• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক গল্পে সুদীপ ঘোষাল – ১

বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি – ১

আমার বন্ধু অনিল সেটেলমেন্ট বিভাগে কাজ করে। সবসময় জমি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি।আর আমি বিষয়ি লোক নই। এসব কিছু জানি না বুঝি না। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অনিল আমাকে জ্ঞান দেয়। অবশ্য ছাত্র হিসেবে আমি মন্দ নয়।
বাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা সত্যিই হল যে বেচতে গেলে ছাগল আর কিনতে গেলে পাগল। প্রথমে একজন খরিদ্দার এলেন। তিনি বাড়ি দেখলেন, পছন্দও হল কিন্তু তার একটি শর্ত আছে। প্রথমে একটা এগ্রিমেন্ট হবে যে আমি বাড়িটা কেনার জন্য দু লক্ষ টাকা আ্যাডভান্স দিলাম। বাড়ির মোট মূল্য পঁচিশ লাখ। বাকি টাকা রেজিস্ট্রির সময় দেওয়া হবে। আর ছয়মাসের মধ্যে বাড়িটি অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না।
মানে ব্যাপারটা হল এই দু লাখেই মহাশয় বাড়িটি দখলে রাখবেন এবং গৃহকর্তাকে হয়রানি করে মারবেন। বন্ধু সঞ্জয় বললেন, দরকার নেই ওরকম এগ্রিমেন্টের। নগদ টাকা দাও বাড়ি নাও। জোঁকের মুখে নুন পড়লে মুখটি যেমন বিকৃত হয়ে যায় ঠিক তেমনিভাবে ক্রেতা মহাশয় গাত্রত্থান করলেন।
আবার কিছুদিন পরে আর একজন ক্রেতা এলেন।তিনি বললেন, আমি আপনার বাড়ি দেখিয়ে লোন নেব এবং অন লাইনে টাকা ট্রান্সফার করে দেব। এবারও রাজী হলেন না আমার স্ত্রী। তিনি বললেন শহরে ফ্ল্যাট প্রতারণার নানা দিক। এক ফ্ল্যাট বহুবার বেচা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট শেষ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা হয়না, চলে টালবাহানা। জমির ছাড় না দিয়েই তৈরি হয়ে যাচ্ছে ইমারত। বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় পুস্তিকাতে যে সব সুযোগ সুবিধার কথা ফলাও করে লেখা থাকে, বহুক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। বেআইনি জমিতে তৈরি হচ্ছে ফ্ল্যাট, ক্রেতা জানতেই পারেনা। তাই বাড়ি কেনার আগে দেখে নিন সম্পত্তির বিক্রেতা, নির্মাতা, মালিক কারা? জমির মালিকানা ঠিক আছে কিনা। বিক্রেতার স্বত্ব যাচাই করুন সার্চিং করাতে ভুলবেন না। যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে চুক্তি দেখে নিন। প্রয়োজনে আসল দলিল দেখতে ভুলবেন না। পরচা অথবা BLRO অফিস থেকে জমির চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ নিন। সম্প্রতি দেওয়া খাজনার রসিদের কপি সংগ্রহ করুন, দেখে নিন খাজনা বিক্রেতার নামেই জমা পড়েছে কিনা।
পুরসভার অধীনে হলে দেখে নিতে হবে তা বিক্রেতার নামে মিউটেশন করানো আছে কিনা। জমি বাড়ি কেনা-বেচা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনে এসমস্ত দিকগুলি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকলেও তা থেকে গেছে আইনের পাতাতেই। ফলে অসাধু প্রোমোটার চক্রের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হতে হয় বহু মানুষকেই। হয়ে যায় অন্ধকূপে ঝাঁপ দেওয়া। মাথার ওপর ছাদ জোগাড় করতে গিয়ে মাথার ওপর ভেঙে পড়ে আকাশ।আমার মিউটেশন করা নেই। কিন্তু পাঁচ হাজার খরচ করতে পারলে মিউটেশন হবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।