• Uncategorized
  • 0

|| ভাষাতে বাংলা, ভাসাতে বাংলা || সংখ্যায় অজিতেশ নাগ

ফেসবুক ও বাঙলা সাহিত্য

আজকাল যে কোনও বিষয় নিয়েই তর্ক করা যায়। কোনও একটা বিষয়ে ঐক্যমত – হ্যাঁ, অস্বীকার করে পারি না যে বহুকাল দেখিনি, পড়িনি, শুনিনি। অতএব ফেসবুক-নির্ভর যে সাহিত্য, তা আদতে সাহিত্যচর্চার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে কিনা – হ্যাঁ, এটা নিয়েও দিনের পর দিন তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু প্রথমেই যে বিষয়টায় সবাই সায় দেবেন, সেটা হল – আমি নিজে কী ভাবছি আর সেটাই তো বড় কথা বাপধনেরা এবং মামনিরা।
একজন সামান্য অক্ষরকর্মী হতে পারার সুবাদে আমার প্রতিবারই মনে হয়েছে, শুধু ফেসবুক কেন, কোনও কিছুই বাঙলা সাহিত্যের ক্ষতি করতে পারে না – এটার সবার আগে বুঝতে হবে। ফেসবুকের দৌলতে কবির সংখ্যা, সমালোচকের সংখ্যা বেড়ে গেছে? তা বেশ তো। যদি ফেসবুকের দৌলতে রাতারাতি কবির সংখ্যা শতগুণে বৃদ্ধি পায়, গল্পকারের সংখ্যা হাজারের উপরে চলে যায় – আহা! সেটা আদতে বাঙলা ভাষার পক্ষে সুখকর সংবাদ বটে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে যখন এই আমরাই ‘বাঙলা ভাষা ডুবে যাচ্ছে’, ‘রাত পেরোতেই লুপ্ত হয়ে গেলো বলে’ – এই সব ধুয়ো ধরে চায়ের ঠেক গরম করি, আমরা তো একটা ব্যাপারে আশ্বস্ত হবো যে, যাক বাঙলা-ভাষা চর্চার এক নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। যত বেশি চর্চা হবে, তত বেশি শিকড়টা মটির ভেতরে প্রোথিত করা হবে। ঠিক কিনা?
আসলে সমস্যাটা সেটা নয়। ফেসবুক বাঙলা সাহিত্যের সাড়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে – এই প্রচারিত ভাবনাটি আসলে একটি ধোঁকার টাঁটি। একজন বিশিষ্ট (!) সাহিত্যিক হওয়ার এক আশ্চর্য ইঁদুর দৌড়ে মেতে উঠে আমরা সবাই চাইছি, ‘আমি লিখবো – তোমরা পড়বে’। ফেসবুকে লিখবো না অথবা ফেসবুকটাকে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো – এটা চাইছি না, চাইছি ফেসবুকে আমি লিখবো, তোমরা লাইক আর মন্তব্যে ভরিয়ে দেবে। আর আমি? আমার সময় কোথায় অন্যের লেখা পড়বার? এক প্রখ্যাত সাহিত্যিকের ভাষায় – ‘পড়তে গেলে লেখা হয়না’। তাই পড়ছি না অথচ দেদার লিখছি। কেমন লিখলাম তার মাপকাঠি লাইক আর মন্তব্যের সংখ্যার পরে ছেড়ে দিয়ে দিবারাত্র লিখছি আর লিখছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে লিখছি, গাড়ি চাকার ছিটকানো কাদা এসে ধুতিতে লাগলে তখনও লিখে চলেছি, আচমকাই বড়-বাইরে পেয়ে গেলেও টয়লেটে যাচ্ছি না, কারণ আমি যে লিখছি। এইভাবে এক একটি লেখা আমার কালজয়ী। এক একটি উপন্যাস বিকোবে জলস্রোতের মত। আমিই লেখক। বাকিরা পাঠক।
আর ঠিক এইখানে কুঠার হেনেছে ফেসবুক। সেই কবে কবিগুরু লিখে গেছেন, ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’। আমি পড়েছি, শুনেছি, কিন্তু বাস্তবায়িত করবার প্রয়াস দেখিনি।
অতএব এক শ্রেণীর মৌরসীপাট্টায় আঘাত, অতএব লেখককেও পাঠক হতে হবে, নইলে বাজার পড়ো-পড়ো, অতএব ‘রে রে’ ধ্বনিতে মেতে ওঠা যাক, এমন মনোভাবের জন্ম। কারণ? ফেসবুক এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে ‘তোতে-মোতে’ খুব একটা পার্থক্য থাকে না। বড় বড় সাহিত্যগোষ্ঠী পাত্তা দিচ্ছে না? বয়েই গেলো। নামি প্রকাশক ফিরিয়ে দিয়েছে? বয়েই গেলো। অনেক পরিশ্রমে একখানি গ্রন্থের জন্ম হয়েছে অথচ সেটি বিজ্ঞাপিত করা খরচ-সাপেক্ষ? বয়েই গেলো।
ফেসবুক আছে তো। যেটি আজ, শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে, কোটি কোটি শিল্পী এবং শিল্প-রসিকদের পীঠস্থান ফেসবুক। বেঁচে থাকো বাওয়া ফেসবুক।
চরৈবেতি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।