করুন। তাদের বাড়ির মেয়েদের জন্যও ভোক্যাল থাকুন। জানবেন কিছু অন্যায় আপনার পারসোনাল পছন্দ অপছন্দের উর্ধ্বে,প্রতিবাদ যোগ্য।
ফেমিনিজম মানেই পুরুষবিদ্বেষ নয়।। ফেমিনিজম সমান অধিকারের কথা বলে। যে অধিকার আপনাকে কেউ দেবে না। যেটা অলরেডি আপনার কাছে আছে। এটা বিশ্বাস করা শুরু করুন। ফেমিনিজম বা ফেমিনিস্ট শব্দ গুলো বাঁকা ঠোঁটের হাসি চেপে যারা রিগ্রেসিভ টোনে বলে,জানবেন প্রতিটা মেয়ে নিজের অধিকার বুঝে নিলে তাদের সব থেকে বেশী কষ্ট হবে। নিজের জীবন নিজের মত করে বাঁচুন।
প্রতিটা মেয়ে যারা গৃহ হিংসার শিকার তাদের জোর করে বের করে আনুন। সহ্য করতে বলবেন না। মানিয়ে নিতেও বলবেন না। বাচ্চার ভবিষ্যত বা দশ জনের প্রশ্নের জন্য তাকে ওখানেই থেমে থাকতে বলবেন না। যারা এই গুলো বলে সংসার টিকিয়ে রাখার পরামর্শ দেবে তাদের ভরা সভায় টেনে বের করুন। অ্যাবিউজার দের থেকেও এই এনাব্লারস দের ভূমিকা ভয়ানক হয়।
ক্যাজুয়ালি বলা কথা গুলোর প্রতি আরও সচেতন হন। কোনো ছেলেকে “চুড়ি পরে নে” বললেই সে দূর্বল প্রমাণ হয় না। আপনার মা ও চুরি পরে। সে দূর্বল না।
মেয়ের বাবা মায়েরা পণের টাকা না জমিয়ে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা ও চাকরির বিষয়ে আরও বেশী সচেতন হন। মেয়ের চাকরি বা ব্যবসা বাদে সে বিয়ের উপযোগী নয়, এটা ছোটো থেকেই তাকে নিশ্চিত করুন। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভিন্ন এই লড়াই অসম থেকে যাবে।
মা মানেই সে ভগবান না। তার জীবন,তার ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলোকে উৎসাহ দিন। নকল গর্ব চাপিয়ে মা মানেই “ত্যাগের দেবী” বানিয়ে প্রচ্ছন্নে তার জীবন টাকে কচ্ছের রণ বানিয়ে দেবেন না। মা আজীবন ছোটো মাছের পিস খাবে না। সেটা দেখা আপনার দায়িত্ব। মা সব সময় দূর্গা পুজোয় শেষে শাড়ি কিনবে না,সেটা দেখা আপনার দায়িত্ব। মা কে মানুষ হিসেবে দেখুন। দেবতা নয়।
১৮ র উর্ধ্বে কোনো মেয়ের বিয়ের বয়স ঠিক কবে ,এটা একেবারেই তার নিজস্ব নির্নায়ক একটি বিষয়। পরিবারের মতামত প্রয়োজন। কিন্তু তাকে বাধ্য করা নিষ্প্রোয়জন। তার বাচ্চা নেওয়া শুধুমাত্র মেয়েটির এবং তার স্বামীর সিদ্ধান্ত। মা হতে চাইলে হবে,না চাইলে হবে না। এতটাই সরল ব্যাপার। সিঙ্গেল মাদার হলে এটা একান্তই তার সিদ্ধান্ত। মেয়ে মানেই মায়ের জাত বলে তার সব সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে বসে থাকবেন না।

আবারও বলছি মেয়েরা মেয়েদের শত্রু না কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরাই জেনে বুঝেও বাড়ীর পুরুষটির স্বার্থে অন্য মেয়েকে নির্দোষ জেনেও কাঠগোড়ায় দাঁড় করাই ৷ এবার থেকে কাউকে সমস্যায় দেখলে হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার সমস্যাতেও অনেক হাত এগিয়ে আসবে। এভাবেই বৃত্ত একদিন ঠিক বড় হবে। কিছু সময় আইন, আদালত, পুলিশ, হোম, মহিলা কমিশন,অর্থ,বল, এসবের আগে পাশে কাউকে দরকার হয়,যে জড়িয়ে ধরে বলবে “আমি আছি!”

সকলকে আবারো আন্তজার্তিক নারী দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা শুভকামনা শ্রদ্ধা ভালোবাসা ৷ অপেক্ষায় রইলাম এমন একটা দিনের যেখানে প্রতিদিন ই আমরা নারী দিবস পালন করতে পারি তেমন সময়ের ৷ মহিলাদের অনুরোধ করবো তৎসহ পুরুষদেরও আসুন আজ অঙ্গীকার করি কাউকে বিপদে দেখলে , অসহায় দেখলে পাশে দাঁড়ানোর আর অন্যায় থেকে প্রতিবাদ করার ৷ ভালো থাকবেন সকলে ৷
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।