T3 ।। কবিতা পার্বণ ।। বিশেষ সংখ্যায় পরেশ নাথ কোনার

সূর্য স্নানের ফুল

বড় দীঘিটার ঈশান কোণে
যেখানে মধু মোড়ল বাড়ি বানিয়েছে
সেখানে প্রতি বছর শীতের সময়
খেজুর গুড়ের মহল বসতো—-
দিলদার চাচার মহল।
সারা এলাকা ম ম করতো
ফুটন্ত রসের গন্ধে ;এখন সে দিন গেছে,
হু হু করে বেড়িয়ে আসে নর্দমার
পচা গন্ধ।
আমাদের খামার বাড়িটায় থাকতো
সারি সারি ধানের পালুই।
ঠাকুমাকে দেখেছি পৌষ সংক্রান্তির
আগের রাতে খামারে গিয়ে পৌষ ডাকতে।
গীতা খুড়ি মাঠ থেকে এনে দিতো
শীত মাখা হলুদ সরষে ফুল।
পাড়ার বৌ ঝি রা সারাদিন ধরে
ঢেঁকিতে পিষতো চাল।
ঢেঁকিতে ছাঁটা বাসমতি চালের গুঁড়িতে
পাটীসাপটা, পিঠে পুলি, ক্ষীর পিঠে
——–আজ সব শ্যাম লাহার দোকান।
সাঁওতাল পাড়া থেকে ভেসে আসতো
মাদলের একটানা শব্দ—- বাদনা পরব ।
গোলার পর গোলা দেশী মদে জেগে উঠতো
মরদের হাতের খেলা, মেয়েদের কোমর ধরে
তালে তালে ধীতাঙ ধীতাঙ নাচ ;
ও পাড়ার তিনটে মেয়ে স্কুলে পড়ায়
ভারত নাট্যম, কুচিপুড়ি তাদের পায়।
পৌষ সংক্রান্তিতে কাঁদর পাড়ে পৌষলা,
বিয়ে হওয়া মেয়েরা ভিন গাঁ থেকে গাঁয়ে
ফেরে পৌষলা করতে ;কয়েকটি পরিবার
মিলে ছোট ছোট দল —
অজস্র প্রজাপতির মেলা
কেটে নেওয়া ধানের নাড়ার উপর
শতরঞ্জি বিছিয়ে রবীন্দ্র সংগীতের
অন্ত্যাক্ষরী।
সে পার্বণ গেছে; ডিজের গগন ভেদী চিৎকার
—– কুড়িটি টাকা।
গোবর নিকানো উঠোনে
লতা পাতা ফুলের আলপনা
শুকনো কাঠে আগুন ধরিয়ে
আগুন পোহাতে পোহাতে টুসু গান,
হিমেল হাওয়ায় সারা রাত জাগে বাগদী পাড়া,
আজ ও টুসু আমার রাজ রানী……
ভোর বেলা নদী-স্নান, রোদের সাথে মাখামাখি
তারপর সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা , নুইয়ে পড়ে
সূর্য মুখীর পাপড়ি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।